জেমস
হোলজম্যান(১৯২৫)
{আমরা এই পর্বে আলোচনা করছি কোম্পানি ছাড়া বাংলা তথা ভারত লুঠের কারিগর ব্যক্তিরা বাংলা থেকে অর্থ নিয়ে গিয়ে ব্রিটেনে কিভাবে বিনিয়োগ করতেন তার বর্ণনা}
অক্সফোর্ডশায়ারের ক্যাভারশ্যামএ দারুণ একটি প্রাসাদ কিনেছিলেন মারস্যাক
প্রাক্তন মালিক লর্ড ক্যাডোগ্যানএর থেকে। লর্ড স্ত্রীর সঙ্গে বিবাদ করে বাড়ি
ভেঙ্গে ফেলার পরিকল্পনা করেন - একদিন রাতে ঝলসানো গরুর মাংস দিয়ে খাবার খেতে খেতে
মারস্যাকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে এক মুঠো অর্থের বিনিময়ে জমি, বাড়ি, আসবাব, মদ্যের
সেলার সব বিক্রি করে দিলেন। ক্যাভারশ্যামএর প্রাসাদটি তৈরি হয়েছিল তৃতীয় উইলিয়মের
সময় ১ লক্ষ ৩০ হাজার পাউণ্ডে। এই বিপুল এবং সুসজ্জিত প্রাসাদটি তার দৃষ্টিতে নতুন
করে সাজিয়ে তোলার দরকার ছিল সেই সময়ের শৈলীতে। অনেকেই ভেবেছিলেন ভবিষ্যতে হেস্টিংস
হয়ত এখানেই থাকবেন। জমিদারিটি ছড়ানো ছিল ৪২০০ একরে, আরাএ ৫০০ একর ছিল সুন্দর
সাজানো বাগান এবং আনন্দের নানা সরঞ্জাম সমন্বয়ে। গুঞ্জন যে জর্জ দ্বিতীয়র অবৈধ
পুত্র ছিলেন মারস্যাক। ১৭৩৭ সালে মারা যাওয়ার সময় তার সম্পত্তির দর ছিল ১,৮২,০০০
পাউন্ড।
বার্কশায়ারের বাসিলডমটি মালিক লর্ড ফেন তার সম্পত্তি বিক্রি করে দেন স্যর
ফ্রান্সিস সাইকসকে ১৭৭০ নাগাদ। বাগানটাই ছিল ৩ মাইল ঘেরা তার ভেতরে একটা আরও
সাজানো বাগান। সাইকস য়র্কের কারকে নিযুক্ত করেন তার বাড়িটি পরের দিকে প্রবাদ হয়ে
যাওয়া চারটে স্তম্ভ দিয়ে সাজিয়ে তুলতে। ভেতরে ছিল একটি গ্রান্ড সালঁ, ডাচ
ছবিয়ালদের তৈরি করা দারুণ ছবিঘর।
ভারত থেকে ফিরে আসা নবোবদের মধ্যে আরও যারা বড় দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ বানান
তাদের নামও করা দরকার। হ্যাম্পশায়ারে জেনারেল করন্যাকের ১৮০০০ পাউণ্ডের নোবেল
প্যালেস, পরে নাম হয় ভাইল প্যালেস। সাউদাম্পটনে আরও একটি ছ’বাহু বিশিষ্ট প্রাসাদ
বানান। লর্ড পিগো স্ট্যাফোর্ডশায়ারের প্যাটসহলের গাঁয়ে দেশের সব থেকে সুন্দর দেখতে
একটি বিশাল প্রাসাদ কেনেন ১ লক্ষ পাউন্ড ব্যয়ে। রিডিংএর কাছে হোয়াইট নাইটে ব্রিটিশ
অভিজাতদের আতিথেয়তা নিয়ে বাস করতেন উইলিয়ান ব্যায়াম মার্টিন। স্যর টমাস রামবোল্ট
হার্টসএর উডহলে একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রাসাদ বানান। এটি রামবোল্টের মৃত্যুর পর পল
বেনফিলড নতুনভাবে তৈরি করেন।
নবোবেরা ব্রিটেনে যে তোলপাড় করেছেন তার কারণ হাতে গোনা কয়েক জন ধনী, অভদ্র
নবোবের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাত্রা। অবশ্যই বহু ভারতবর্ষ থেকে খুব বেশি অর্থ না নিয়ে আসা
