প্রাথমিকভাবে আমরা দেখতে চাইছিলাম এমন কিছু এলাকা,
যেখানে এখনও প্রাচীন পদ্ধতিতে চুল্লিতে লোহা গলানো এবং সংস্কৃত করা হয়। এই খোঁজ
করতে গিয়ে জানতে পারলাম বস্তারের খুব দুর্গম এলাকায়(এই প্রবন্ধ লেখার)প্রায় ২০ বছর
আগে শেষ জ্বলা চুল্লিটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে আমরা বাইলাডিলার দিকে চললাম এবং তার
আশেপাশের কয়েকটি এলাকায় নিবিড়ভাবে ঘুরে এমন একটি যায়গা খুঁজে পেলাম যেখানে এধরনের
প্রাচীন কাজকরা গলন চুল্লির সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।
বস্তার জেলায় দুটি আদিবাসী সমাজের বাস, একটির নাম মাড়িয়া
অন্যটির নাম হালবি। যে সময় এই প্রবন্ধটি লেখা হয়, সেই ৩০ বছর আগেও সেই এলাকায় মাড়িয়ারা(ইংরেজিতে
Mundiya) সেই ভারতীয় প্রাচীন ঐতিহ্যমণ্ডিত পদ্ধতিতে বসবাস ও জীবন ধারন করছেন। এই
দুটি সম্প্রদায়ই স্বনির্ভর। শুধু নির্ভর করেন জঙ্গলের ধনসম্বলের ওপর। মাড়িয়ারা নিজেদের জীবন চালানোর জন্য যতটুকু তীর, কুড়ুল
বা নিড়ানি প্রয়োজন, ততটুকুই নিজেরা তৈরি করে নেন। বাইলাডিলা খনি অঞ্চলে আমাদের
আদিবাসী পথ নির্দেশক জানালেন, প্রায় ২০ কিমি দূরে দাঁতেওয়াড়া-সুকমা রাস্তায় একটি
গ্রাম কামেলি। সেখানে একজন লোহারের প্রাচীন ধরণের একটি ফোর্জিংএর দোকান রয়েছে(যাকে
আমরা সাদা বাংলায় কামারশাল বলি - অনুবাদক)। তিনি আমাদের দূরের গ্রামের তারই একজন
আত্মীয়র বাড়িতে নিয়ে যাবেন, যিনি এধরনের একটি চুল্লি আজও ব্যবহার করেন। নকুলনারের
কাছে মোখপাল পর্যন্ত আমরা একটি জিপ নিয়ে গেলাম। এর পরে আগের খবর অনুযায়ী দাঁতেওয়াড়া-সুকমা
রাস্তায় আরও ৩০ কিমি যেতে হবে। মোখপালে গিয়ে একটি লোহা-পাড়ার খবর মিলল যেখানে এখনও
ধরনের জ্বলন্ত চুল্লির রয়েছে। লোহার পাড়া পৌঁছতে অন্ততঃ ৫/৬টা গ্রাম পেরিয়ে বিশাল
জঙ্গল চিরে প্রায় ৬ কিমি রাস্তা যেতে হবে। শেষ পর্যন্ত পৌঁছলাম। কিন্তু আদিবাসীরা
আমাদের সেই চুল্লি দেখাতে চায় না। বহু আলোচনার পর তাঁরা সেই চুল্লি দেখাতে এবং তার
কর্মপদ্ধতিটি জানাতে রাজি হলেন। চুল্লির কাছে বর্জ্য পদার্থের বিশাল স্তুপ থেকে
আমাদের প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করলাম। নিচে আমাদের কাজের সমীক্ষাটু প্রকাশ করা
গেল।
ম ঘোষ এবং তাঁর দলবল কোরাপুটের চিগলবেছায় যে ধরণের
চুল্লির কথা তাঁর প্রকাশিত সমীক্ষায় প্রকাশ করেছেন, এই চুল্লিটি ঠিক সেই ধরনেরই।
চুল্লিটি বাউল(bowl) শেপের। ভুমিস্তরের
নিচ থেকে গড়া শুরু হয়েছে। ২০০০ x ২০০০ মিলিমিটার এলাকা
নিয়ে এবং ৫০০ মিলিমিটার গভীরতা যুক্ত। একদিকে সিঁড়ি নেমে গিয়েছে নীচের দিকে নামবার
জন্য। এখানে চুল্লির একটি স্কিম্যাটিক ডায়াগ্রাম ১ দেওয়া গেল। এই চুল্লিতি তৈরি
হয়েছে পিটের উলম্বে একটি ছিদ্র তৈরি করে। এই দিকের চুল্লিটি মোট চুল্লির
প্রস্থচ্ছেদের তিন-চতুর্থাংশ অবলম্বন করে। সামনের দিকে মোটা করে কাদার চাদরের
প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। এতে বাইরে থেকে হাওয়া বইয়ে দেওয়ার জন্য, ৫ থেকে ১০
মিলিমিটারের অন্তর্বর্তী ব্যসওয়ালা দুটি বাঁশের টুয়ার(ফার্নেসে হাওয়া দেওয়ার
যন্ত্র) তৈরি করা হয়েছে। এ দুটি চুল্লির bowlএ
যুক্ত হয়েছে যা স্কিম্যাটিক ডায়াগ্রাম ২য়ে দেখানো হয়েছে। চুল্লির মোট উচ্চতা ৮০০
মিলিমিটার এবং ডিয়ামিটার ২০০ মিমি। চুল্লির শ্যাফটটির গভীরতা ৬০০ মিমি এবং
দেওয়ালটি ট্যাপার্ডভাবে তৈরি, অর্থাৎ একদিকে সর্বাধিকভাবে ২৪০মিমি মোটা অন্য দিকে
তুলনামূলকভাবে সব থকে সরুর দিকটি হল ১০০মিমি। বর্জ্য বার করার জন্য bowlএ
একটি ছিদ্র করা হয়েছে। চুল্লিটির নিচেরভাগ মাটির নিচে করা হয়েছে একটি কারনে, যাতে
বাইরের হাওয়া ঢুকতে না পারে। এটির ভেতরের দেওয়াল রিফ্র্যাক্টরি কাদা(সিলিকা,
আলুমিনা এবং ফায়ার ক্লে যুক্ত মাটি)র চাদরে মোড়া। চুলি যখন জ্বলে, তখন চুল্লির
আশেপাশের ৫০ থেকে ৭০ মিমি মোটা মাটি পুড়তে থাকে এবং টকটকে লাল বর্ণ হয়ে ওঠে।
No comments:
Post a Comment