জেমস
হোলজম্যান(১৯২৫)
{লন্ডনে তখন বিতর্ক যে ভারতের শাসন ভার কোম্পানির হাত থেকে তুলে নিয়ে সরকারি হাতে দেওয়া যাবে না, তাতে বকলমে যে লুঠের রাজত্ব চলছে তা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। আমেরিকা হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। ভারতও যদি হাত ছাড়া হয় তাহলে ব্রিটিশ শিল্পায়ন থমকে যেতে পারে। কথাগুলো হয়ত এরকমভাবে বলা হয় নি কিন্তু জনগন আর রাজনীতিবিদ এবং কর্পোরেট নেতাদের ভাবনাগুলো এটাই ছিল। ফক্স জোটের বিরুদ্ধে কোম্পানি আর জনগনের বিক্ষোভ কাজে লাগিয়ে পিট ক্ষমতায় এলেন}
১৭৮৪ সালের নির্বাচনে কোম্পানি ডায়রেক্টর-চাকুরে বা অন্যান্য প্রতিনিধিদের
সংখ্যা মোটেই খুব বড় ছিল না – পার্লামেন্টেও তাদের প্রভাব খুব বেশি ছিল না। তবুও
বিগত পার্লামেন্টে বার্কের যুক্তি অনুযায়ী নবোবেরা অনৈতিকভাবে বিপুল ক্ষমতা প্রয়োগ
করে। ১৭৮০ সালের স্কটের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী পার্লামেন্টে কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত
থাকা সব শ্রেণীর সদস্যর সংখ্যা ছিল তিরিশ। এর মধ্যে ১৮ জন জোটের পক্ষে ভোট
দিয়েছিল, আট জন পিটের পক্ষে ভোট দেয় আর চার জন অনুপস্থিত থাকে। স্কটের হিসেব সবসময়
হয়ত তথ্যের কাছাকাছি থাকে না, তবুও বলা যায় অধিকাংশ নবোব কিন্তু সরকার বিরোধী
অববস্থান নেন।
কিন্তু যদি ধরেও নিই যে পার্লামেন্টের সব ভারত সম্বন্ধীয় সদস্য যদি সবাই একাট্টাো
হত, তাহলেও যে তারা খুব বড় বিরোধিতার যায়গা করতে পারত তা বলা যাচ্ছে না। অভিজাতদের
চারপাঁচ জন সদস্য যেমন ওয়েস্টমর্টল্যান্ডের প্রতিনিধি কর্নেল জেমস লোদারের
‘লোদার্স নাইনপিন’ আথবা ডিউক অব নর্থথাম্বারল্যান্ড এবং এলিয়টের নিয়ন্ত্রণে ভোট বা
ডিউক অব নিউক্যাসলের বা লর্ড এজকাম্বিদের মিলিত ভোট সব সময় গোটা ভারতস্বার্থী
ডিরেক্টর, নবোব বা অন্যান্যদের ভোটের তুলনায় অনেক বেশি প্রভাবশীল ছিল। কিন্তু
ভারতস্বার্থীদের পরস্পরবিরোধী স্বার্থ থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে বার্ক তাদের
যতটা গুরুত্ব দিচ্ছিলেন তারা ততটা গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য ছিলেন কি না সে সম্বন্ধে
যথেষ্ট সন্দেহ থেকেই যায়।
১৭৮৪ সালের সাউথরেক উপনির্বাচনে এই বিভেদের রেখা চওড়া হওয়ার উদাহরণ পাওয়া যায়।
পিটের সমর্থক প্রার্থী, জনৈক পল লা মসিঁয়ে অভযোগ করেন তাকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির
ডিরেক্টরের দপ্তরে ডেকে প্রকারান্তরে ফক্স এবং লর্ড নর্থের জোটের সপক্ষে থাকার
হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। তার উপনিবেশবাদী বিরুদ্ধ পক্ষ ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া জাহাজগুলির
মালিক স্যর রিচার্ড হথাম। কোম্পানি মসিঁয়ের জন্মস্থান নিয়ে কিছুটা হলেও প্রশ্ন
তুলেছিল নির্বাচনের সময়, যদিও তিনি গুয়ের্নসের মানুষ ছিলেন। ভোটে কোম্পানির
প্রতিনিধি হারেন। মসিঁয়ে পান ৯৩৫ আর হথাম পান ৯২৪ ভোট। গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব আর
আভ্যন্তরীন বিবাদ ভারত আর লিন্ডেনহল স্ট্রিটের স্বার্থীদের এক জোট হওয়ার বড়
অন্তরায় ছিল।
উপনিবেশবাদী লেখকেরা বলছেন যদিও স্কট ১৭৮৪ সালের ভারতপক্ষীয়দের বিভেদ সম্বন্ধে
সঠিক তথ্য দিয়েছিলেন, কিন্তু তার বিরোধী পক্ষ বলছেন কত জন প্রার্থী
