জেমস
হোলজম্যান(১৯২৫)
{খুব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, অন্তত আমাদের লুঠ আলোচনায়। নবোবেরা যে বিশালতম অর্থ মেট্রোপলিটনে নিয়ে যান, সেই বিপুল অর্থ শুধু শহরের শিল্প পরিকাঠামো তৈরি বা লুঠেরা প্রযুক্তি বিকাশে ব্যয়িত হয় নি, তা গ্রামে বিপুলভাবে বিনিয়োগিত হয়েছিল। বিভিন্ন গ্রাম এলাকায় যে সব বিশালকায়
দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ তারা বানাচ্ছেন, সে প্রাসাদ শুধু প্রাসাদ হয়ে থাকছে না, এদেশের সাধারণ মানুষকে লুঠের অর্থ যাচ্ছে সে দেশের গ্রামীন অর্থনীতিতে থাকা মানুষজনদের সিন্দুকে। যে সময়ে ৫০০-৬০০ ডলারে লন্ডনে সারা বছর রাজার হালে থাকা যেত, সে সময় এক লক্ষ বা তারও বেশি অর্থ দিয়ে জমিদারি কিনছেন নবোবেরা।
দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ তারা বানাচ্ছেন, সে প্রাসাদ শুধু প্রাসাদ হয়ে থাকছে না, এদেশের সাধারণ মানুষকে লুঠের অর্থ যাচ্ছে সে দেশের গ্রামীন অর্থনীতিতে থাকা মানুষজনদের সিন্দুকে। যে সময়ে ৫০০-৬০০ ডলারে লন্ডনে সারা বছর রাজার হালে থাকা যেত, সে সময় এক লক্ষ বা তারও বেশি অর্থ দিয়ে জমিদারি কিনছেন নবোবেরা।
ফলে দেশের পরিকাঠামো বিকাশে এগুলি কাজে লেগেছে। তাতে কর্পোরেটি করণ বেড়েছে। এই অধ্যায়ে আমরা দেখছি গ্রামে বিনিয়োগ}
চতুর্থ অধ্যায়
ইংলন্ডে আসা নবোবেরা কেউ উচ্চশ্রেণীর জীবনযাত্রা অনুসরণ করেছেন কেউ আবার
পুরোনো গাঁইয়া ধরণের জীবনেই থেকে গিয়েছেন। বহু নবোব ব্যবসায় জুড়ে গিয়েছেন বা
বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে এবং প্রযুক্তি ব্যবসায় সময় কাটিয়েছেন। অধিকাংশই শহরের নিশির
ডাক এড়াতে পারেন নি।
জমির ক্ষুধা অধিকাংশ নবোবকে পেড়ে ফেলেছিল। পার্লামেন্টে একটা আসন আর গ্রামে
একটা বৃহৎ জমিওয়ালা বাড়ি যে কোন নবোবের আদর্শ। তবে গ্রামের জমিদারি সব থেকে বেশি
আকর্ষনীয় প্রকল্প ছিল। জমির মালিক হওয়া ভাল বিনিয়োগ ছিল, এলাকায় সম্মান আর তার
সঙ্গে রোজগারো। বাংলা থেকে যে সব ইঙ্গ-বঙ্গ নবোব হয়েছেন, তাঁরা জমিদারিটাই বেশি
পছন্দ করতেন। কলকাতায় লটারির প্রথম নামটি ওঠা আর মিডলসেক্সে জমিদারি কেনা সমার্থক
ছিল। ১৭৭৪ সালে একজন জমির দালাল বিজ্ঞাপন করছে এই বয়ানে যে, বিদেশ থেকে বিপুল
সম্পদ নিয়ে দেশে আসা ভদ্রমানুষদের জমিতে বিনিয়োগ করাই পরম বাঞ্ছনীয় কর্ম। আমরা তিন
নম্বর জোড়াপাতায় দেখিয়েছি বেশ কিছু নবোব জমিদারের নাম। বহু সময় ভারতথেকে ফিরে
প্রাসাদ কেনা নবোবেরা প্রাসদটা এবং তার সংলগ্ন জমিটাও বদলাতেন। যারা আরেকটু ধনী
হয়ে আসতেন, তারা সাধারণত ভারত(মূলত বাংলা, কিছুটা মাদ্রাজ আর বম্বে)এর স্মৃতিটা
বাড়ি আর বাড়ির হাতার সাজগোজে ঢেলে দিতেন।
উইলিয়াম হর্নবি চাকরির ৪৩ বছর পালন করলেন, যার মধ্যে ১৩ বছর গভর্নর ছলেন। দেশে
ফিরে হ্যাম্পশায়ারে হুক হাউস তৈরি করেন বম্বের গভর্নর হাউসের অনুসরণে। ছবি আঁকিয়ে
বা স্থপতিকে তার পুরোনো পেশাকে উজ্জ্বল করে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দিয়ে ছিলেন
বলাইবাহুল্য। স্যর রবার্ট বার্কার সারের গোল্ডমাইনিঙের বুসব্রিজের প্রাসাদ টিনি
কেটলে তার সেনা বাহিনীর কাজের দুটি স্মৃতি-তৈলচিত্র আঁকিয়ে নেন, একটি রোহিলাদের
