Saturday, July 1, 2017

বাংলার সম্পদ লুঠ চর্চা১২
নবোবস ইন ইংলন্ড – আ স্টাডি অব দ্য রিটার্নড এংলো-ইন্ডিয়ান ১৭৬০-১৭৮৫
জেমস হোলজম্যান(১৯২৫)

{(জনৈক ব্রিটিশের সম্পাদনায় প্রকাশিত হতে থাকে দ্য নর্থ ব্রিটন পত্রিকা। পরে জানা যায় এটি জন উইলকিজএর সম্পাদনায় প্রকাশিত হচ্ছে। দ্বিতীয় জর্জের প্যারিস চুক্তির বিষয়য়ে রাজার উক্তির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে নর্থ ব্রিটন পত্রিকার ৪৫ নম্বর সংখ্যা। মানহানির দায়ে তাকে টাওয়ার অব লন্ডনে বন্দী করে রাখা হয়। মামলা করে ছাড়া পান তিনি। 
আদালতে বক্তৃতা শুরুর শব্দ-বন্ধ “উইলকিজ এন্ড লিবার্টি” ছড়িয়ে যায় ব্রিটেন জুড়ে, যা পরে ক্ষমতা-বিরুদ্ধ আন্দোলনে অবশ্য উদ্বৃতি হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকবে। “৪৫” শুধু যে উইলকির আইকন হয় না, সারা বিশ্বের প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়)।}

নবোবেরা কিভাবে ইংলন্ডের সমাজে প্রভাবের জাল বিস্তার করছেন, তার উদাহরণ দিতে গিয়ে বার্ক বার বার রামবোলডের উদাহরণ তুলে আনছেন... তারা আপনার পরিবারে বিবাহ করছে, তারা আপনার সিনেটে প্রবেশ করছে, তারা আপনাকে ঋণ দিয়ে আপনার জমিদারির ভার লাঘব করছে, ...আপনার পৃষ্ঠপোষকতায় মিথ্যের ঝুড়ি নিয়ে সম্পর্কগুলি তৈরি করছে...। বার্ক সম্পর্ক বোঝাতে সম্ভবত রামবোলডের পরিবারের সঙ্গে দেশের প্রখ্যাতদের পরিবারের সঙ্গে বিবাহ সম্পর্ক স্থাপন করা বোঝাতে চেয়েছেন - রামবোলডের মেয়ে ফ্রান্সেস রিগবি’র ভাইপোকে বিবাহ করেন, তার নিজের শ্বশুর কারলাইলের বিশপ, ১৭৮৪ সালের তার শালা য়র্কের আর্চ বিশপের মেয়েকে বিবাহ করেন, তাদের সন্তানটিও কিন্তু ভারতে কোম্পানির চাকুরে ছিল।
১৭৭২ এবং ১৭৭৩এ পার্লামেন্টে নবোবদের কাজকর্ম আবার বিশেষভাবে জনগণের নজরে আসতে শুরু করে। ’৭২ সালের ৩০ মার্চ,  লরেন্স সুলিভান(চণ্ডীচরণ সেন কথিত মহাত্মা সালিবান) যিনি ক্লাইভের বিপক্ষ দলের নেতা ছিলেন, কোম্পানিকে আরও গভীরভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য পার্লামেন্টে একটি বিল আনেন। সুলিভানের বিলটি আইনে পরিণত না হলেও ক্লাইভের বিরোধী পক্ষরা নতুন করে ক্লাইভের বিরুদ্ধে পুরোনো মারাত্মক অভিযোগগুলি গনগনিয়ে তুলতে শুরু করেনসেই সময়েই কর্নেল বারগইন ভারতে কোম্পানির কাজকর্ম নিয়ে তদন্তের জন্য সিলেক্ট কমিটির মনোযোগী তদন্ত দাবি করেন। তাঁর নেতৃত্বে একটি কমিটি