ভারতবর্ষীয়স্বার্থীদের সম্পদে-সমর্থনে জিতে পার্লামেন্টে এসেছেন তার হিসেব কিন্তু
স্কট দেন নি। তার উত্তরে তিনি বলেন এটা কোম্পানির স্বর্থীদের প্রচারমাত্র, তিনি
এমন কোন প্রার্থীর নাম জানেন না যিনি কোম্পানির বশংবদর সমর্থনে জিতে এসেছেন এবং
হাউসে প্রভাবিত করেছেন। এবং এটা সত্যিও বটে।
হেস্টিংসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তার দলের দশজনকে তিনি আসন দেওয়াতে পেরেছিলেন। কিন্তু
তাকে স্কটের আসনের জন্যই অর্থ দেওয়া হয়েছিল। রবিনসনের ইঙ্গিত ছিল স্কটের আসনটি
ছাড়া হেস্টিংস আরও একটি আসনে লড়ার অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু হেস্টিংসের সম্পদ এত কম
ছিল যে তার পক্ষে বেশি সদস্যকে জেতানো সম্ভব হয় নি, তার নিজের আসন কিনতেই তার
প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়ে যায়।
রাজনৈতিকভাবে স্কট সেসময়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ছিলেন। হেস্টিংস স্কটকে তার
ব্যক্তিগত এজেন্ট হিসেবে ইংলন্ডে পাঠান যাতে তার বিরুদ্ধ ওঠা জনমত, এবং কোম্পানি
আর পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে যাওয়া গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব রুখতে স্কট উদ্যোগী হন। নিজের
জিভ আর কলম, এবং হেস্টিংসের বরাভয় নিয়ে স্কট সেযুগে খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন
রাজনীতিক হিসেবে উঠে আসেন। স্কটের নিরন্তর বকবকানি জনগনকে পরিশ্রান্ত আর বিতৃষ্ণ
করত। হেস্টিংসের বিরুদ্ধে যাওয়া জনমতকে প্রভাবিত করতে স্কটের অবদান প্রচুর। কিন্তু
তিনি নিজে রাজনীতিতে সফল হন নি। তিনি রাজনীতির আভ্যন্তরীন টানাপোড়েনটা খুব বুঝতেন
না। স্বতৃপ্তি তার সরলতার মাপকাঠি ছিল। তিনি মনে করতেন রাজনীতির প্রয়োজন হল প্রয়োগবাদিতা,
সংযোগ আর ন্যয়পরায়নতা যা আমার মধ্যে পরিপূর্ণ ভাবে রয়েছে। বারওয়েল তাঁকে ভাল
বুঝতেন। স্কটের রাজনীতিক হিসেবে পরাজয়ের কারণ তিনি হেস্টিংসকে বলেছিলেন।
আপনার(হেস্টিংস) প্রতি চরমতম দায়বদ্ধতার যোগ্যতাই আপনাকে(স্কটকে) জনগনের প্রতিনিধি
হিসেবে বেছে নেওয়ার অন্তরায়। কয়েক মাস পরে আবার বলবেন, মেজর স্কটএর অধ্যাবসায়
অসম্ভব। আপনি এখানে একজনকে(স্কট) পাঠিয়েছেন যিনি সত্যকারের শিশু। তিনি যে কাজ
করছেন, সে কাজ এর আগে কেউ করেন নি এবং তিনিও। তার প্রগতি অসাধারণ এবং সুন্দর।
স্কটের অধ্যাবসায় অসাধারণ তো ছিলই, এবং সেটি তার নিজের কাজে-বক্তব্যে এবং
অন্যদের বলাবলিতে বোঝা যায় এবং সেগুলি তিনি নিজের মত করে নথিবদ্ধ করেছেন। একদিন
কমিটি কক্ষে ঢুকে জেনারেল স্মিথ টেবিলের ঢাকা সরিয়ে দেখলেন আমি তার তলায়(লুকিয়ে)
আছি কি না। লর্ড থুর্লো গতকার আমায় জিজ্ঞেস করলেন আমি আদৌ খাই বা ঘুমাই কি না।
হেস্টিংসকে তার লেখা দীর্ঘ আর খুঁটিনাটি জুড়ে লেখা চিঠিতে মনে হয় তিনি খুব তাড়াতাড়ি
কাজগুলো সমাধা করতে চাইতেন। হাউসে পুলটেনি নামক এক সদস্য হেস্টিংসএর পক্ষে
দাঁড়াবার প্রতিজ্ঞা নেন। স্কট সঙ্গে সঙ্গে সুখবরটি তার বাবুকে পাঠিয়ে দেন, এবং এক
মাসের মধ্যে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে হেস্টিংসের একটি চিঠি পুলটেনিকে দেন। স্কটের
চৈতন্য হয় যে ইস্ট ইন্ডিয়া স্টকের মালিকগুলি ছাড়া ইংলন্ডে এখন পাবিলিক স্পিরিট বা
পাবলিক ভার্চু বলে কিস্যু নেই।
No comments:
Post a Comment