বিরুদ্ধে ফৈজাবাদ চুক্তি এবং আরেকটি সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে অযোধ্যার নবাব ব্রিটিশ
সেনাবাহিনী দেখছেন। ১৭৬০ সালে উইলিয়াম ফ্রাঙ্কল্যান্ড বাংলা থেকে যাত্রা করেছিলেন,
তাতারি দূতের ছদ্মবেশে পারস্য উপসাগর হয়ে বাগদাদ এবং জেরুজালেম পর্যন্ত গিয়েছিলেন।
তিনি সাসেক্সের মুন্থামে যে প্রাসাদটি বানান তাতে তিনি একটি নিজের বিশাল তৈল চিত্র
আঁকান যেখানে তিনি তাদমুরের মরুভুমিতে পবিত্র ভাষ্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।
১৭৬৭ সালে রবার্ট পল্ক মাদ্রাজের গভর্নরের পদে ইস্তফা দিয়ে ১৭৬৯ সালে
কোম্পানির প্রস্তাবিত ডায়রেক্টর উইলিয়ম ওয়েবারের থেকে ডেভনশেয়ারের প্রাসাদটি কেনেন
তার নাম রাখেন হালডন হাউস। বাকিংহাম হাউসের অনুকরণে অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিককার তৈরি
এই প্রাসাদ পল্কএর পছন্দ হয় নি। প্রচুর পরিবর্তন করেন এবং নতুন স্থাপত্য জোড়েন।
বাড়িটি আরও একতলা উঁচু করেন। ইঁটের ওপরে স্ট্যাকেটো করে তার বহিরাঙ্গটি পাথরে
রূপান্তরিত করেন। ভারতে ফরাসীদের থেকে যে কাঠ তিনি দখল করেছিলেন, সেগুলি দিয়ে তিনি
লাল-হলুদ রঙের মেঝে তৈরি করেন। তিনি শুধু তার বাড়ির সামনের দালানটা রূপ পরিবর্তন করলেন
না, পার্লামেন্টে আইন করে বাড়ির হাতায় কয়েশ একরেরও পরিবর্তন করলেন। তার সঙ্গে
ভারতে কাটানো জেনারেল স্ট্রিঙ্গার লরেন্স হ্যাডনের কাছে বাস করতেন। তিনি মারা
যাওয়ার পরে তাঁর স্মৃতিতে পাশের পাহাড়ের উঁচু শৃঙ্গে একটি প্রাসাদ লরেন্স ক্যাসল
তৈরি করান যেখানে আর্কোটের নবাব, ওয়ালাজার কোন একটা বক্তব্য উৎকীর্ণ ছিল।
লরেন্স ক্যাসলের মতই আরও একটা ইঙ্গ-বঙ্গ প্রাসাদ হল উলউইচ কমনের কাছে শুটার্স
হিলের সেভেনদ্রুগ ক্যাসল। এর মালিক স্যর উইলিয়াম জেমস ইস্ট
ইন্ডিয়া নেভির কমোডোর ছিলেন, মাঝারি গোছের নাম করেছিলেন, কিন্তু সম্পদ ভাগ্য অতীব
সুপ্রসন্ন ছিল। তিনি ১৭৫৫ সালে বম্বের সেভেনদ্রুগ দুর্গে থাকা এক জলদস্যুকে খতম
করেন। স্যর উইলিয়াম ১৭৮৩তে মারা যান। তাঁর বিধবা, প্রাসাদের ছাদে একটি
ত্রিভূজাকৃতি টাওয়ার বানান।
খুব বড় প্রাসাদ যে সব নবোব বানিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতমরা ছিলেন রিচার্ড
স্ট্যান্সটেডএ, সাসেক্সে বারওয়েল, অক্সফোর্ডশায়ারের ক্যাভারশ্যামে মে৪জর চার্লস
মারসাক, বার্কসায়ারের বাসিলডনে স্যর ফ্রান্সিস সাইকস।
বারওয়েল এবং মারসাক তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে শত্রুতা বাড়িয়ে চলেছিল। বারওয়েল ৯০
জাহার পাউণ্ডে স্ট্যান্সটেড জমিদারিটি কেনেন যা তখনকার সময়েও জলের দর। এর আগে
মালিকেরা ১,৪০,০০০ পাউণ্ডের দর ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এই জমিদারিটি কিনতে খুব কম সময়ের
মধ্যে বারওয়েল নগদ টাকা হাত বদল করেন। স্ট্যান্সটেডের এলাকা ছিল পাঁচ মাইলের
বৃত্তে ঘেরা। তিনি তার প্রাসাদটির বাগান ক্যাপাবিলিটি ব্রাউনকে দিয়ে এবং স্থাপত্য
বোনোমি এবং জেমস ওয়াটকে দিয়ে পরিকল্পনা করান। কাজটা শেষ হলে তিনি জানান প্রাসাদটির
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ সৌন্দর্যবোধ দিয়ে উন্নত করা গেল।
No comments:
Post a Comment