জেমস
হোলজম্যান(১৯২৫)
ফক্স সরকার ভারত শাসনের ক্ষমতা কোম্পানির হাত থেকে কেড়ে নিয়ে সাত জন
ডিরেক্টরের হাতে দেওয়ার জন্য একটা বিল পার্লামেন্টে আনে, যাদের প্রাথমিকভাবে রাজার
সম্মতিতে পার্লামেন্ট নির্বাচন করবে। এই বিলের প্রভাব পড়ল ব্রিটেনের রাজনৈতিক
মহলে। কোম্পানির সমস্ত সদস্য এবং নবোবেরা সরাসরি সরকারের এই বিলের বিরোধিতা করলেন।
আজ আমরা জনি, কোম্পানি তার সমস্ত সম্পদ কাজে লাগিয়ে সর্বোত্তম প্রচেষ্টায় জনগণকে
প্রভাবিত করার চেষ্টা করল এবং এই প্রচারের ফলে যে জন আন্দোলন তৈরি হল, তার ঢেউয়ে
ভেসে ১৭৮৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে পিট সরকার ক্ষমতায় বসল। ফক্সের জোট সরকার ফেলতে
ডান্ডাসের লেসেস্টার ফিল্ডসএর প্রাসাদে কোম্পানির ডিরেক্টর রিচার্ড এটকিনসন
ডান্ডাস, পিট, এবং জন রবিনসনের বৈঠক হল। ঠিক হল এই সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারে
কোম্পানি তার সমস্ত ক্ষমতা উজাড় করে দেবে। রবনসনের কাগজপত্র থেকে জানতে পারছি আজ
সেই বৈঠকে বরোর আসন ধরে ধরে পিটের সমর্থনে ভারতীয় বাহিনীর তালিকা তৈরি হল। সেগুলি হল হেস্টিংস,
বারওয়েল, ড্যারেল, চার্লস স্টুয়ার্ট, র্যাক্সল, সাইকস, এটকিনসন, জন ক্যাটর এবং
স্যার স্যামুয়েল হ্যানির আসন(ইনি এক অদ্ভুত মানুষ ছিলেন – টোটকা ওষুধ বিক্রি করে
প্রচুর অর্থ করেছেন। মর্নিং হেরাল্ড ডেইলির সূত্রে জানা যাচ্ছে তারপর নিজেকে
স্কটিশ ব্যারনের উত্তরাধিকারী বলতে শুরু করেন)। প্রথম ছজন
আইসিএস। ক্যাটরের পুত্র প্রশাসনে, হ্যানির ভাই কোম্পানির সেনাবাহিনীতে ছিল।
কোম্পানি, বিলের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে লাগল। যে ভাষায় জনগনের কাছে আবেদন করা
হবে সেটা মোটামুটি ঠিক হয়ে গেল। বিপুল প্রচার চলল দেশ জুড়ে। বলা হতে থাকল ফক্সের
বিলটি আইনে পরিণত হলে ভারতকে আদতে মন্ত্রীদের ইচ্ছার বশের ওপর তুলে দিতে হবে(আজকে
যে ভাষায় বেসরতকারি করণের পক্ষে সমর্থন করা হয়)। এবং কোন
(একচেটিয়া) সনদই এই বিল আইনে কার্যকরী হলে নিরাপদ থাকবে না। ১৭৭৩ সালে নর্থ রেগুলেটিং
আইনের বিরুদ্ধেও প্রায় একই সুরে বলা হয়েছিল, কিন্তু এখন সেই বক্তব্যটা আরও
উচ্চগ্রামে জগনের সামনে চলে গেল। খুব সাধারণ সাধারণ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দীর্ঘ
তালিকা দিয়ে বলা হল কোন কোন কর্পোরেশন, কোন কোন মানুষ, বা ক্ষমতার সঙ্গে থাকা কোন
কোন ব্যক্তি উচ্চগ্রামে বলেছেন, কোম্পানি যে সব অধিকার এবং সুবিধা ভোগ করছিল,
সেগুলি সরকার ধ্বংস করার মতলব করেছে এবং তারা সরকারের এই্পদক্ষেপের বিরোধিতা
করছেন।
মনে রাখতে হবে ১৭৮৩ সাল নাগাদ ১৩টা উপনিবেশে শান্তি বজায় রাখতে বিপুল বাহিনী
পাঠাতে হয়েছে। ফলে একটা মন্তব্য উঠে আসছে যে ভারতকে সরকারি অধিকারে রাখাটা খুব
ক্ষতিকর হয়ে যাবে। কিন্তু সে দেশে ভারত নিয়েও অন্য দৃষ্টিভঙ্গীও ছিল - কাসান্দ্রাজ
শর্ট মেথড ফর টার্মিনেটিং দ্য ডিসপিউট কনসার্নিং দ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নামক
একটি প্রবন্ধে সে সময়ের তুলনায় একটা যুগান্তকারী লেখা প্রকাশিত হল। পরে জানা গেল
কাসান্দ্রা হলেন জোশিয়া টাকার, গ্লসেস্টারের ডিন এবং প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ। তিনি
বললেন, ভারতের মানুষকে স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন – ব্রিটিশদের উপনিবেশ থেকে বেরিয়ে