অধিকাংশ নবোব সম্মান নিয়ে বোধবুদ্ধি কাজে লাগিয়ে শান্তভাবে জীবন কাটিয়েছেন। তবে
হাতে গোণা নবোবদের বদনাম বেশি। তাদের মধ্যে কেউ বেশ্যাদের সঙ্গে লন্ডন ট্যাভার্নে
বেলেল্লাপনা করছেন, কেউ আবার রেসুড়েদের জুয়াড়িদের ফাঁসি গলায় স্বচ্ছায় পরছেন। স্কট
হেস্টিংসেকে লিখছেন মনে হচ্ছে যেন সেক্সপিয়ার যেন স্বয়ং সেখানে, মাথ্যামোটার মত
জুইয়া খেলে দুহাতে টাকা ওড়াচ্ছেন।
পিটের ইন্ডিয়া বিলে একটি অংশ ছিল যেখানে বলা ছিল হতভাগ্য বাব্বারা যেন
বেলেল্লাপনার জন্য লম্পট নবোবদের হাতে নিজের মেয়েকে তাদের ভাল ভবিষ্যতের খোঁজে
তুলে না দেয়। পিটের সামনে এ ধরণের কিছ উদাহরণ নিশ্চই পেশ করা হয়েছিল, যা আতঙ্কের,
যা আমাদের ধর্মের, আমাদের আইনের বিরোধী।
এই অবস্থায় আমরা বলতে পারি ট্যাভার্নে যে ব্যক্তিটা ব্রিটিশ অভিজাতর সজ্জায়
লম্পট নবোবের আত্মা ধারণ করে, এবং সেটি যে আত্মহত্যার একমাত্র চিত্রনাট্য সেটা তার
খেয়ালে থাকে না।
এই ধরণের খেলুড়ে ক্ষণজীবি নবাব ছিলেন জেনারেল রিচার্ড স্মিথ। ক্লাইভ ছাড়া এ
ধরণের অন্য স্তরের খেলুড়ে নবোব লন্ডনে ছিল না বলাই যায়। প্রশ্নহীনভাবে তিনি
নবোবদের নবোব। জনগণের মনে নবোব বললেই যে সব ‘গুণের’ কথা মনে পড়ে সেই সব গুণের
অধিকারী ছিলেন স্মিথ। তিনি যেন ফুটির স্যর ম্যাথু মিটি। তিনি বহু ক্ষেত্রেই বহু
মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন নিজে পার্লামেন্টেরিয়ান, ফক্সের অন্ধ অনুগামী,
বার্কশায়ারের হাই শেরিফ, এবং গাঁয়ে চিলট্রেন লজের মালিকও। লন্ডনের এক সময়ের
গুঞ্জন, বেলেল্লাপনার কেন্দ্রবিন্দু। শোনা যায় তিনি অক্সফোর্ডে জেন্টেলম্যান
কমোনার হিসেবে হিসেবে ঢুকে তার জনগণের উদ্দেশ্যে জোবন উতসর্গ করতে চেয়েছিলেন। তিনি
ড্রামন্ড ব্যাঙ্কিংকে দেড় লক্ষ টাকা উপহার দিলেন কারণ তারা তার ছোটবেলায় কবে একবার
অর্ধেক ক্রাউন দিয়ে সাহায্য করেছিল।
তার সমসাময়িকদের মধ্যে জেনারেল ছিলেন মূলত জুয়াড়ি এবং রেসুড়ে। সেন্ট জেমস
ক্লাবে তিনি শোয়ার আগে ওয়েটারকে জানিয়ে ছিলেন কেউ যদি তার বিরুদ্ধে ৩০০০ পাউণ্ড
নিয়ে খেলতে আসে তাহলে যেন তাকে জাগানো হয়। তিনি একটি আরবি ঘোড়া পুষতেন। জকি
ক্লাবের সদস্যও ছিলেন। তার স্কার্লেট কালার নামে ঘোড়া ১৭৮০ সালে ওকস এবং ১৭৮১র
ডার্বি জেতে।
তার মানি ঘোড়ার নাম ছিল রোজালিতা। তার বাদামী ঘোটকী ১৭৭৮ সালে রসাতা নামে একটি
ঘোড়ার জন্ম দেয়। ১৭৮১তে তার প্রথম রেস হল নিউমার্কেট স্প্রিং মিটিং সেই রেসে চার
অন্য ঘোড়ার থেকে আগে দৌড়ে ৫০ গিনি রোজগার করে। পরের অক্টোবরে তিনি ফক্সের রডনি
নামক ঘোড়াকে হারিয়ে দেন। তিনি দুবার রয়্যাল পার্স জেতার মত বহু দৌড় তিনি জিতেছেন।
No comments:
Post a Comment