Saturday, July 1, 2017

বাংলার সম্পদ লুঠ চর্চা৩ - নবোবস ইন ইংলন্ড – আ স্টাডি অব দ্য রিটার্নড এংলো-ইন্ডিয়ান ১৭৬০-১৭৮৫

জেমস হোলজম্যান(১৯২৫)
ভাবানুবাদ – বিশ্বেন্দু নন্দ
কোর্ট অব ডিরেক্টরের চেয়ারম্যানকে হেস্টিংস লিখলেন বাংলা সরকারের তিনটে ভরকেন্দ্র ছিলক্ষমতার উর্ধ্বক্রমের শক্তি অনুযায়ী যথাক্রমে প্রথম ক্ষমতা কেন্দ্র নিচেরস্তরের সুপারভাইজার, দ্বিতীয় ক্ষমতা কেন্দ্র দ্বিতীয় স্তরের পাটনা এবং মুর্শিদাবাদের বোর্ড অব রেভিনিউ আর তৃতীয় এবং আগের তুলনায় কম লুঠের ক্ষমতার অধিকারী সর্বোচ্চ স্তরের কলকাতার গভর্নর কাউন্সিল। আস্থা, ক্ষমতা এবং সুবিধা বাঁটার ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে আমি যে এদের নাম উল্লেখ করলাম তা অলীক নয়... জেলাতে সুপাইভাইজারেরা চরমতম সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। আমায় বলা হয়েছে যে জেলার ব্যবসাও নির্ভর করত পুরোপুরি সুপারভাইজারদের মন-মর্জির ওপর, বিশেষ করে ধান-চালের মত দৈনন্দিনের ব্যবসার পণ্যগুলি। এগুলি দখল করার ক্ষমতা তাদের ছিল, এবং তারা করত কি না আপনারা বুঝে নিন...।
ভারতীয় বাজারের সুদের হারে ধার দেওয়া ছিল কোম্পানির ভৃত্যদের অন্যতম নিত্যকর্ম। এই ধরণের নবোবির স্বর্গরাজ্য ছিল মাদ্রাজ(প্রাইস লিখছেন, ...নবোব বললেই ধরে নেওয়া হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কোম্পানির বাংলা প্রদেশের কর্মচারী। এটা কিন্তু ঠিক নয়... বাংলার বাইরে নবোবেরা ছিল মাদ্রাজ আর বম্বেতে) কর্মচারীদের কয়েকটা গোষ্ঠী ছিল এদের মধ্যে দুর্বিসহ ছিলেন পল বেনফিল্ড – মোটামুটি গোটা মাদ্রাজ রাজ্যটাকেই নিজের মুঠোর মধ্যে পুরে রেখেছিলেন তিনিমহম্মদ আলি কর্ণাটকের দেখনদারি নবাব হিসেবে আসীন ছিলেন। কোম্পানির সেনা রাজ্যের নিরাপত্তার ভার নিয়েছিল এবং তার বদলে নবাবকে তার রাজস্বের একটি অংশ কোম্পানিকে দিতে হত। ...যুদ্ধের পর যুদ্ধে কোম্পানির রাজস্ব চাহিদা বাড়তে লাগল। নবাব তখন এক অদ্ভুত নীতি গ্রহণ করলেন, কোম্পানির কর্মচারীদের থেকে ধার করেই তিনি কোম্পানির ধার শোধ করতে থাকলেন। তার ব্যক্তিগত উত্তমর্ণদের তিনি তার রাজস্ব আদায় থেকে শোধ করতে থাকলেন। ১৭৭৬ সালে লর্ড পিগো প্রশাসক হয়ে আসার পর নবাবের উত্তমর্ণদের দাবিগুলি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এর হন্য তাকে ঘেরাও করে অবৈধভাবে বন্দী করে রাখে কোম্পানির চাকরিজীবি কুসীদজীবিরা।
এইরকম চরমতম পদক্ষেপ ব্যতিক্রম ছিল তো অবশ্যই। সেদিনে আবহাওয়ায় নবোবেরা যে তরিকায় রোজগার করেছিল তাকে আজ আর নাজায়েজ বলা যায় না। ১৭৪৯ সালে মাদ্রাজে চাকরি করতে ঢোকেন রবার্ট পল্ক। ১৭৬৩ থেকে ১৭৬৭ পর্যন্ত তিনি প্রশাসনিক প্রধান, গভর্নর ছিলেন। লন্ডনে তাকে নিয়ে কোন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি। তবুও তিনি দেশে ফেরেন বিপুল সম্পদ নিয়ে। পল্ক পাণ্ডুলিপির সম্পাদক কর্নেল লাভ লিখছেন, ...সেনার তবিলদার এবং ক্লাইভ তাঁকে মহিষ সরবরাহের বরাত দেওয়ায় তিনি বিপুল ধনলাভ করেন, তারপরে পদন্নোতির পরপর তার ভাগ্য ক্রমশঃ ফিরতে থাকে। তিনি ব্যক্তিগত ব্যবসায় উৎসাহী হয়ে পড়েন এবং কোম্পানি এগুলি প্রশ্রয়ই দিত। সাধারণত সেই সময়ের প্রথায় সরকারি চাকুরেদের লোকে স্বভাবিকভাবেই উপঢৌকন দিতে অভ্যস্ত ছিল। একটি চিঠিতে পল্ক স্বীকার করছেন, জমির মালিকের হতে চাইছেন এমন এক জনের থেকে উনি উপঢৌকন নিয়েছেন। অথচ তাঁর দাবি যে তিনি কোনদিন কারোর থেকে কোন সুযোগ গ্রহন করেন নি। প্রশাসনিক প্রধানের থেকে নবাবের অনেক কিছু সুবিধে নেওয়ার ছিল, এবং পল্ক তাঞ্জোর আক্রমণ করার চাপ নিয়েছিলেন সফলভাবেই, কিন্তু মাদুরা(আক্রমনে?) নবাবকে বিশেষ সাহায্য করায় মহম্মদ আলি স্বাভাবিকভাবেই পল্ককে তাঁর কৃতজ্ঞতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
ওপরে যেসব উদাহরণ দিলাম তা নিশ্চই একদিনেই ঘটে যায় নি। হেস্টিংসের এবং তাঁর পরে কর্নওয়ালিসের সময় থেকেই প্রশাসনিক সংস্কারে কোম্পানি হাত দেয় এবং কোম্পানির চরিত্র বিপুলভাবে বদলাতে থাকে, সে কর্মচারীদের স্পষ্ট বলে দেয় সঠিকভাবে প্রশাসন এবং কোম্পানির ব্যবসা দেখাশোনা করতে। তবুও ১৭৯৫ সালে লর্ড হোবার্ট মাদ্রাজের প্রেসিডেন্ট, দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা ইওরোপিয়দের মাদ্রাজের চরমতম কুসীদজীবিতা নিয়ে কর্ণাটকের বিভিন্ন প্রদেশের রাজসভাকে একপায়ে খাড়া করে রাখার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেন। মাদ্রাজের কিছু ব্যবসা এবং এমন কি কিছু কোম্পানির কর্মচারী এই বিষয়ে অভিযুক্তও হন।
ভারতে নবোবি উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার আগেই ব্রিটেনে নবোবেরা সামাজিক সম্মান আর্জন করতে থাকেন ১৭৬০ থেকে ১৭৮৫ পর্যন্ত ব্রিটেনের সমাজে নবোবদের প্রভাব বেশ অনুভূত হত। এই পঁচিশ বছরে শয়ে শয়ে নবোবের আবির্ভাব হতে থাকে  এবং আজকে নবোবদের যে চরিত্র আমাদের মনে গাঁথা হয়ে গিয়েছে, এই সময়ে ফুটি, ফক্স, বার্ক বা ওয়ালপোল এবং আরও নাম না জানা অজানা প্যাম্ফলেটিয়ারেরা তাদের নিয়ে চরম ব্যঙ্গ করেছেন এবং জনসাধারণের মনে নবোবদের চরিত্র অঙ্কিত করতে সাহায্য করেছেনপরের দিকের এংলো-ইন্ডিয়ান নবোবেরা লন্ডনের ভদ্রঅভিজাত শাসক শ্রেণীর সঙ্গে সমঝোতায় চলে যায়। ভারত থেকে আসা বিচিত্র ধরণের ভদ্রেলোকেরা সমাজের সংগে মিলে মিশে যাচ্ছেন, হেস্টিংসের বিচারের সময় মিলএর এই বক্তব্য জনগণের সহানুভূতি হেস্টংসের পক্ষে যেতে সহায়ক হয়েছিল। কিছু মানুষের বিচিত্র মতিগতি এবং ভারতীয় সাম্রাজ্যে অংশগ্রহন করে ভাগ্য ফেরাবার উদগ্র ইচ্ছে এই শব্দটার মানে অবনমিত করে দিয়েছিল।

No comments: