জেমস
হোলজম্যান(১৯২৫)
{এই কিস্তিতে নবোবদের নিয়ে পার্লামেন্টের নানান কেচ্ছা কাহিনী।
এক দিকে কোম্পানি আর নবোবদের বাংলা লুঠ অর্থে ব্রিটেনের উৎপাদন ব্যবস্থায় ক্রমশ প্রাণ আসছে। লুঠ সম্পদের ভর্তুকিতে গড়ে উঠছে এককেন্দ্রিক প্রযুক্তির গবেষণাগার। লুঠেরা প্রযুক্তির বিকাশ ঘটছে ভারত-আরব জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তি চুরি ও ধ্বংস করে। নব্য শিল্পবিপ্লবীয় প্রযুক্তিগুলিকে সেই সময় থেকে বিশ্বের সব সমস্যার সমাধান হিসেবে দেখানোর দৃষ্টিভঙ্গীর প্রচার দেওয়া হবে।
লন্ডনের যে সময়টা নিয়ে আমরা এখন আলোচনা করছি সেটা বাংলার দুঃখের সময়। বাংলা তখনও ছিয়াত্তরের পরিকল্পিত গণহত্যার মৃত্যু মিছিলের ধাক্কা সামলে উঠতে পারে নি। অপেক্ষা করছে কখন নতুন করে পরবর্তী আক্রমণ শুরু হবে - চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের নামে কোটি কোটি কারিগর চাষী জমি হারিয়ে কৃষি শ্রমিকে পরিণত হবেন।
লন্ডনে শিল্পবিপ্লবের পাশাপাশি বাংলায় চলছে সম্পদ আর জ্ঞান লুন্ঠন, খুন আর উতপাদন ব্যবস্থা ভাঙ্গার উদ্যম।
এক দিকে কোম্পানি আর নবোবদের বাংলা লুঠ অর্থে ব্রিটেনের উৎপাদন ব্যবস্থায় ক্রমশ প্রাণ আসছে। লুঠ সম্পদের ভর্তুকিতে গড়ে উঠছে এককেন্দ্রিক প্রযুক্তির গবেষণাগার। লুঠেরা প্রযুক্তির বিকাশ ঘটছে ভারত-আরব জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তি চুরি ও ধ্বংস করে। নব্য শিল্পবিপ্লবীয় প্রযুক্তিগুলিকে সেই সময় থেকে বিশ্বের সব সমস্যার সমাধান হিসেবে দেখানোর দৃষ্টিভঙ্গীর প্রচার দেওয়া হবে।
লন্ডনের যে সময়টা নিয়ে আমরা এখন আলোচনা করছি সেটা বাংলার দুঃখের সময়। বাংলা তখনও ছিয়াত্তরের পরিকল্পিত গণহত্যার মৃত্যু মিছিলের ধাক্কা সামলে উঠতে পারে নি। অপেক্ষা করছে কখন নতুন করে পরবর্তী আক্রমণ শুরু হবে - চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের নামে কোটি কোটি কারিগর চাষী জমি হারিয়ে কৃষি শ্রমিকে পরিণত হবেন।
লন্ডনে শিল্পবিপ্লবের পাশাপাশি বাংলায় চলছে সম্পদ আর জ্ঞান লুন্ঠন, খুন আর উতপাদন ব্যবস্থা ভাঙ্গার উদ্যম।
পার্লামেন্টে নবোবেরা কিন্তু খুব একটা দলীয় পক্ষ নিতেন না। প্রথমের দিকে
রাজনৈতিকভাবে দলীয় আনুগত্য প্রকাশ করেন নি, নিজেদের স্বাতন্ত্র বজায় রেখেছিলেন।
কিন্তু ১৭৮৪র সাধারণ নির্বাচনে নবোবেরা খাড়াকাড়ি দুভাগ হয়ে যান, এক দল ফক্স-নর্থের
জোট, অন্য দল বিরোধী পক্ষে। কিন্তু তাদের জেতার পদ্ধতি তাদের পিছন ছাড়ে নি।
নবোবদের ধরেই নেওয়া হয় দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্য হিসেবে। তারা যেহেতু ভারতে
অস্বাভাবিকভাবে ধনার্জন করেছেন, তাদের খুব সহজের হুমকি(ব্লাকমেল)র শিকার হন। একজন
লিখছেন, মনে হয় খুব সহজে ...কে(নাম উহ্য) দুইয়ে নেওয়া যেতে পারে, প্রয়োজনে
মন্ত্রীর কাছে ভেট পাঠানো যেতে পারে। সে সময়ে নবোব-হান্টিং নামে একটি কথা বেশ চালু
হয়েছিল, যার এক অর্থ বাঁহাতে রোজগার করা। অন্যভাবে বলতে গেলে নবোবদের থেকে নিংড়ে