আসা জরুরি। ব্রিটিশেরা তিন হাজার মাইল দূরের মাত্র ২০ লক্ষের উত্তর আমেরিকার
উপনিবেশ সামলাতে হিমশিম খেয়ে গিয়েছেন, ১০০০০ মাইল দূরের ৩ কোটি মানুষের ভারতীয়
উপনিবেশ কি করে তারা সামলাবে? কোম্পানিও নয় সরকারের অধীনেও নয় - তার থেকে বরং
ভারতকে স্বাধীন করে দেওয়া হোক। তবে এটা ব্যতিক্রমী চিন্তা।
বাস্তবটি হল হাতে গোণা মালিক আর ডিরেক্টর সরকারি সমস্ত উদ্যোগকে ধুলোয় মিশিয়ে
দিলেন। তবুও সরকার পক্ষ বলল কিছু বছর আগে আমেরিকা বাতিক(আমেরিকা ম্যানিয়া) দেশকে
পেড়ে ফেলেছিল... এখন ভারত বাতিকে দেশ ভুগছে। প্রত্যেক মানুষ ভাবছেন, তিনি, তার
বাচ্চা, বা ভাই, বা ভাইপো, বা তুতো ভাই, বা তার চাকরবাকর ভারতে গিয়ে নবোব হয়ে
গঙ্গার পাশের দেশগুলো লুঠ করে ফিরে গ্রেট ব্রিটেনকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলবে। তবে
সবটাই যে খুব কোম্পানির পক্ষে যাচ্ছিল তা আজ বলা যাবে না। স্কট হেস্টিংসকে লিখলেন
আমেরিকা হারিয়ে গ্রেট ব্রিটেনের সরকার এতই মুহ্যমান যে প্রত্যেক মন্ত্রী চাইছে
ভারতকে সরকারি তাঁবেতে নিয়ে আসতে।
বিষ্ময়কর হল, কোম্পানি আর তার চাকরবাকরদের অখ্যাতি কিন্তু নির্বাচনে তাদের
পক্ষে গেল। কোম্পানির হাতে ছিল ভারতে নিযুক্ত বিশাল শক্তিশালী সেনা বাহিনী, যারা
সরকার নয়, তাদের চাকরিদাতাদের নির্দেশেই কাজ করে। তারা উপনিবেশ থেকে চলে আসতে রাজি
না – সাম্রাজ্য যদি ভেঙ্গে যায় যাক – এই ছিল তাদের মনোভাব। আমেরিকায় যা
হয়েছে... তা ভারতেও ঘটতে পারে।
নির্বাচনে জিততে মরিয়া কোম্পানি তার মত জনমত তাদের দিকে নিয়ে আসার সমস্ত রকমের
চেষ্টা চালাচ্ছিল। তারা সমস্ত সরল সাধারণ অঙ্ক বেঁকিয়ে চুরিয়ে জনগনের কাছে পৌঁছে
দেওয়ার কাজ করতে লাগল। তাদের প্রচারকেরা বলে দিল যে ১৭৮৪ সালে ৬৪র যায়গায় ১০৪ জন
জিতে আসার সম্ভাবনা আছে। ১৭৭১ সালে নবোবদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল তারা একটি সংঘ
বানিয়ে বরো কেনাবেচার কাজে লিপ্ত। এবারে অভিযোগ উঠল বেঙ্গল ক্লাব ৭৪ জন সদস্যকে
পিটের সরকারে পাঠাতে চাইছে। বাধ্য গয়ে গোষ্ঠী বলতে বাধ্য হল তাদের সঙ্গে রাজনীতির
বিন্দুমাত্র কোন যোগাযোগ নেই, এবং তাদের সদস্যরা বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষ, কোনও
দলের সঙ্গে তাদের বিন্দুমাত্র যোগ নেই।
শেরিডান বা বার্ক মনে করতেন তারা যে সংস্কারের বিদ্রোহ করছেন তা ভারত থেকে আসা
নবোবদের বাধায় ব্যর্থ হবে না। তারা যে ভাবনা বিরোধী পক্ষে চারিত করেছেন তা খুব
কাজে লাগবে। তিনি বললেন পূর্ব দেশিয় লর্ডেরা আগের সরকারকে টাকা দিয়ে ফেলেছে, তারা
মনে করছে এই সরকারকেও তারা টাকা দিয়ে প্রভাবিত করতে পারবে।
শেরিডানের সহকর্মী অনারেবল এডোওয়ার্ড মঙ্কটন স্ট্যাফোর্ড থেকে তার সঙ্গেই জিতে
এসেছিলেন, তিনি কিন্তু কোম্পানির চালুরে ছিলেন।
হেস্টিংসের বিরুদ্ধে বার্কের বিষোদ্গার এতই তীব্র ছিল যে, স্কট মনে করতেন তিনি
পাগল হয়ে গিয়েছেন, এবং তার কারণও আছে। তিনি মনে করতেন ভারত থেকে ধনী হয়ে আসা
নবোবেরা সমাজে এমন দূষণ সৃষ্টি করছে যা এর আগে হয় নি। এবং তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে
ঢুকে বসে আছেন বলেই রাষ্ট্রে সংস্কার খুব জরিরি হয়ে পড়েছে। ইংলন্ডের বিভিন্ন
ক্ষেত্রে কোম্পানির ডায়রেক্টর এবং চাকুরেদের সংখ্যা বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু তার সংখ্যা
যে খুব বড় তা বলা যাবে না।
No comments:
Post a Comment