(গত কয়েকদিন ধরে বাংলায়
মারোয়াড়িদের ভোট দেওয়া ইত্যদি নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গে
জুটেছিল কুমারবাবুর সিরাজ সংক্রান্ত প্রকাশনা এবং আমাদের পলাশি বিষয়ক
উত্তর। ফলে সেই সময় বুঝতে কিছু লেখা তৈরি করার ভাবনা মাথায় আসে। তার প্রথম
বিষয় এই লেখাটি। এটি প্রথম খণ্ড- দুতিনটি খণ্ডে প্রকাশ পাবে। এই লেখাটির
সঙ্গে বাংলা মায়ের সে সময়ের সমৃদ্ধির বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে আষ্টেপৃষ্ঠে।
লেখাগুলো বড় হবে। ভাল লাগলে পড়বেন, মন্তব্য করবেন, আতঙ্ক হলে ক্ষমাঘেন্না
করে এড়িয়ে যাবেন। - উইভার্স, আর্টিজান, ট্রাডিশনাল পার্ফর্মিং আর্টিস্টস
গিল্ডের পক্ষে বিশ্বেন্দু) বেঙ্গল পাস্ট এন্ড প্রেজেন্ট পত্রিকায় জে
এইচ লিটলএর দ্য হাউস অব জগতশেঠ ১৯২০-২১ সালে কয়েকটি কিস্তিতে প্রকাশ
হয়েছিল, সেটি বই হয়ে বেরোবার সময় ভূমিকা লেখেন বাংলার অর্থনীতির
প্রবাদপ্রতীম ঐতিহাসিক নরেন্দ্র কৃষ্ণ সিনহা। শেঠ পরিবারের ওপর এই লেখাটি
মূলত তাঁ’র লেখার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
ভারতের বাণিজ্যর ইতিহাসে মারোয়াড়ি বানিয়া আর শেঠদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। কে এ আন্তোনোভা ইন্দো-রুশিয়ান রিলেশন্স ইন দ্য সেভেন্টিন্থ অ্যান্ড এইটিন্থ চেঞ্চুরিজ প্রবন্ধে বলছেন ভারতীয় শেঠ আর বানিয়ারা(ব্যাঙ্কার এন্ড মার্চেন্টস)দের যে গুরুত্বপূর্ণ পূর্বভারতে ভূমিকা পালন করছিলেন, অস্ত্রাখানেও মারোয়াড়িরা একই ভূমিকা পালন করে এসেছেন। অষ্টাদশ শতকে, অস্ত্রাখান থেকে ঢাকা, এই বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে মারোয়াড়ি শেঠদের ভূমিকা এশিয় আর্থ ব্যবস্থায় খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
টড তার এনালস এন্ড এনটিকুইটি অব রাজস্থানের মারোয়াড় খণ্ডে বলছেন, মুঘল আমলে মারোয়াড় বৈদেশিক ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মারোয়াড়এর পালি বাজার পশ্চিম ভারতের সমুদ্র উপকূল এবং উত্তর ভারতের ব্যবসার সংযোগস্থল ছিল। পালিতে ভারত, কাশ্মীর এবং চিন(তিব্বত?)এর বিভিন্ন পণ্য ইওরোপ, আরব, পারস্য এবং আফ্রিকার পণ্যের সঙ্গে হাত বদল হত। কচ্ছের সমুদ্রবন্দর থেকে কাতার(ক্যারাভান) আমদানি করত হাতির দাঁত, তামা, খেজুর, গাম-আরবিক(?), বোরাক্স, নারকেল, ব্রড ক্লথ, রেশম বস্ত্র, চন্দন, ক্যাম্ফর, রঞ্জক দ্রব্য, বিভিন্ন ওষুধ, অক্সাইড, সালফেট অব আর্সেনিক, মশলা, কফি ইত্যাদি। এর বিনিময়ে বিদেশিরা পেত চিন্টজ, শুকনো ফল, মুলতানের জিরে, চিনি, আফিম(কোটা আর মালব থেকে), রেশম এবং দামি বস্ত্র, পটাশ, শাল, রাঙ্গানো চাদর, হাতিয়ার, নুন ইত্যাদি। ফলে মারোয়াড় বালকেরা ন্যাংটো বয়স থেকেই ব্যাবসার ঘাঁতঘোঁত জেনে যেত। তাছাড়া এই শুষ্ক অনুর্বর অঞ্চল তাঁদের বার বার ধাক্কা দিয়ে বার করে দিয়েছে তাঁদের জন্মভূমি থেকে।
বল্লাল সেনের সময় ১১৫৮-১১৭৯ থেকেই টাকা লেনদেন বা বিনিয়োগের কাজ থেকে কার্যত হাত ধুয়ে বসে ছিল বাঙ্গালিরা। বাঙ্গালিদের শেঠ ছিল স্বর্ণ বা সুবর্ণবনিকেরা। বল্লাল তাঁদের ছোটজাত ঘোষণা করে দেন। বণিক-রাজার লড়াইতে মাথা ঢোকানর সুযোগ পেয়ে যায় বিদেশি শেঠেরা।
মারোয়াড়ের নগর থেকে পাটনায় ১৬৫২ সালে হিরানন্দ সাহু এসে কোঠি তৈরি করে ব্রিটিশদের ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে থাকেন – ছোট সময়ের জন্য ধার দিতে শুরু করেন। তাঁদের যখন ভারতে কেউ চেনে না, তখন থেকেই তাঁরা বাণিজ্য করতেন ব্রিটিশদের সঙ্গে। হিরানন্দের সাত পুত্রের প্রথমটি নামহীন মাণিকচাঁদ সপ্তদশ শতের শেষের দিকে ঢাকায় কোঠি স্থাপন করতে এলেন। ঢাকা তখন বাংলা সুবার রাজধানী। পূর্ব ভারতের নদী বাণিজ্য কেন্দ্রগুলির বাদশা। শুধু ঢাকায় বছরে নদী বাণিজ্যের পরিমান ছিল এক কোটি টাকারও বেশি। ব্রিটিশ কোম্পানি তখন ঢাকার উতকৃষ্ট বস্ত্রগুলির অন্যতম খরিদ্দার। ডাচেরাও সেই মহার্ঘ বস্ত্রগুলি দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং ইওরোপে ব্যবসার জন্য কিনত। ডাচ এবং ব্রিটিশদের পাল্লা দিয়ে বস্ত্রদ্রব্য কিনত ফরাসি কোম্পানি। আর্মানি, গুজরাটি সহ ভারতের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরাও প্রচুর পণ্যদ্রব্য কিনত। এই প্রতিযোগিতার বাজারে সময় মত টাকা ধার পাওয়া ছিল ব্যবসায় টিকে থাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। মাণিকচাঁদের ঢাকা কোঠির ব্যবসা ভরে উঠল।
মুর্শিদকুলি খাঁ ঢাকা থেকে রাজধানী সরিয়ে নিয়ে এলেন মকসুদাবাদে। তার অন্যতম আস্থার দেওয়ান মাণিকচাঁদ তাঁর সঙ্গে এলেন নতুন রাজধানীতে। সুবাদারি পরিকাঠামোর অধস্তনটি চলে এল মকসুদাবাদে – কিন্তু নায়েব সুবাদারিটা থেকে গেল ঢাকায়। মুঘল সাম্রাজ্যে ঢাকা তখনও টাকা ছাপায়, তার কিছুদিন পরে তা উঠে যাবে মকসুদাবাদ - মুর্শিদাবাদে। মাণিকচাঁদের ঢাকার কোঠি তখনও ভাল ব্যবসা করছে। পাটনা ছাড়া পরিবারের ব্যবসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কোঠিটি ঢাকাতেই। এছাড়াও হুগলি, কলকাতা, বেনারস এবং উত্তরভারতে অন্যান্য ব্যবসার স্থানে পরিবারের নিত্যনুতন কোঠি গড়ে উঠতে শুরু করল। তবে কবে দিল্লিতে পরিবার কবে কোঠি খুলল তার ইতিহাস জানা যায় না। ১৭১৪য় মাণিকচাঁদের মৃত্যুর পর ১৭২২ সালে উত্তরসূরী ফতেচাঁদ দিল্লির সম্রাটের থেকে জগতশেঠ উপাধি পান। তাতে বোঝা যায় এই ঘটনার অনেক আগেই পরিবার দিল্লিতে তাঁদের কোঠি বানিয়ে ফেলেছে।
বাংলার দরবারে জগতশেঠেদের দবদবা তৈরি করা খুব সহজ হয় নি, ১৭১৭য় নবাবের মুর্শিদকুলির টাঁকশালের দারোগা রঘুনন্দনের মৃত্যর আগে পর্যন্ত। রঘুনন্দনের পর নবাবের টাঁকশালের চাবি এল জগতশেঠেদের সিন্দুকে। ডাচ তথ্যে তাকে হিন্দুস্তানের সব থেকে বড় শেঠ (মানিচেঞ্জার) হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। তাঁদের হিসেবের বা সমীক্ষার খাতায় এতবার তার নাম দেখা যেত যে হল্যান্ডের কর্তারা বুঝতেই পারতেন না, ইনি ব্যক্তি না কোন সংগঠন। ডাচ সূত্রে জানা যাচ্ছে জগতশেঠের চুঁচুড়ার কোঠির নাম ছিল ফতেচাঁদ আনন্দচাঁদজী। আনন্দচাঁদ ফতেচাঁদের পুত্র, পিতার আগেই মারা যান। ফতেচাঁদের অন্য পুত্র দয়াচাঁদও বাবার আগে মারাযান। মুর্শিদাবাদের বড় কোঠিটির নাম ছিল মাণিকচাঁদ আনন্দচাঁদজী। ঢাকা কোঠির নাম ছিল শেঠ মাণিকচাঁদ জগতশেঠ ফতেচাঁদজী। ডাচ সূত্রে জানা যাচ্ছে জগতশেঠেদের ব্যবসার সঙ্গে জুড়ে থাকত না যে সব শেঠেরা, তাঁদের ব্যবসা ঘটিবাটিচাঁটি হয়ে যায়। স্রফেরা যেসব ধরণের পয়সা বাংলা-বিহারের নানান এলাকায় চালাত, সেগুলির বাটা স্থির করত জগতশেঠের কোঠি।
নবাবকে তার চাহিদামত অর্থ জোগান দিয়ে তাকে খুশি করে, বাটার হার ঠিক করিয়ে নিত শেঠের কুঠি। ব্রিটিশদের কলকাতা কাউন্সিল লিখছে, ফতেচাঁদের সঙ্গে নবাবের এত ভাল সম্পর্ক যে তাকে ডিঙিয়ে নবাবের থেকে টাঁকশালের দখলের ফরমান জোগাড় করা প্রায় দুঃসাধ্য।(চলবে)...
ভারতের বাণিজ্যর ইতিহাসে মারোয়াড়ি বানিয়া আর শেঠদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। কে এ আন্তোনোভা ইন্দো-রুশিয়ান রিলেশন্স ইন দ্য সেভেন্টিন্থ অ্যান্ড এইটিন্থ চেঞ্চুরিজ প্রবন্ধে বলছেন ভারতীয় শেঠ আর বানিয়ারা(ব্যাঙ্কার এন্ড মার্চেন্টস)দের যে গুরুত্বপূর্ণ পূর্বভারতে ভূমিকা পালন করছিলেন, অস্ত্রাখানেও মারোয়াড়িরা একই ভূমিকা পালন করে এসেছেন। অষ্টাদশ শতকে, অস্ত্রাখান থেকে ঢাকা, এই বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে মারোয়াড়ি শেঠদের ভূমিকা এশিয় আর্থ ব্যবস্থায় খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
টড তার এনালস এন্ড এনটিকুইটি অব রাজস্থানের মারোয়াড় খণ্ডে বলছেন, মুঘল আমলে মারোয়াড় বৈদেশিক ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মারোয়াড়এর পালি বাজার পশ্চিম ভারতের সমুদ্র উপকূল এবং উত্তর ভারতের ব্যবসার সংযোগস্থল ছিল। পালিতে ভারত, কাশ্মীর এবং চিন(তিব্বত?)এর বিভিন্ন পণ্য ইওরোপ, আরব, পারস্য এবং আফ্রিকার পণ্যের সঙ্গে হাত বদল হত। কচ্ছের সমুদ্রবন্দর থেকে কাতার(ক্যারাভান) আমদানি করত হাতির দাঁত, তামা, খেজুর, গাম-আরবিক(?), বোরাক্স, নারকেল, ব্রড ক্লথ, রেশম বস্ত্র, চন্দন, ক্যাম্ফর, রঞ্জক দ্রব্য, বিভিন্ন ওষুধ, অক্সাইড, সালফেট অব আর্সেনিক, মশলা, কফি ইত্যাদি। এর বিনিময়ে বিদেশিরা পেত চিন্টজ, শুকনো ফল, মুলতানের জিরে, চিনি, আফিম(কোটা আর মালব থেকে), রেশম এবং দামি বস্ত্র, পটাশ, শাল, রাঙ্গানো চাদর, হাতিয়ার, নুন ইত্যাদি। ফলে মারোয়াড় বালকেরা ন্যাংটো বয়স থেকেই ব্যাবসার ঘাঁতঘোঁত জেনে যেত। তাছাড়া এই শুষ্ক অনুর্বর অঞ্চল তাঁদের বার বার ধাক্কা দিয়ে বার করে দিয়েছে তাঁদের জন্মভূমি থেকে।
বল্লাল সেনের সময় ১১৫৮-১১৭৯ থেকেই টাকা লেনদেন বা বিনিয়োগের কাজ থেকে কার্যত হাত ধুয়ে বসে ছিল বাঙ্গালিরা। বাঙ্গালিদের শেঠ ছিল স্বর্ণ বা সুবর্ণবনিকেরা। বল্লাল তাঁদের ছোটজাত ঘোষণা করে দেন। বণিক-রাজার লড়াইতে মাথা ঢোকানর সুযোগ পেয়ে যায় বিদেশি শেঠেরা।
মারোয়াড়ের নগর থেকে পাটনায় ১৬৫২ সালে হিরানন্দ সাহু এসে কোঠি তৈরি করে ব্রিটিশদের ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে থাকেন – ছোট সময়ের জন্য ধার দিতে শুরু করেন। তাঁদের যখন ভারতে কেউ চেনে না, তখন থেকেই তাঁরা বাণিজ্য করতেন ব্রিটিশদের সঙ্গে। হিরানন্দের সাত পুত্রের প্রথমটি নামহীন মাণিকচাঁদ সপ্তদশ শতের শেষের দিকে ঢাকায় কোঠি স্থাপন করতে এলেন। ঢাকা তখন বাংলা সুবার রাজধানী। পূর্ব ভারতের নদী বাণিজ্য কেন্দ্রগুলির বাদশা। শুধু ঢাকায় বছরে নদী বাণিজ্যের পরিমান ছিল এক কোটি টাকারও বেশি। ব্রিটিশ কোম্পানি তখন ঢাকার উতকৃষ্ট বস্ত্রগুলির অন্যতম খরিদ্দার। ডাচেরাও সেই মহার্ঘ বস্ত্রগুলি দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং ইওরোপে ব্যবসার জন্য কিনত। ডাচ এবং ব্রিটিশদের পাল্লা দিয়ে বস্ত্রদ্রব্য কিনত ফরাসি কোম্পানি। আর্মানি, গুজরাটি সহ ভারতের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরাও প্রচুর পণ্যদ্রব্য কিনত। এই প্রতিযোগিতার বাজারে সময় মত টাকা ধার পাওয়া ছিল ব্যবসায় টিকে থাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। মাণিকচাঁদের ঢাকা কোঠির ব্যবসা ভরে উঠল।
মুর্শিদকুলি খাঁ ঢাকা থেকে রাজধানী সরিয়ে নিয়ে এলেন মকসুদাবাদে। তার অন্যতম আস্থার দেওয়ান মাণিকচাঁদ তাঁর সঙ্গে এলেন নতুন রাজধানীতে। সুবাদারি পরিকাঠামোর অধস্তনটি চলে এল মকসুদাবাদে – কিন্তু নায়েব সুবাদারিটা থেকে গেল ঢাকায়। মুঘল সাম্রাজ্যে ঢাকা তখনও টাকা ছাপায়, তার কিছুদিন পরে তা উঠে যাবে মকসুদাবাদ - মুর্শিদাবাদে। মাণিকচাঁদের ঢাকার কোঠি তখনও ভাল ব্যবসা করছে। পাটনা ছাড়া পরিবারের ব্যবসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কোঠিটি ঢাকাতেই। এছাড়াও হুগলি, কলকাতা, বেনারস এবং উত্তরভারতে অন্যান্য ব্যবসার স্থানে পরিবারের নিত্যনুতন কোঠি গড়ে উঠতে শুরু করল। তবে কবে দিল্লিতে পরিবার কবে কোঠি খুলল তার ইতিহাস জানা যায় না। ১৭১৪য় মাণিকচাঁদের মৃত্যুর পর ১৭২২ সালে উত্তরসূরী ফতেচাঁদ দিল্লির সম্রাটের থেকে জগতশেঠ উপাধি পান। তাতে বোঝা যায় এই ঘটনার অনেক আগেই পরিবার দিল্লিতে তাঁদের কোঠি বানিয়ে ফেলেছে।
বাংলার দরবারে জগতশেঠেদের দবদবা তৈরি করা খুব সহজ হয় নি, ১৭১৭য় নবাবের মুর্শিদকুলির টাঁকশালের দারোগা রঘুনন্দনের মৃত্যর আগে পর্যন্ত। রঘুনন্দনের পর নবাবের টাঁকশালের চাবি এল জগতশেঠেদের সিন্দুকে। ডাচ তথ্যে তাকে হিন্দুস্তানের সব থেকে বড় শেঠ (মানিচেঞ্জার) হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। তাঁদের হিসেবের বা সমীক্ষার খাতায় এতবার তার নাম দেখা যেত যে হল্যান্ডের কর্তারা বুঝতেই পারতেন না, ইনি ব্যক্তি না কোন সংগঠন। ডাচ সূত্রে জানা যাচ্ছে জগতশেঠের চুঁচুড়ার কোঠির নাম ছিল ফতেচাঁদ আনন্দচাঁদজী। আনন্দচাঁদ ফতেচাঁদের পুত্র, পিতার আগেই মারা যান। ফতেচাঁদের অন্য পুত্র দয়াচাঁদও বাবার আগে মারাযান। মুর্শিদাবাদের বড় কোঠিটির নাম ছিল মাণিকচাঁদ আনন্দচাঁদজী। ঢাকা কোঠির নাম ছিল শেঠ মাণিকচাঁদ জগতশেঠ ফতেচাঁদজী। ডাচ সূত্রে জানা যাচ্ছে জগতশেঠেদের ব্যবসার সঙ্গে জুড়ে থাকত না যে সব শেঠেরা, তাঁদের ব্যবসা ঘটিবাটিচাঁটি হয়ে যায়। স্রফেরা যেসব ধরণের পয়সা বাংলা-বিহারের নানান এলাকায় চালাত, সেগুলির বাটা স্থির করত জগতশেঠের কোঠি।
নবাবকে তার চাহিদামত অর্থ জোগান দিয়ে তাকে খুশি করে, বাটার হার ঠিক করিয়ে নিত শেঠের কুঠি। ব্রিটিশদের কলকাতা কাউন্সিল লিখছে, ফতেচাঁদের সঙ্গে নবাবের এত ভাল সম্পর্ক যে তাকে ডিঙিয়ে নবাবের থেকে টাঁকশালের দখলের ফরমান জোগাড় করা প্রায় দুঃসাধ্য।(চলবে)...
No comments:
Post a Comment