(গত কয়েকদিন ধরে বাংলায় মারোয়াড়িদের ভোট দেওয়া ইত্যদি নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গে জুটেছিল কুমারবাবুর সিরাজ সংক্রান্ত প্রকাশনা এবং আমাদের পলাশি বিষয়ক উত্তর। ফলে সেই সময় বুঝতে কিছু লেখা তৈরি করার ভাবনা মাথায় আসে। তার প্রথম বিষয় এই লেখাটি। এটি তৃতীয় খণ্ড। এই লেখাটির সঙ্গে বাংলা মায়ের সে সময়ের সমৃদ্ধির বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে আষ্টেপৃষ্ঠে। লেখাগুলো বড় হবে।
ভাল লাগলে পড়বেন, মন্তব্য করবেন, আতঙ্ক হলে ক্ষমাঘেন্না করে এড়িয়ে যাবেন। - উইভার্স, আর্টিজান, ট্রাডিশনাল পার্ফর্মিং আর্টিস্টস গিল্ডের পক্ষে বিশ্বেন্দু)
পুর্বপ্রকাশিতের পর...
জগতশেঠের কুঠির পতনের পরে
আর ভারতীয়দের হাতে আর্থব্যবস্থা থাকে নি। ভারতের বাজারে এসেগিয়েছে ১৭৭০এ ব্যাঙ্ক
অব হিন্দুস্তান, ১৭৮৪তে বেঙ্গল ব্যাঙ্ক, ১৭৮৬তে গেনারেল ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, ১৮০৬এ
ব্যাঙ্ক অব বেঙ্গল। ব্যাঙ্ক অব বেঙ্গল সরকারি সাহায্য পায় ১৮০৯ সালে এবং প্রধান
প্রেসিডেন্সি ব্যাঙ্ক হিসেবে কাজ করতে শুরু করে। ১৮২৯এ ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক ব্যবসায়িক
ব্যাঙ্ক হিসেবে কাজ করতে শুরু করে। ব্যাঙ্ক অব বেঙ্গল ছাড়া সব ব্যাঙ্কই পতন ঘটে।
তবে দেশিয় ব্যাঙ্কিং
ব্যবস্থা সাধারণত জনগণের থেকে অর্থ জমা রাখত না, বরং মহাজনী কারবার করত। জি টাইসন
তার ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার্স অব ব্যাঙ্কিং ইন এশিয়া এন্ড আফ্রিকাড় লিখছেন, বড় শহরে
স্রফেরা হুন্ডিতেই বিল কাটত। দেশিয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা মূলত হুন্ডি দেওয়া আর
সেগুলি ভাঙ্গানোর কাজ করত। হুন্ডি ছিল ধার দেওয়ার মূল ব্যবস্থা। হুন্ডির মাধ্যমে
কৃষিজ দ্রব্য সংরক্ষণ আর গতায়াতের কাজ করা হত। ১৮৫৮ সালের আইনে জয়েন্ট স্টক
ব্যাঙ্কিং কোম্পানি তৈরির ছাড়পত্র দেওয়া হল।
জগতশেঠের কোঠির কি হাল
হয়েছে তা বোঝা যাবে সুপ্রীম কোর্টের এক মামলায়। জগতশেঠ ইন্দ্রচাঁদ এবং বিষ্ণুচাঁদ জগতশেঠ
হারাকুচাঁদের পুত্রদ্বয়। জয়কৃষ্ণ ব্যানার্জী তাঁদের ঢাকা কোঠির বিরুদ্ধে মামলা
করেন ১৮১৪ সালে। মামলা চলে ১৮২১ পর্যন্ত। জয়কৃষ্ণ’র সঙ্গে জগত শেঠেদের ঢাকা কোঠির
আর্থিক লেনদেন হত। তিনি ব্রিটিশ ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীদের ধার দিতেন। নিজের অর্থে না
কুলোলে জগতশেঠের কুঠি থেকে ধার করতেন। তার ফরিয়াদ ছিল, চুক্তির থেকে অনেক বেশি সুদ
নিচ্ছে কোঠি এবং কলকাতার কোঠি যে সুদ নেয় তার থেকেও বেশি সুদ চাইছে তাঁদের ঢাকা
কোঠি। তার আরও অভিযোগ তাকে কোঠিতে আটকে রেখে মুচলেকায় সই করিয়ে নিয়েছে। মামলাটি
সুপ্রীম কোর্টে এলে শেঠেরা আদালতে সওয়াল করে, তা্র উত্তরে বাদীপক্ষ জানায় আপনাদের
মুখের কথার দিন গিয়েছে, আইনে যা আছে হবে।
আরও একটা মামলার কথা বলা
যাক – ১৮২২সালে রাজা হরনাথের বিরুদ্ধে। মামলাটি করেছেন মুর্শিদাবাদের জগতশেঠ ইন্দ্রচাঁদের
পুত্র জগতশেঠ গোবিন্দ চাঁদ। খুব বিশদে এই মামলায় না ঢুকে বলা যাক, তাঁদের এমন
অবস্থা হয় যে তাঁরা রাজা হরনাথকে ৪০,০০০ টাকাও শোধ করতে পারেন নি। এবং শেষমেশ এই
মামলায় রাজা হরনাথ তার দাবি অনুযায়ী ১ লাখ টাকা পেয়ে যান।
জগত শেঠেদের কর্মচারী
সাধারণত অসওয়াল জৈন সমাজের মানুষ। বংশ পরম্পরায় তাঁরা এই পরিবারে কাজ করেছেন। এটা
তাঁদের জোরের জায়গা ছিল, রটাই তাঁদের পরে পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও ধর্ম নীতি
বোধও তাঁদের পথ রোধ করে দাঁড়িয়েছে। যখন এজেন্সি হাউসগুলো চিনের সঙ্গে বিপুল লাভের
আফিম ব্যবসা করছে, তখন জগতশেঠেরা এই ব্যবসায় নামতে পারে নি।
No comments:
Post a Comment