নেওয়া অর্থে বেশ কিছু ক্ষমতাশালী স্বার্থান্বেষী দল ভীতিপ্রদ ক্ষমতার
স্বার্থ-প্রাসাদ তৈরি করেছিল।
রিচার্ড স্মিথ, বেনফিল্ড, রামবোলড, ক্লাইভ এবং সাইকস সক্কলে নির্বাচনকে
প্রভাবিত করে পার্লামেন্টে জিতে এসেছিলেন। এরা হাউস অব কমনসে নিরানন্দময় প্রখ্যাতি
ভোগ করতেন। কিন্তু রিচার্ড স্মিথের নামে যে কলঙ্ক রটেছিল সেই গুঞ্জন শুধু সিঁড়ির
তলার মানুষদের কানাকানিতে থেমে থাকে নি, সেটা অনেক বড় হয়ে রাষ্ট্র হয়েছিল
জনসাধারণে। তিনি জুয়ায় হেরে ফক্সের জোট মন্ত্রীসভাকে
সমর্থন জানাতে বাধ্য হন। তার থেকে ফক্স এত সম্পদ নিংড়ে নিয়ে তাকে সর্বস্বান্ত করে
দেন যে তিনি ক্ষমতার মানুষদের কাছে জনে জনে অনুরোধ করতে থাকেন তাকে অন্তত আরেকবার
ভারতে চাকরিতে পাঠানোর জন্য।
তবে পার্লামেন্টে ১৭৮০ সালে আরকোটের নবাবের উদ্বৃতি দিয়ে সব থেকে বড় পৃষ্ঠপোষণার
অভিযোগ এনেছিলেন এডমন্ড বার্ক। তার অভিযোগ ছিল বেনফিল্ড নবাবের আট জন সদস্যকে অর্থ
দিয়ে বশ করেছেন। অন্যরা ব্যাপারটা অতটা জোরদিয়ে সদর্থকভাবে বলতে পারেন নি, ...এটা
বলা হচ্ছে এবং তিনি মনে করেন এই অভিযোগের পিছনে কিছু না কিছু সত্য রয়েছে, এই
মুহূর্তে এই হাউসে নবাবের প্রতিনিধি হিসেবে সাত থেকে আট জন সদস্য আছেন, যারা তাঁর
স্বার্থ দেখছেন, তারা মন্ত্রীকে সমর্থন করছেন, আশাকরি মন্ত্রীও তাকে সমর্থন করবেন(এর
আগে আর্কোটের নবাবের সঙ্গে বেনফিল্ডের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছি। কোম্পানি মনে করত
তাঞ্জোরের রাজা ব্রিটিশদের বন্ধু নয়। নবাবের নামে ব্রিটিশ সেনা বাহিনী তাঞ্জোর দখল
করে তা আর্কোটে জুড়ে নিয়ে বেনফল্ডেরা আরকোটের নবাবের থেকে আরও বেশি অর্থ দাবি করার
পরিকল্পনা করছিল। এই নিয়ে বিপুল বিতর্ক চলতে থাকে ইংলন্ডে। সে সময় বার্কএর পক্ষ
থেকে তাঞ্জোরের রাজার পক্ষ নেন তারই আত্মীয় উইলিয়ম বার্ক)। র্যাক্সল বলছেন
বার্ক প্রথমে এই সংখ্যাটা সাত জন বলেছিলেন পরে বাড়িয়ে আটজন করেন, যা তার মতে
অসম্ভব অতিরঞ্জিত, কেননা বেনফিল্ড দুজন এনেছিলেন। র্যাক্সল বেনফিল্ডের ঘনিষ্ঠ বলে
তার কাছে সত্যি সংখ্যাটা থাকা উচিৎ। অন্য দিকে স্কট যখন এই প্রসঙ্গে হেস্টিংসকে
চিঠি লেখেন তখন কিন্তু অন্য তথ্য প্রকাশ পেয়েছিল, ...বেনফিল্ডের বন্ধুদের সহায়তায়
আমরা ইন্ডিয়া হাউস এবং ওয়েস্টমিনিস্টারে লড়ে যাচ্ছি এবং সহায়তা পাচ্ছি... এবং
তারা(বেনফিল্ডের বন্ধুরা) সংখ্যায় এত যে আপনার মামলায় এদের সহায়তা খুব জরুরি হয়ে
দাঁড়াবে।
আবার স্যর টমাস রামবোলডের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। তার মামলাটা অনেকটা
নবোব-হান্টিংএর। মাদ্রাজের গভর্নর হিসেবে চাকরির সময় রামবোলডের বিরুদ্ধে অভিযোগ
উঠেছিল, ব্যক্তিগত স্বার্থে প্রেসিডেন্সির কিছু জমি সুলভে দিয়ে দেন এবং হায়দার
আলিকে যুদ্ধে প্ররোচিত করেন। স্কটল্যান্ডের লর্ড এডভোকেট হেনরি ডান্ডাস রামবোলডের বিরুদ্ধে
আক্রমণ শানান। ১৭৮২ সালে রামবোলডকে রাজধানীর বাইরে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা জারি হয় এবং