বিধিবদ্ধভাবে তৈরি হয়। মোট তিরিশ জন সদস্যর মধ্যে ছিলেন ক্লাইভ স্বয়ং, তার প্রাক্তন সচিব হেনরি স্টেচি এবং কমোডোর জর্জ জন্সটোন। ছিলেন ক্লাইভের তিক্ত শত্রু। ক্লাইভ জন্সটোনএর ভাই জনকে কোম্পানির চাকরি থেকে ১৭৬৪ সালে পদচ্যুত করিয়েছিলেন। ১৭৫৭র সুজাউদ্দোল্লার সিংহাসনচ্যুতির পরের বিপ্লবের পরিস্থিতিতে যে সব কর্মচারি লাভবান হয়েছিলেন তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে জন্সটোন কমিটি সরকারিভাবে তদন্ত শুরু করল। ক্লাইভ এবং তার যে সব সঙ্গীসাথী বাংলায় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তারা তাদের বক্তব্য আর পার্লামেন্টেরে ভেতরে আবদ্ধ না রেখে জনগনের দরবারে নিয়ে চলে গেলেন। এই ঘটনায় ভারতে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা এবং নবোবদের কাজকর্মের ঘটনাপ্রবাহ জনগনের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। ‘ইংলন্ডের মাসুম জনগণ ক্লাইভের নিগ্রহের অভিপ্রায়ে এতই মগ্ন হয়ে উঠল যে সংবাদপত্রের অন্যান্য সব কেচ্ছা খবর ছাপা বন্ধ হয়ে গেল, ক্লাইভ ক্লাইভ ক্লাইভ’ এতদিন আর্টিস্টিডেস, পাবিলিয়াসএর কলমকেচ্ছা জনগণের খাদ্য ছিল, এবার থেকে অভ্যুদয় ঘটল রেড ট্রিটি, ব্ল্যাক ট্রিটি, ব্রামিনএর মত ছদ্মনামের লেখকের – শুরু হল ভারই সম্বন্ধীয় নবোবদের কেচ্ছা কাহিনী
অনেকেই পার্লামেন্টের আক্রমণের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলতে শুরু করলেন। মনে করতে শুরু করলেন পার্লামেন্ট যতটা গর্জায় ততটা কি বর্ষায়? প্রশ্ন উঠল ১৭৫৭ আর ১৭৬৫র কলঙ্কময় ঘটনা সে সময় তদন্ত না করে কেন ১৭৭২ সালে করা শুরু হল? এর একটা বড় কারণ হয়ত কোম্পানি যে ধরণের আর্থিক গাড্ডায় পড়েছে সেই খাদ থেকে জনগণের দৃষ্টি ঘোরানো(ব্রিটিশরা খোলা চোখে দেখতে পাচ্ছেন ব্রিটেনে ভারত (বলা দরকার বাংলা) থেকে যে নগদ টাকা কোম্পানির হিসেব নিকেশের খাতা ভরে নিয়ে আসত, সেই উদ্বৃত্ত অঙ্ক আর কম্পানি দেখাচ্ছে না, তার অঙ্ক ছোট থেকে ছোট হয়ে আসছেকোম্পানির হিসেবের খাতায় লাল দাগ মোটা হচ্ছে) কিন্তু ১৭৬৮ থেকে পার্লামেন্টে নবোবদের সংখ্যা ক্রমশঃই বাড়ছে। এই তথ্যটা সাধারণ চাকরিজীবি ব্রিটিশদের হজম হচ্ছে না(যারা আদতে ভারতের উদ্বৃত্ত লুঠের ওপরে ভরসা করে জীবন চালাত চাকরি, দালালি বা ব্যবসা করে)
...কয়েকদিন আগেও যে ভদ্রলোক ভারত থেকে সম্পদ লুঠে এদেশে এসে স্বাধীনতা ভোগ করছিল, তারা ক্রমশঃ এদেশে এমন ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছে যে পার্লামেন্ট ব্যবস্থাকে তারা উলটে দিতে পারে। বাস্তবিকই তাদের ক্ষমতা সঙ্কুচন করা দরকার, যাতে তারা এদেশের টম-ডিক-হ্যারির মত হয়ে যেতে পারে
এই আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে পড়ে গেলেন ক্লাইভ। তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে সক্কলে উঠেপড়ে লাগলেন। বিশেষ করে যেভাবে তিনি উইলকিজকে সমর্থন করেছিলেন।(জনৈক ব্রিটিশের সম্পাদনায় প্রকাশিত হতে থাকে দ্য নর্থ ব্রিটন পত্রিকা। পরে জানা যায় এটি জন উইলকিজএর সম্পাদনায় প্রকাশিত হচ্ছে। দ্বিতীয় জর্জের প্যারিস চুক্তির বিষয়য়ে রাজার উক্তির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে নর্থ ব্রিটন পত্রিকার ৪৫ নম্বর সংখ্যা। মানহানির দায়ে তাকে টাওয়ার অব লন্ডনে বন্দী করে রাখা হয়। মামলা করে ছাড়া পান তিনিআদালতে বক্তৃতা শুরুর শব্দ-বন্ধ “উইলকিজ এন্ড লিবার্টি” ছড়িয়ে যায় ব্রিটেন জুড়ে, যা পরে ক্ষমতা-বিরুদ্ধ আন্দোলনে অবশ্য উদ্বৃতি হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকবে“৪৫” শুধু যে উইলকির আইকন হয় না, সারা বিশ্বের প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়) উইলকিজএর পক্ষে জর্জ গ্রেনভিল দাঁড়ান। পরে উইলকিজকে মিডলসেক্স থেকে দাঁড় করানোর প্রস্তাব এলে গ্রেনভিল উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করেন, কারণ হাউস অব কমনস এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয়। ক্লাইভ এবং স্ট্রচির নেতৃত্বে ৭৪ জন সদস্য খোড়ো ছাদের ট্যাভার্নের ডিনারে নির্বাচকদের অধিকারের পক্ষে প্রস্তাব গ্রহন করেন। ক্লাইভ এই আসনে ওয়েডারবার্নকে দাঁড় করিয়ে জিতিয়ে আনেন। কিন্তু শেঢ পর্যন্ত নানান অভিযোগে ওয়েডারবার্নকে পদত্যাগ করতে হয়।
উইলকিজ ঘটনায় ক্লাইভের সমর্থন বা ওয়েডারবার্নএর দুর্নীতির সঙ্গে ক্লাইভকে জড়াতে পারলেন না ক্লাইভ শত্রুরা পার্লামেন্টে বিরোধী পক্ষ ক্লাইভের পক্ষে ভোট দেয়। বিরোধী বার্ক ক্লাইভএর পক্ষে দাঁড়িয়ে বললেন এটা দলীয় বিষয় নয়; ফক্স আর বারে ক্লাইভকে আক্রমণ করেলেন। রাজার পক্ষ(কোর্ট পার্টি) দ্বিধাবিভক্ত। এটর্নি জেনারেল থুর্লো ক্লাইভকে বদনাম করতে উঠেপড়ে লেগে ছিলেন, কিন্তু ক্লাইভের পক্ষে দাঁড়ালেন সলিসিটার জেনারেল ওয়েডারবার্ন। ওয়েডারবার্নের ক্লাইভপক্ষ সমর্থন জনসমর্থনের স্রোত ঘোরাতে অনেক কাজ দিয়েছিল। হিস্টোরি অব সারের লেখক, ম্যানিং এবং বারি বলছেন কৃতজ্ঞ ক্লাইভ ওয়েডারবার্নকে মিচহ্যাম গ্রোভ নামক একটি গ্রামীন মনোজ্ঞ প্রাসাদ উপহার দিয়েছিলেন(এ দিকে ২৫ আগস্ট ১৭৭২এর দ্য পাব্লিক আডভার্টাইজার বলছে ওয়েডারবার্নের উত্থানের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সংযোগ ছিল। কিন্তু আমি এ বাবদে কোন সদুত্তর পাই নি। ঐ কাগজ ‘৭৩এর ১৪ মে’তে লিখছে, জনৈক জেনারেল ওয়েডারবার্ন নার্কট অব গরিচের বিরুদ্ধে আক্রমনে নিহত হন, এছাড়া অন্ধকূপ হত্যায় এন্সাইন ওয়েডারবার্নের নাম পাওয়া যাচ্ছে)
ক্লাইভের আত্মপক্ষ সমর্থন এবং এবং দল আর গোষ্ঠীগুলির তাকে যেভাবে পরস্পর বিরোধীভাবে সমর্থন করেছে, সেই বিষয়টি তার সমসাময়িকেরা বুঝতে চুল ছেঁড়াছিঁড়ি করেছেন - কোন তল পাননি। কয়েকটি তথ্য জুড়ে আজ একটা তত্ত্ব তৈরি করা হয়ত যেতে পারে - নর্থ শেষ পর্যন্ত ক্লাইভের বিরুদ্ধে ভোট দেন, কিন্তু প্রথমে তার পক্ষ নিয়েছিলেন। ফলে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কারণে রকিংহ্যাম গোষ্ঠী ক্লাইভের বিরুদ্ধে জড়ো হয়। শেষ পর্যন্ত যখন নর্থের অবস্থান জানা গেল তখন বিরোধী পক্ষ তাদের অবস্থা পরিবর্তন ঘটিয়ে মধ্যস্থ বার্ক তাদের ক্লাইভের পাশে নিয়ে এলেন। ১৭৮১ সালে হাউসে দাঁড়িয়ে ফক্স বললেন ক্লাইভের বিরুদ্ধে নর্থ যে ভোটটা দিয়েছেন তা আন্তরিক ছিল না – এই ঘটনায় মন্ত্রী(নর্থের)র দিশাহীনতা স্পষ্ট বোঝা যায়। ফক্স বললেন খুব তাড়াতাড়ি ক্লাইভকে লর্ড লিউট্যান্সি উপাধি অর্পন করা হচ্ছে, ফলে তিনি তার সমস্ত যোগাযোগ সঙ্গে করে বন্ধুদের নিয়ে এবার থেকে তার পক্ষে ভোট দেবেন।
কমিটি অব হাউসের সমীক্ষায় ক্লাইভের পরে যে ব্যক্তিটি সব থেকে জনবিরাগভাজন ছিলেন তার নাম সাইকস। তার ধনার্জনের সঙ্গে মাথট করের অভিযোগ যুক্ত ছিল। এই শুল্ক বাবদ তিনি সেই সময়ে ভারতে অন্তত ৬০০০০ টাকা(আজকের হিসেবে অন্তত ১২ কোটি টাকার কাছাকাছি) নিজের সিন্দুকে ভরেন তার নাম হয়ে যায় স্কয়ার মাথোট
এর দশ বছর পর ১৭৮৪-৮৪ সালে কোম্পানি আর তার প্রাক্তন কর্মচারীরা নতুন করে জনসাধারণের দৈনন্দিন আলাপ-আলোচনার মধ্যমণি হয়ে উঠবেন। লর্ড সভা ফক্সের ইন্ডিয়া বিল বাতিল করায় জোট মন্ত্রীসভা পদত্যাগ করে, পিট ক্ষমতায় আহরণ করেন, ১৭৮৪ সালে সাধারণ নির্বাচন হয়, এবং ভারতবর্ষীয় রাজনীতি আবার লন্ডনের পার্লামেন্টারিয় ক্ষমতার রাজনীতির কেন্দ্রে চলে আসে।


No comments: