এই আলোচনা থেকে
প্রমাণিত হবে আধুনিক কালের ক্যাবিনেট বা মন্ত্রীসভা নামক কোন সংগঠন মুঘল আমলে ছিল না।
তাঁর মন্ত্রীরা, বলা ভাল আমলারা, সম্রাটের নির্দেশ সুনিপুণভাবে যতসম্ভব বিশদে
কার্যকর করতেনমাত্র; হয় পরোক্ষে ঘোমটাপরা হুমকি না হয় চাটুকারিতা, তা ছাড়া
কোনভাবেই তাঁরা সম্রাটের নীতিতে প্রভাব ফেলতে পারতেন না। তাদের প্রস্তাব যদি সম্রাট
বাতিল করে দিতেন তাহলে তাঁরা পদত্যাগ করতেন না। সংক্ষেপে বলতে গেলে সম্রাটের নিদ্রা
যাওয়ার সময়টুকু ছাড়া আমলাদের প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়ার মত কিছু থাকত না। এই বিপুল
নিয়ন্ত্রণ সংবিধানের মৌল স্পিরিটের বিরোধী(যদিও আমি সংবিধান, এই নামটা ব্যবহার করলাম,
সে সময় এর বিন্দুমাত্র কোন অস্তিত্ব ছিল না); আদতে যে সময়ের ভারতের কথা আমরা আলোচনা
করছি, সেটা প্রাচীন সময়ের ইংলন্ডের কথা মনে পড়িয়ে দেয়, যেভাবে সেখানে Witenagemot গোষ্ঠী অ্যাংলো-স্যাক্সন
রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করত।
তিনি একাধারে ধর্ম
এবং রাষ্ট্র, উভয়ের প্রধান ছিলেন - মুঘল সম্রাটের অসীম ক্ষমতার একটা ইঙ্গিত পাওয়া
যায় এই ব্যবস্থা থেকে। ইসলামি তত্ত্ব অনুসরণ করলে, প্রত্যেক মুসলমান সার্বভৌম তাঁর
সময়ের খালিফ ছিলেন; এবং তিনি প্রত্যেক ধর্মবিশ্বাসী মুসলমানের ধর্ম বিশ্বাসের
চূড়ান্ত আধার – শুধু কোরানিয় আইনজীবিরা যদি তাকে অযোগ্য প্রমান না করেন, তাহলে
তাঁর ক্ষমতাই চূড়ান্ত।
প্রত্যেক ইসলামি
রাষ্ট্রের মত ভারতে মুঘল রাষ্ট্রপ্রধান দুটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলাতেন, তাঁর
সাম্রাজ্যে সমস্ত প্রজার রাজা হিসেবে, এবং তাঁর ধর্মের প্রতিটি বিশ্বাসীর কাছে
তিনি ছিলেন ধর্মরক্ষাকারী যোদ্ধা(মিসনারি ডিফেন্ডার এন্ড এজেন্ট অব দ্য ক্রিড)। ফলে
মুসজিদ, তাত্ত্বিক বা ধর্মীয় শিক্ষকদের ভর্তুকি দিতে, বিভিন্ন দরগা এবং
সমাধিক্ষেত্র রক্ষার জন্য অর্থ ব্যবস্থা করতে, এতিমখানা তৈরির জন্য দান চাইতে বা
মুসলমান অবিবাহিতাদের বিয়ে ইত্যাদির জন্য প্রত্যেক মুসলমান প্রজার একচতুর্থাংশ
রোজগার জাকাত রূপে তিনি দাবি করতেন। জাকাত, আবগারি শুল্ক বা ভূমিরাজস্বের মত
সরকারি খাজাঞ্চিখানায় জমা হত। ধর্মীয় প্রধান আর রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে তাদের
ক্ষমতার অপব্যবহারন কএছেন মুঘল আমলের শেষের দিকে যখন তাঁরা জাকাত থেকে প্রাপ্ত
অর্থ নিজেদের ভোগ-বিলাসের কাজে ব্যবহার করতেন।
No comments:
Post a Comment