Saturday, July 15, 2017

উপনিবেশিকতা বিরোধী চর্চা প্রশ্ন মানসিকতার - ছোটলোকেদের জ্ঞানচর্চা খোঁজার ইচ্ছে আর মানসিক দাসত্ব থেকে বেরোবার ইচ্ছে

এক লেখক টিকার লেখার উত্তরে লিখলেন 'কে জানে এই preventive inoculation তো এমনও হতে পারে যে মানুষের কব্জিতে শুধু পাঁচ সিসি গরম পানি ঢুকিয়ে দেয়া হতো!'

আমরা অনেকেই বিশ্বাস করিনা আমাদের কি জোর ছিল - সব সমস্যার সমাধান খুঁজি ধারের সম্পদে। সেই অবস্থা অতীতে আমাদের অনেকেরই ছিল। আজ কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠেছি।

এই টিকাটা সে সময় বাংলায় ব্রাহ্মণেরা দিতেন ঠিকই, কিন্তু অন্যান্য প্রযুক্তি, জ্ঞানচর্চার রাশ ছিল তথাকথিত ছোটলোকেদের হাতে। তাই পুরোনো গ্রামবাংলা, ভারত বা এশিয়া বুঝতে ছোটলোকেদের জ্ঞানচর্চায় নজর দিতেই হবে, অন্তত পশ্চিমি শিক্ষা পদ্ধতিতে বেড়ে ওঠা শিক্ষিতরা দেন নি - এই কাজ অনেকতাই গান্ধীবাবার অনুগামীরা করেছেন মন দিয়ে - এই তথ্যটা আজ দ্বিধাহীনভাবে মেনে নেওয়া যাক।
--
ফলে আমাদের প্রযুক্তি/জ্ঞানচর্চার খোঁজে অনেকেরই মত প্রথমেই ধরে নিই না যে টিকা দেওয়া মানেই "মানুষের কব্জিতে শুধু পাঁচ সিসি গরম পানি ঢুকিয়ে দেয়া হতো"। তিনি জানতে চেয়েছেন সেটা কিভাবে তৈরি হত, দেওয়া হত সেই আলোচনা কোথায়? তিনি ঠিকই বলেছেন। কিন্তু আমাদের কাজ জানানো পর্যন্ত, এর বেশি জানতে গেলে এই কাজে বিশেষজ্ঞদের জুড়তে/এগিয়ে আসতে হবে।

আদতে এশিয়/ভারতউপমহাদেশিয়/বাংলার প্রযুক্তি, জ্ঞানচর্চা বিষয়য়ে আলোচনার শুরুতেই একটা বিরুদ্ধ প্রশ্ন তুলে দেওয়ার ভাবনাটা গাঁইয়া ছোটলোকেদের জ্ঞানচর্চা, স্বাস্থ্যবিধি ইত্যাদির ওপর অশ্রদ্ধার প্রকাশ। ঠিক যেমন এলোপ্যাথির প্রয়োগবিধি, তার দর্শনের ওপর প্রশ্ন তুললে আপনি পিছিয়েপড়া হয়ে গেলেন - এর থেকে আধুনিক আর কার্যকর আর কিছুই হতে পারে না। তেমনি আপনি যদি দেশজ প্রযুক্তি, দেশজ জ্ঞানচর্চা, দেশজ প্রজ্ঞাকে আলোচনায় ঠাঁই দিতে চান তাহলেও আপনি হয়ে গেলেন পিছিয়ে পড়া, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, অশিক্ষিত ইত্যাদি।

কেননা দেশিয় বিকেন্দ্রিকৃত অ-লুঠেরা, অ-খুনি দখলদারি, শুধুই কিছু মানুষের লাভের উদ্দেশ্যে বিকশিত নয় এমন প্রযুক্তিকে গ্ল্যামারে মুড়ে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে সাজিয়ে গুজিয়ে জনগনের সামনে সর্বসমস্যাহর বলে তুলে ধরার কোন ব্যবস্থা আগেও ছিল না এখনও নেই - ফলে এই বিষয়য়ে ধারনা করতে হয় সশরীরে গিয়ে বা পুরোনো লেখার পাঠোদ্ধার করে।

আমরা/অন্য গবেষক দেখিয়েছি/ছেন কিভাবে নানান খুব সাধারণ প্রযুক্তি বাংলা/ভারতউপমহাদেশিয়/পারস্য/চিন থেকে পশ্চিমে চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যে সময়ের কথা হচ্ছে সেটা শুধু বাংলা/ভারতউপমহাদেশিয়/চিন/পারস্যের সম্পদ লুঠ বা লুঠের প্রস্তুতির সময় নয়, জ্ঞান লুঠেরও সময় ছিল এটা আজ পরিষ্কার।

আমরা বাংলা তথা ভারতউপমহাদেশিয় তথা এশিয়ার উপনিবেশ পূর্ব সময়ের প্রযুক্তি খোঁজ করছি যা অইওরোপিয় চরিত্রের - এ কাজ অনেকেই করেছেন ভারতজুড়ে। আমরা কেউই প্রযুক্তিবিদ নই। কিন্তু খোঁজার, বোঝার চেষ্টা আছে। শুরুতেই যদি ইওরোপিয় একরৈখিক চিন্তায় ধরে বসে থাকি যে এশিয়/ভারতীয়/বাংলার প্রযুক্তি মানেই অকার্যকরী, তাহলে তো এই খোঁজের মানেই দাঁড়ায় না।

এটা পরিষ্কার যে জেনারের আগে এখানে টিকা দেওয়ার প্রচলন ছিল - সেটা ব্রিটিশ নথিকরণেই প্রকাশ। তাই আমরা একে জ্ঞান চুরি/লুঠই বলছি। কেননা জেনারের আবিষ্কারের পরে মহান পশ্চিমী শাসকেরা ভারতীয় পদ্ধতির টিকাকরণ বন্ধ করে দেন। সেটা কিভাবে তৈরি হত, দেওয়া হত(বোধহয় তার বর্ণনা ধরমপালজী দিয়ে গিয়েছেন) সেই খোঁজের কাজ বিশেষজ্ঞদের। সেটা আমাদের খোঁজের আওতায় নয়।



আমাদের এইটুকুই বলার ছিল।

No comments: