জেমস হোলজম্যান(১৯২৫)
{আমরা আলোচনা করছি ততকালীন বাংলা থেকে আর কিছু মাদ্রাজ আর বম্বে থেকে বিপুল অর্থ শুষে নিয়ে গিয়ে ইংলন্ডে বিভাবে বিনিয়োগ করেছিল তার বর্ণনা। লেখক বলছেন তাদের কেউ সেই অমিত সম্পদ উড়িয়েছিল, কেউ সদর্থে বিনিয়োগ করেছিল, আদতে বাংলা, মাদ্রাজ আর বম্বে লুঠের সম্পদে গড়ে উঠেছিল নব্য ইংলন্ড - এতা মনে রাখা দরকার।}
শেষ পর্যন্ত চঞ্চলা ভাগ্য জেনারেলের বিপক্ষে গেল। ১৭৮তে তাঁর ভাগ্য তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছে শেষ বারের মত। শুধু চার্লস ফক্সের কাছে রেসে হেরেছেন ১৮০০০০ পাউন্ড। ১৭৮৩তে রাজনীতিতেও তার ভবিষ্যৎ শেষ। ফক্স আর নর্থের মত ভুল ঘোড়ায় বাজি ধরেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাহস ধরে রেখেছিলেন। আরেক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চাকুরে জর্জ ভ্যান্সিস্টার্টকে বার্কশায়ারের জমিদারেরা তাদের জোট-সরকারের বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করার বৈঠকে তিনি যে বক্তৃতা করেন, সেটি মোটেই খুব ঝাঁঝালো হয় নি, কারণ তিনি ততদিনে স্পষ্ট বুঝে গিয়েছিলেন, যে তিনি ভুল রাজনীতির রাস্তায় হেঁটেছেন।
জেনারেলের এর পরের জীবনটা বেশ উল্টেপাল্টে গিয়েছিল। তিনি প্রায় বহুদিন অস্বস্তিকর চরিত্রবিরোধীভাবে জনসমক্ষ থেকে হারিয়ে গেলেন। হয়ত তিনি তাঁর দুর্দিনে অভাব ঘটবে বুঝতে পেরে রোজগারের কিছু অংশ নিজের জন্য বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, সেটা ব্যয় হয়ে গেল ধারের জন্য ক্রোকের নির্দেশের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টের সুরক্ষা পেতে গিয়ে। তিনি উপমহাদেশে পালিয়ে গেলেন। ১৭৮৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বরের দ্য পাবক্লিক এডভার্তাইজার লিখল যত দিন না তিনি পার্লামেন্টের আসন জোগাড় করতে পারছেন, তত দিন তিনি ইংলন্ডে ফিরবেন না। জেনারেলের লন্ডনের ঠিকানা, হার্লে স্ট্রিটের জনৈক জেনারেল রিচার্ড স্মিথ ডোরসেট, ১৭৯০ সালে ওয়ারহ্যাম থেকে পার্লামেন্টে নির্বাচিত হয়ে কখোনো কখোন ভারত সম্বন্ধীয় ব্যাপারে বক্তৃতা করতেন। অন্য দিকে ১৭৯২ সালে একটি চটিতে জেনারেল স্মিথের নাম নিয়ে বলা হচ্ছে তিনি বিস্মৃতির শেষ তলে পৌঁছে গিয়েছেন। ব্রেন্টফোর্ডের ঐতিহাসিক ফকনার ১৮০১ সালে ইঙ্গ-ভারতীয় ঐতিহাসিক রবার্ট ওর্মের সমাধিতে স্মিথ একটি লেখা জুড়ে দেন।
