জেমস হোলজম্যান(১৯২৫)
{পলাশীর পর ৬০ বছরে লন্ডনে কিস্তিতে গিয়েছে মোট ৪ লক্ষ কোটি টাকা। আমরা সরাসরি ঢুকে পড়ছি ব্রিটিশ সম্পদ লুঠের রাজত্বে - হোলজম্যান এই অধ্যায়ের শুরুই করছেন দুটি গুরুত্বপূর্ন লুঠ সংক্রান্ত বইএর বিস্তৃত উদাহরণ তুলে।
কিন্তু মার্শালের মত প্রভাবশালী কেম্ব্রিজ শৈলীর অর্থনীতিবিদ এই লুঠের তথ্য অস্বীকারের বর্তমান তাত্ত্বিক - তার সঙ্গে রয়েছেন তথাগত রায় - যিনি বাংলায় বই লিখে প্রমান করে ছেড়েছেন লুঠের অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যে - বরং বলছেন ব্রিটশ ভারতকে যা দিয়েছে তার মূল্য কষতে থাকুন তাহলে দেখবেন লন্ডনের পাল্লা ভারী - প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ডায়ারের গণহত্যায় ক্ষমা চাইবার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন এক পাঞ্জাবী, যিনি মার্শালের তত্ত্বের প্রতিধ্বনি করেছিলেন।
এই দালালদের চিহ্নিত করতে হবে। চিহ্নিত করতে হবে সংঘ পরিবারকেও। এরা মনে করে ১৭৫৭ মুসলমান রাজত্বের হাত থেকে হিন্দুদের মুক্তি দিয়েছিল ব্রিটিশরা। এরা কোনদিন সোচ্চার হয়ে লুঠ তত্ত্ব স্বীকার করে নি।}
কিন্তু মার্শালের মত প্রভাবশালী কেম্ব্রিজ শৈলীর অর্থনীতিবিদ এই লুঠের তথ্য অস্বীকারের বর্তমান তাত্ত্বিক - তার সঙ্গে রয়েছেন তথাগত রায় - যিনি বাংলায় বই লিখে প্রমান করে ছেড়েছেন লুঠের অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যে - বরং বলছেন ব্রিটশ ভারতকে যা দিয়েছে তার মূল্য কষতে থাকুন তাহলে দেখবেন লন্ডনের পাল্লা ভারী - প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ডায়ারের গণহত্যায় ক্ষমা চাইবার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন এক পাঞ্জাবী, যিনি মার্শালের তত্ত্বের প্রতিধ্বনি করেছিলেন।
এই দালালদের চিহ্নিত করতে হবে। চিহ্নিত করতে হবে সংঘ পরিবারকেও। এরা মনে করে ১৭৫৭ মুসলমান রাজত্বের হাত থেকে হিন্দুদের মুক্তি দিয়েছিল ব্রিটিশরা। এরা কোনদিন সোচ্চার হয়ে লুঠ তত্ত্ব স্বীকার করে নি।}
পঞ্চম অধ্যায়
সেই সময়ের ইংলন্ডে ইঙ্গ-ভারতীয়দের প্রভাব
সেই সময়ের ইংলন্ডে ইঙ্গ-ভারতীয়দের প্রভাব
নবোবেরা যে অর্থ ভারত থেকে এনেছিল, তার কতটা শিল্পবিপ্লবে কাজে লেগেছে এটি জামাই ঠকানো প্রশ্নের বেশি কিছু নয়। ব্রুক এডামস দ্য ল অব সিভিলাইজেশন এন্ড ডিকে-তে এই প্রশ্নটা জোরদারভাবে ছুঁড়ে দিচ্ছেন আর ডিগবির ‘প্রসপারাস’ ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় সেই তথ্যটিকে মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করা হয়েছে। তারা বলছেন ভারতীয় রূপো ব্যবহার করে ব্রিটিশ ঋণ ব্যবস্থা শিল্পকে নতুন উদ্ভাবন, গবেষণা এবং আধুনিক মাপদণ্ডে সজ্জিত করে তোলে। ডিগবি বলছেন (১৭৫৭/১১৬৪র)পলাশীর থেকে (১৮১৫/১২২২র) ওয়াটারলু যুদ্ধ পর্যন্ত ১০০,০০,০০,০০০ পাউন্ড(১০০ কোটি পাউন্ড মানে ২০০ কোটি টাকা। এর সঙ্গে স্বচ্ছন্দে ৪০০০ গুণ করলে আজকের দামে কত টাকা গিয়েছিল তার একটা মোটামুটি হিসেব পাওয়া যাবে – ৪ লক্ষ কোটি টাকা) ভারত থেকে ব্রিটিশ ব্যাঙ্কে গিয়েছে। এডাম লিখছেন পলাশীর পর থেকে বাংলার লুঠের সম্পদ লন্ডনে পৌঁছতে থাকে... এবং তার প্রভাব তাৎক্ষণিক ভাবে ব্রিটিশ সমাজে পড়েছিল এবং প্রত্যেকে বিশ্বাস করেন যে শিল্প বিপ্লব শুরু হয়েছিল ১৭৬২ সালে। বাংলার রূপো শুধু অর্থের পরিমান বাড়াল তাই নয়, অর্থের প্রবাহটাও বৃদ্ধি ঘটল; ১৭৪৯ সালে ব্রিটিশ ব্যাঙ্ক ১০ পাউন্ড এবং ১৫ পাউন্ডের নোট জারি করায় ব্যক্তিগত ব্যবসায়ী সঙ্গঠনগুলিতে কাগজের টাকার সংখ্যা ধরে রাখার পরিমান বিপুলভাবে বেড়ে যায়। ১৭৬০এর পরে জটিল দামি ধাতুর সম্পদের ওপর নির্ভর করে জটিল ঋণ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতর মিন্টো অধ্যাপক সি জে হ্যামিলটন দ্য ট্রেড রিলেশনস বিটুইন ইংলন্ড এন্ড ইন্ডিয়া ১৬০০-১৮৯৬ গ্রন্থে এডামসের প্রত্যেকটি দাবিকে অস্বীকার করছেন। শিল্পবিপ্লব শুরু হয়েছিল ১৭৬০ সালে এই তথ্য তিনি শুধু অস্বীকার করেন নি, উল্টে ভারতীয় রূপো বিপুল পরিমানে ইংলন্ডে গিয়েছিল, এই দাবিটিকেও তিনি আজগুবি বলে দাবি করছেন। ১৭৮৩ সালের সমীক্ষায় বলা হচ্ছে রূপোয় বিনিয়োগ সে দেশে পাঠানোর দুটি অসুবিধে ছিল যে এই দেশে(ভারতে) রূপোর চল কমে যাবে, দ্বিতীয়ত রূপো ইওরোপে পাঠানোর মানে হল ভাল বাজার থেকে সেটিকে খারাপ বাজারে পাঠানো।
রূপো ইওরোপে পাঠানো বিপুলভাবে অলাভজনক। প্রত্যেক টাকায় কোন পণ্যের বিনিময়ে ২ ডলার ২ সেন্ট থেকে ৬ ডলার ২ সেন্ট পর্যন্ত পাওয়া যেত। লন্ডনে রূপো পাঠানোর বিনিময় ছিল ৯ ডলার ১ সেন্ট। ফলে সাধারণত যে মানুষটা তার রোজগার দেশে নিয়ে চাইছে সে এত সম্পদ রূপোর পিছনে খরচ করবে কেন? ফলে হিরের মাধ্যমে তাদের রোজগার পাঠানো অনেক সোজা ছিল এবং সুপ্রিম কাউন্সিল ১৭৭৪এর আইনে এই কাজটি সহজ করে দেয়।
লন্ডনে প্রদত্ত বিলের অর্থ দেওয়া কোম্পানির অর্থনীতির পক্ষে বিপুল আঘাত নেমে আসতে থাকে। ফলে তারা লন্ডনে কাটা বিলের ওপর সাধারণভাবে নিষেধাজ্ঞা লাগু করে। এর প্রতিষেধক হিসেবে কোম্পানির কর্মচারীরা ফরাসী আর ডাচ কোম্পানির ওপরে বিল কেটে তা ইওরোপের অন্য দেশ থেকে সংগ্রহ করতে থাকে।
হিকি সরাসরি বলছেন যে ব্যক্তির পক্ষে ভারত থেকে টাকা বয়ে নিয়ে যাওয়া খুব বেশি অস্বাভাবিক ছিল না। তিনি মাথামোটা সন্দেহবাতিক জনৈক ক্যাপ্টেন বেন্টলির কথা বলছেন যিনি মনে করতেন কোন বিলই সুরক্ষিত নয়। ফলে তিনি তার সঙ্গে নগদ যা ছিল, সেগুলি আটটি মজবুত বাক্সতে ভরে, সেগুলির জাহাজ ভাড়া দিয়ে তিনি তার সঙ্গে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেন।
ধোঁয়ার কুণ্ডলী সরিয়ে এবার আসুন আমরা আগুণ কোথায় আছে সেই দিকে এগোতে শুরু করি। পলাশীর পরে কোম্পানির চরিত্রে লক্ষ্যনীয় পরিবর্তন এসেছিল। তারপরের ২৫ বছর ধরে পূর্বের রূপো লন্ডনে পাঠানোর প্রক্রিয়া বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। এই সময়ে মোটামুটি ১৫ মিলিয়ন পাউন্ড ইংলন্ডে পাঠানো হয়, যা পূর্বের দেশে পাঠানো হয়ে ছিল। এই অর্থের সঙ্গে কিঞ্চিত পরিমাণে ভারতীয় সোনা ব্রিটিশ ঋণের বাজার তৈরি করেছিল।
১৭৮২ সালে ইংলন্ডে পৌঁছে স্কট হেস্টিংসকে লিখলেন ...রাষ্ট্র এখন খুব খারাপ অবস্থায় আছে, আপনি কি বিশ্বাস করবেন লর্ড নর্থ মোট ৭০ মিলিয়ান স্টার্লিংএর প্রস্তাব পেয়েছেন। আমাদের ব্যবসা কমছে, কিন্তু বর্তমানের রাজধানীতে এত নগদ অর্থ আগে কোন দিন দেখা যায় নি। আমি লন্ডনে ২০০ সোনার মোহর নিয়ে গিয়ে প্লাম্বারকে(?) দিয়ে সেগুলিকে গলিয়ে নিলাম, আমায় বলল শেষ বছরে সে খুব বেশি সোনার বাট গলায় নি কিন্তু দেড় টনের মত মোহর আর প্যাগোডা গলিয়েছে। এই অঙ্ক প্রায় ১৫০ হাজার পাউন্ড বছরে। এর সঙ্গে প্রত্যেক বছর ডিরেক্টরদের উদ্যোগে লন্ডনে পাঠানো ন্যুনতম ৫ লক্ষ পাউন্ড জুড়ি তাহলে এটা বিপুল অঙ্ক হয়ে দাঁড়াবে।
No comments:
Post a Comment