জেমস হোলজম্যান(১৯২৫)
{আমরা যে জ্ঞানচুরির কথা বলে আসছি, সেই জ্ঞানচুরির একটি ইঙ্গিত এখানে কিছুটা হলেও দেওয়া আছে। এটা প্রমানিত যে যখন স্পিনিং জেনি স্বতঃচল মানু কাজ করছে না বড় কারখানায়, তখন ভারতের সাধারণতম তাঁত নিয়ে যাওয়া হয়, বাংলার বিভিন্ন জেলার হাল নিয়ে যাওয়া হয় চাষের উৎপাদন ক্ষমতা এবং যন্ত্রের উৎপাদিকা শক্তি বাড়ানোর কাজে গবেষনার জন্য। এখানে উইলিয়াম ফ্রাঙ্কল্যান্ডএর বাড়ির গবেষণাগারে প্রচুর কারিগর কাজ করতেন যেখানে 'কারিগরেরা অধিকাংশ দেশিয় কিন্তু কিছু বিদেশি ছিল' - সেখান থেকে পরিষ্কার হয় যে লন্ডনে তক্লহন ভারত থেকে লুঠের অর্থে কি ধরণের গবেষণা চলছিল। একজন নবোবের বাড়িতেই যদি এই গবেষনাগার থাকতে পারে, তাহলে রাষ্ট্রপোষিত গবেষণাগারে কি কি হয়েছে। এবং এই সম্পদ আর জ্ঞান লুঠের জন্য আজও ব্রিটেন আজও ক্ষমা চায় নি - এবং আমাদের দেশের চিরকৃতজ্ঞ দালাল, চাকুরিজীবি অথবা লন্ডনে গবেষনা, অধ্যাপনা, চাকুরি করা বা পুরষ্কার পাওয়া প্রখ্যাতরা কোন দিন ক্ষমা চাওয়ার দাবি করবেন না। অভিজাতরা কোহিনুর নিয়ে দাবি জানায়, কিন্তু আমরা ছোটলোকেরা কোনদিন এই দাবি জানাই নি। এই সময় শেষ হতে যাচ্ছে।}
জন পাইবাস মাদ্রাজে কোম্পানির কাজে ১৭৪২ সালে যোগ দেন রাইটার হিসেবে। আর্কটে ক্লাইভের সঙ্গে যে আট জন ভলান্টিয়ার যান, পাইবাস তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান। এছাড়াও তিনি শ্রীলঙ্কার রাজার কাছে দূত হয়ে যান। তিনি লন্ডনে ফেরেন ১৯৬৮ সালে। পাইবাস সারের চেয়ামে বাসা করেন। তিনি হার্টসের চিপিং বার্নেটের কাছে গ্রেনহিল গ্রোভ ভিলাটি কেনেন পার্লামেন্টেরিয়ান টমাস ব্রাডের থেকে। পরে সেটি জেনারেল প্রোভোস্টকে জলের দরে, ৯০০০ পাউন্ডে বেচে দিতে হয়।
আমি জানি না তিনি ১৭৮৪ সাল থেকে শুরু হওয়া ব্যাঙ্কিং সংগঠন পাইবাস, ডোরসেট এবং কোংএর অংশীদার ছিলেন কি না – এই পাইবাস আমাদের আলোচ্য পাইবাস কি না। ১৭৮৫ সালের ১ জানুয়ারি তিনি হেস্টিংসকে লেখেন যে তিনি তার ছেলে, জন কল এবং জেমস গ্রান্ট বন্ড স্ট্রিটে একটি ব্যাঙ্কিং হাউস খুলতে চলেছেন পাইবাসের নাম জুড়ে কল গ্রান্ট এন্ড কোং নাম দিয়ে। তাদের ইচ্ছে যে সব ইস্ট ইন্ডিয়ান ইংলন্ডে তাদের সম্পদ দেখাশোনার জন্য এটর্নি এখনও পছন্দ করেন নি, তাদের হয়ে এই সংস্থাটি কাজ করবে।
পাইবাসের অংশীদার কর্নেল জন কল দারুণ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি ভারতে যান ১৭৪৯ সালে। পিতার মৃত্যুর খবর পেয়ে ফিরে আসেন ১৭৬৬তে। তিনি যে সময় মাদ্রাজে কাজ করেছেন সে সময় বেনফিল্ডের নেতৃত্বে যে সুদের কারবার চলছিল নবাবের সঙ্গে সেই গোষ্ঠীতে তিনি জুড়ে যান।
ওল্ড বার্লিংটন স্ট্রিটে তিনি বাড়ি কেনেন। এছাড়াও কর্নেলের হোয়াইটফোর্ড, স্টক ক্লিমসল্যান্ডেও প্রাসাদ কেনেন যাকে তিনি দারুণ ভাবে সাজিয়ে গুজিয়ে তোলেন। কান্ট্রির হাই শেরিফের পদ অলঙ্কৃত করেন ১৭৭১ সালে। হোয়াটফোর্ডের কার্লিংটনের লর্ড অর্ফোর্ডের বরো থেকে তিনি পার্লামেন্টে প্রথমবার ১৭৮৪ এবং পরে ১৭৯০ সালে নির্বাচিত হন। ১৭৯১ সালে তিনি ব্যারোনেট উপাধি পান।
ভারতে কল দায়িত্বপূর্ণ সেনা প্রয়ুক্তিবিদ ছিলেন, কিন্তু ইংলন্ডে ফিরে তিনি ব্যাঙ্ক স্থাপন করেন, কাঁচ কারখানা আর তামা গলানোর কারখানা করেন। এছাড়া তিনি রয়্যাল সোসাইটি আর রয়্যাল এন্টিকুইরিয়ান সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। তার জ্ঞান আর দক্ষতা সরকারের খুব প্রয়োজনীয় হয়েছিল। ১৭৮২ সালে লর্ড শেলবার্ন তাঁকে আর এবং এ হোল্ডসওয়ার্থকে নিয়োগ করেন দেশের গাছ এবং জঙ্গল সমীক্ষায়। ১৭৮৪ সালে তিনি সরকারকে প্রস্তাব দেন যে কিছু দুষ্কৃতিকে নিয়ে নিউ সাউথ ওয়েলস আর নিউজিল্যান্ডে ঘাঁটি গাড়বেন। কুকের অভিযানের মত করে তিনি হেস্টিংসকে অনুরোধ করেন একটি জাহাজ বরাদ্দ করতে যা দিয়ে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরে আমেরিকার পেসেফিক উপকূল সমীক্ষা করবেন। কলের দণ্ডজ্ঞান বিষয়য়ে উদ্যম শুধু অস্ট্রেলিয়ায় জেল তৈরি করায় সীমাবদ্ধ ছিল না। প্রখ্যাত জেল সংস্কারক এবং দানবীর জন হাওয়ার্ডের প্রস্তাবনায় তিনি কর্নওয়ালে একটি জেল পরিকল্পনা এবং তৈরি করেন ১৭৮০ সালে।
তবে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সব থেকে কার্যকর ভূমিকা নিয়েছিলেন জন ওয়ালস। এর কথা আগেই বলেছি যে তিনি ক্লাইভের পৃষ্ঠপোষণায় উরসেস্টার থেকে পার্লামেন্টে এমপি হন। কিন্তু রাজনীতিতে তিনি খুব বেশি এগোতে পারেন নি, তিনি অনেক বেশি কাজ করেছেন জ্ঞান বিজ্ঞান প্রচারে। টর্পেডো মাছ নিয়ে তার গবেষনা তাকে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের সঙ্গে যুক্ত করে এবং তাঁকে রয়্যাল সোসাইটির কোপ্লে মেডেলে সজ্জিত করা হয়, প্রথমে ১৭৭৪ সালে পরে ১৭৮৩তে। ১৭৭৩এ তিনি রয়্যাল সসাইটি এবং রয়্যাল সোসাইটি অব এন্টিকুয়েরিরিজের কাউন্সিলের সদস্য হন। তার মায়ের দিকে তিনি জ্যোতির্বিদ নেভিল ম্যাস্কেলাইনের আত্মীয় ছিলেন।
আরেকজন বৈজ্ঞানিক নবোব হলেন উইলিয়াম ফ্রাঙ্কল্যান্ড। সিরাজ ১৭৫৬তে কলকাতা আক্রমণ করলে তার নিজের জাহাজ নিয়ে পালিয়ে যান, কিন্তু কলকাতা আক্রমণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিনি ১১৩৬৭ পাউন্ড পান। সাসেক্সে মান্থাম তার জমিদারি ছিল। মন্তেগুর ভিস্কাউন্ট এন্থনি সেখানে যে শিকার বাড়ি তৈরি করেন তিনি সেটি কেনেন। সেখানে তার জীবনের শেষ চল্লিশ বছর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে কাটিয়ে দেন।শোনা যায় অন্তত ২০ হাজার পাউন্ড ব্যয় করেন তার পছন্দের বৈজ্ঞানিক গবেষনায়। ঘরগুলি ভর্তি ছিল মনোমুগ্ধকর নানান যন্ত্রপাতিতে – লেদ, স্পিনিং, এবং ওয়ান্ডিং মেশিন, ইলেক্ট্রিফায়িং মেশিন, অপটিক্যাল এপারেটাস, ঘড়ি, ছাপা খানা, বাদ্যযন্ত্র, কৃষি যন্ত্র ইত্যাদি দিয়ে। ‘এই যন্ত্রগুলির ইতিহাস বেশ কৌতূহলোদ্দীপক – এই যন্ত্রগুলি বানানো হয়েছে প্রবীণ কারিগরদের দিয়ে। এই কারিগরেরা অধিকাংশ দেশিয় কিন্তু কিছু বিদেশি ছিল – তারা সেখানে চাকরি করতেন। ১৮০৫ সালে ডিসেম্বরে পঁচাশি বছর বয়সে ফ্রাঙ্কলিনের মৃত্যুর পর সেই যন্ত্রগুলি উচ্চ দামে নিলাম হয়ে যায়। বহু জিনিসপত্র অস্বাভাবিক দামে বিক্রি হয়ে যায়, শুধু লেদ মেশিনটা বিক্রি হয় তিন হাজার গিনিতে।
কিন্তু অধিকাংশ ভারত থেকে ফেরা কোম্পানি চাকুরে খুব সাধারণ প্রচার বিহীন জীবন যাপন করেছেন। সাধারণ ব্রিটিশের মত তারা তাদের জীবন অতিবাহিত করছেন – খুব বেশি হলে তারা, প্রতিবেশীদের অন্য ধরণের রান্না খাইয়েছেন আর খুব দামি মদিরা পান করিয়েছেন, যা সে সময়ে গ্রাম ব্রিটেনে খুব শিভালরির ব্যাপার ছিল। এমনকি ফুটির লেখায় আছে, ভারত থেকে আসা মানুষেরা, যারা এখানে এসে আভিজাত্য আর নবোবি দেখান, তারাও দেশের পক্ষে সম্পদ আর নৈতিকতার দৃষ্টিও স্থাপন করেছেন।
No comments:
Post a Comment