আরেক ধরণের নবোব তাদের সমস্ত শক্তি লাভদায়ক ব্যবসা বা কাজের কাজে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতেন। কেউ কেউ তাদের রোজগারের অংশ বিনিয়োগ করতেন আর্থিক সঙ্গঠনে আর কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণায়। ১৭৭২ সালে একটি বিজ্ঞাপনের বয়ানে দেখা যাচ্ছে, জনৈক ভারত থেকে ফিরে আসা জনৈক ভদ্রলোক একটি বড় জমিদারির দায়িত্বপূর্ণ অভিজাত ভদ্রলোকের সঙ্গে যোগ দিয়ে প্রায়াত বেডফোর্ডের স্মৃতিতে ক্রেতা বিক্রেতাদের জন্য কিস্তিতে শোধ দেওয়া যোগ্য ধারের ব্যবস্থা করেছেন।
পল বেনফিলড নবোবদের মধ্যে প্রখ্যাত ব্যাঙ্কার হয়ে উঠেছিলেন। যদিও তিনি এই কর্ম বেশ কিছু কাল আগেই শুরু করেদিয়েছেন, কিন্তু তার কর্ম গরিমায় উদ্ভাসিত হল ১৭৮৮তে ভারত ছাড়ার পরেই। ওয়াটন উডহুল জমিদারি ছাড়াও তিনি গ্রসভেনর স্কয়ারের নিজের বাসার জন্য আর্ল অব থাটনেটের প্রাসাদটি কিনে নেন। ডুরহ্যাম, হ্যামস্টার্লের মিস সুইনবার্নের সঙ্গে তার বিবাহে কন্যাটি পেয়েছিলেন ৩০০০ পাউন্ডের একটি আংটি, বছরে ৩০০০ পাউন্ডের জয়েনচার(মানে কি), পত্নীকে দেওয়া হাত খরচের অর্থ ছাড়াও বছরে ৫০০ পাউন্ড খরচের অধিকার, আর বাচ্চারা প্রত্যেকে পেয়েছিল ১০,০০০ পাউণ্ড।
তবে এতে বেনফিল্ডের মত ছটফটে মানুষের খুশি হওয়ার কথা নয়। তিনি তার শক্তি-উদ্যম ১৭৯৩ সালে ১৫ মার্চে নিজের ২৫% শেয়ারে বয়েড, বেনফিল্ড এন্ড কোং তৈরি করেন লন্ডনে। প্যারিসে বিপ্লবের আগে ওয়ালতার বয়েড ছিলেন ব্যাঙ্কার, বিপ্লবের ধাক্কায় পালিয়ে আসেন এবভং তার ভাগ্য ধ্বসে যায়। বয়েড পিটের কাছের মানুষ ছিলেন। সরকারি ঋণে বয়েড বেনফিল্ড বিসাল লাভ করতে থাকে। এছাড়াও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আর সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রান্সিসের সঙ্গেও কাজ কারবার করতে থাকে। বেনফিল্ডের ভাষায়, বয়েড বেনফিল্ড এন্ড কোম্পানির কাছে সমগ্র বাণিজ্যিক বিশ্বই লাভের জায়গা।
তাদের সমৃদ্ধিবেশি দিন টেকেনি। ফ্রান্সের সঙ্গে শান্তিচুক্তির আশায় বয়েড বিশাল পরিমান সরকারি ফান্ডে বিনিয়োগ করে, এবং ফ্রান্সের বয়েডের ফরাসি সম্পত্তি নতুন করে সাজিয়ে তোলার কাজ করতে থাকে। ১৭৯৭ সালে লর্ড মালমেসব্যারির লিলির শান্তি দৌত্য বিফল হওয়ায় তাদের এই উদ্যম বিফলে যায় এবং তাদের আর্থিক অবস্থা গুরুতর ভাবে প্রশ্ন চিহ্নের সামনে পড়ে। বয়েড বেনফিল্ড সরকারি সাহায্য ও বেসরকারি বিনিয়োগ দুইটিই পায় কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয় নি, ১৭৯৯ সালে কোম্পানিকে গোটানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়।
বেনফিল্ড তার তার শেষ বছরগুলি ফ্রান্সে চরম দারিদ্রের মধ্যে কাতান। একটি চটি লিখে তিনি তার দুর্ভাগ্যের জন্য বয়েডকে দায়ি করেন। ১৮১০ সালে তার শেষ যাত্রার খরচ পারিবাসীরা চাঁদা দিয়ে বহন করেন।
No comments:
Post a Comment