তারপর থেকে তিনি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন।
তবে আস্তে আস্তে লর্ড এডভোকেট তার অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকেন। ১৭৮৩ সালে
তিনি অভিযোগ করতে থাকেন, যখনই রামবোলডের বিরুদ্ধে পার্লামেন্ট বিল এনে আলোচনা করে
সে সময় সদস্য সংখ্যা বহু কমে যায়। তার মতে এর থেকে প্রমান হয় যে সদস্যদের এই
বিষয়য়ে উতসাহ কমে যাচ্ছে। এক মাস পরে তিনি জানান বাদী পক্ষের অভিযোগের কাগজপত্র
ছাপা না হলে তিনি কিচ্ছু করতে পারবেন না, এবং তার জন্য এই সেসানটার সময় যথেষ্ট নয়।
তবে রামবোলডের রাজধানীর বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ করণের পক্ষে যে বিল এসেছে তা তিনি
গোটা সেসানের জন্য বজায় রাখছেন যাতে রামবোলড রাজধানীর বাইরে যেতে না পারেন।
এবারে রামবোলড সব থেকে খারাপ বক্তৃতা দিলেন। দুর্দশাকে তিনি খুব জোর দিয়ে তুলে
ধরলেন, আর আবেগঘনভাবে বললেন কিভাবে বার্ক তাকে হাউসে হেনস্থা করেছেন। ... তিনি
বলেন উনি(বার্ক) যদি আমার বাড়ি যান, তাহলে দেখবেন কি কষ্টে আমি থাকি, ওনার হৃদয়
দ্রব হয়ে যাবে। উত্তরে বার্ক বললেন তার কর্ম জীবনে উনি প্রচুর অন্যাহ্য সুযোগ
সুবিধে পেয়েছেন, আর যে প্রাসাদে তিনি থাকেন সেটি যে কোন মানুষের চোখ কপালে তুলে
দেওয়ার মত। এর পরে সাম্মানিক ব্যারোনেট উঠে দাঁড়িয়ে বললেন কি ভাবে ব্রিটিশ
দ্বীপুঞ্জগুলি তার জীবনের ওপর বিষময় প্রভাব ফেলেছে, তার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে গ্যাছে,
মনে আঘাত লেগেছে, চিকিৎসকেরা তাকে মহাদেশদের আবহাওয়ায় থাকতে বলেছেন, যে উপদেশ তিনি
দেশের জন্য উপেক্ষা করেছেন উদাসীনভাবে। ফলে পরের দিন রামবোলডেরবিরুদ্ধে যে বিলটি
পার্লামেন্টে এল, সেটিতে তার বিরুদ্ধে জারি করা সমস্ত বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে শুধু
তার সম্পত্তি দখল করা হল। ক্রমে ক্রমে তার শাস্তির ব্যাপরটি পর্দার আড়ালে চলে গেল।
ব্রিটিশ জনগণ বিশ্বাস করল যে পার্লামেন্টে রামবোলডের বিরুদ্ধে যে সহানুভূতি
দেখানো হয়েছে, তাতে রামবোলডের শত্রুদের এখনও নির্বিষকরণ করা যায় নি। র্যাক্সল রামবোলডের
ছাড়া পাওয়াকে তুলনা করলেন রিচার্ড রাগবির মত করে, এবং এটাই তখন সাধারণ জনগনের অধিকাংশের
ভাবনা ছিল। প্রাক্তন খাজাঞ্চি হিসেবে রাগবি জনগণের প্রচুর
অর্থ তছরূপ করেছেন যা তিনি শোধ করতে পারেন নি। হেস্টিংসকে স্কট লিখলেন, এডভোকেট
জেনেরেল স্যর রামবোলডের বিষয়টি হাল্কা করে না নিলে পারতেন। আমার মনে হয়, তাঁর
চিন্তা ভাবনা পরিবর্তন ঘটাতে তাঁকে সরাসরি ঘুষ দেওয়া হয়েছিল। আমি জানি স্যর টমাসের
বিষয়টি সমাধান করতে দুজন ক্ষমতাশালী ও ওজনদার ব্যক্তি এডভোকেটের সঙ্গে সর্বদা জুড়ে
রয়েছেন। ...দেশপ্রেমিক বার্কের রামবোলড বিষয়য়ে সব মন্তব্যের সঙ্গেই একমত হলেও
বললেন, হেস্টিংস, স্যর এলিজা বা সুলিভানের (ডিরেক্টর হিসেবে সুলিভান ছিলেন
ক্লাইভের শুত্রু, হেস্টিংসের পরম বন্ধু) তুলনায় রামবোলডের মামলাটা কিস্যু নয়।
No comments:
Post a Comment