জেমস হোলজম্যান(১৯২৫)
ভাবানুবাদ –
বিশ্বেন্দু নন্দ
দ্বিতীয় অধ্যায়
কিছু নবোবের উদ্ভব
এবং সংস্রব
নবোবদের অনভিজাততার
কুলুজির অভিযোগ যেভাবে তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তা অনেক সময়েই সত্য নয়। যে
সময়ে নবোবদের ওপর অনভিজাততার অভিযোগ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, সেটা আদতে শ্রেণী
সংগ্রামের যুগ এবং ক্ষমতার রাশ এবং সম্পদের দখল অভিজাতদেরে থেকে চারিয়ে যাচ্ছে
মধ্যবিত্তদের সমাজে। এই কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি কোন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, তার একটা
উদাহরণ দেওয়া যাক ১৭৭৩ সালের পাবলিক আডভার্টাইজারের অজ্ঞাতনামা জনৈকের লেখা এক
ব্যঙ্গ প্রবন্ধে। লেখক লিখছেন, তিনি কিছু প্রখ্যাত ব্যক্তির এই চিত্র চিত্রিত করতে
পারেনঃ প্রথম জর্জ – সম্রাটের জন্য ছানা তৈরি করতেন, এবং দুঃখের জীবন কাটিয়েছেন
একটি ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে স্থানীয় বাজারে টিউনিপ বিক্রি করতেন। ... লর্ড নর্থ ***
(তারকা চিহ্নগুলি আশ্রাব্য গালাগালি বিশেষ)। চার্লস জেনকিনসন, (পরে প্রথম আর্ল অব
লিভারপুল)। আমাদের তাকে ভালই মনে আছে – তাকে একটা চটের চাপরাশ পরিয়ে খবর ফেরি করার
কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার বাবা জুতো সারাই করতেন, কর্নেলের থেকে ধার করা জুতো পরতেন। তার ঠাকুদ্দার বাবা
চিমনি পরিস্কার করতেন, দ্বিতীয় চার্লসের সময় তার ভাগ্য ফিরে যায়, একজন স্কটের
ব্যারোনেজ অধিকার করেন, এবং সে উপাধিটাই আমাদের বর্তমান নায়ক ব্যবহার করছেন।
য়ারমাউথের কাউন্টেস (দ্বিতীট জর্জের হ্যানোভারের রক্ষিতা) আদতে এক ভিখারীর সন্তান
আর ফরাসী ভ্যালের সন্তান হল লর্ড কোর্টনি।
এ ধরণের কাদ ছোঁড়ার
কাজ করতেন নামহীন লেখকেরা নবোবদের উপহাস করতে। ফুটি’র নবোব, স্যর ম্যাথু মাইট হলেন
প্রায় ভিখারী জন এবং মার্জারি মাইটের পুত্র, যার পিতামাতা সেন্ট ম্যারি এক্সে সসেজ
বিক্কিরি করে গ্রাসাচ্ছাদন করতেন। পথ শিশু হিসেবে টার্ট বিক্রেতার দোকানে চুরি
করার দায়ে, সরকারি বিচার থেকে বাঁচতে তাকে ভারতে পাঠানো হয়। ১৭৭১ সালে টাউন এন্ড
কান্ট্রি ম্যাগাজিনএ মেমোয়ার্স অব আ নবোব প্রকাশিত হয়। পূর্ব দেশ থেকে
আসা জনৈক দুশ্চরিত্র শ্রী হোয়াটকে উপস্থিত কতা হয় এই লেখায়। বলা হয় আমাদের নায়কের পিতা ছিলেন নাপিত। কোন এক অভিজাতর ব্যক্তিগত চাকর হিসেবে তিনি জীবন শুরু
করেন। এর পরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক ডিরেক্টরের অধীনে চাকরি করেন। তিনি তাঁকে
রাইটার হিসেবে ভারতে পাঠান।
বাস্তবিকভাবে
সাধারণত ডিরেক্টরেরা রাইটার নির্বাচনের বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকতেন। পলাশীর
পরবর্তীকালে কোম্পানির চাকরির চাহিদা উর্ধ্বমুখী হতে থাকে। হেস্টিংসকে মেজর স্কট
লিখছেন, রাইটারদের চাকরি দিতে কেন যে ডিরেক্টরদের এত বিবমিষা? মেজরকে কর্নওয়ালিস
বলেছিলেন হেস্টিংসের উত্তরাধিকারী হসেবে তার নাম ঘোষণা হওয়ার পরে করণিক(রাইটার)
পদের জন্য ভদ্রঅভিজাতদের থেকে তার সঙ্গে বাংলায় যাবার জন্য হাজারের বেশি দরখাস্ত
শুধু তাঁর টেবলে এসেছিল। তবে এটাও সত্যি যে পলাশীর আগেও চাকরবাকর, সাধারণ চাপরাসি
বা জুতোসারাইওয়ালার করিণিক পদ পাওয়া সত্যিই ব্যতিক্রম ছিল।
পূর্ব দেশ থেকে আসা
নবোবদের পক্ষে দাঁড়িয়ে একজন প্যামফলেটিয়ার লিখছেন, ‘কিশোরদের মধ্যে থেকে করণিক
বাছা হত। সাধারণত কোম্পানির নির্দেশকের, সেনাবাহিনী বা নৌসেনার পরিবারের, সে দেশে
কাজ করা পরিবারের এবং সওদাগর আর পুঁজি বিনিয়োগকারীদে – যাদের কোম্পানির সঙ্গে
পারিবারিকভাবে কোন না কোনভাবে যোগাযোগ আছে, সেই সব মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা
করণিক হিসেবে সুযোগ পেত। পরের দিকে অভিজাত পরিবারগুলি থেকে করণিক আসার প্রবণতা
বেড়ে যায়।’ কোম্পানির প্রাথমিক পদে কোন কোন শ্রেণীর মানুষেরা আসতেন ওপরের লেখাটি
তার চমৎকার নিদর্শন।
এই অধ্যায়ে আমি কোন
কোন নবোব কোন কোন পরিবার থেকে এসেছেন তার বিশদ বিবরণ বা তালিকা দেব না, বরং সমাজের
বিভিন্ন স্তরের মধ্যে থেকে প্রতিনিধিমূলকভাবে বিশেষ বিশেষ উল্লেখযোগ্য কিছু মানুষ
বেছে নিয়ে কিভাবে সাম্রাজ্যের সেবায় আসছেন তার একটা ব্যবচ্ছেদ তৈরি করার চেষ্টা
করব। এটাও বলা দরকার নতুন ধরণের ইঙ্গ-ভারতীয় প্রজাতির উদ্ভব ও বিকাশ ঘটছিল। তবে
কোম্পানির চাকুরেদের অধিকাংশ সাধারণত বৈবাহিক সূত্রে পরস্পরের সঙ্গে জড়িত এটাও মনে
রাখা দরকার।
তাদের সামাজিক ব্যবচ্ছেদ
সূত্রে একটা কথা বলতে পারি, নবোবদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অংশটা হল পুরোনো,
নবোব-পূর্ন, ইঙ্গ-ভারতীয় শ্রেণী। তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি এবং প্রসিদ্ধ, তারাই
হয়ত চাকরির ভাল মন্দ চরিত্র নির্ধারণ করে দিয়েছিল। ফ্রান্সিস, র্যাচেল বারওয়েলকে
বলছেন, এই পরিবেশের মত সব খারাপ গুণগুলি আমার মধ্যে রয়েছে, সেই অর্থে আমি কিন্তু
ভারতীয়(নেটিভ)। যদিও বিপরীতে কোম্পানির কিছু কর্মজীবির নৈতিকতাও ছিল এবং সেগুলি
তারা কর্তাদের থেকেও উপহার হিসেবে অর্জন করেছে তার উদাহরণও যথেষ্ট( চাকুরেদের
চরিত্রের নৈতিকতার উদাহরণে এস সি হিলের বেঙ্গল ইন ১৭৫৬-৫৭ দর্শনীয়)। ১৭৬০এ যে ৩০
জন নবোব পার্লামেন্টে ছিলেন পাঁচজন কিন্তু ইঙ্গ-ভারতীয়র সন্তান।
No comments:
Post a Comment