(গত কয়েকদিন ধরে বাংলায়
মারোয়াড়িদের ভোট দেওয়া ইত্যদি নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গে
জুটেছিল কুমারবাবুর সিরাজ সংক্রান্ত প্রকাশনা এবং আমাদের পলাশি বিষয়ক
উত্তর। ফলে সেই সময় বুঝতে কিছু লেখা তৈরি করার ভাবনা মাথায় আসে। তার প্রথম
বিষয় এই লেখাটি। এটি তৃতীয় খণ্ড। এই লেখাটির সঙ্গে বাংলা মায়ের সে সময়ের
সমৃদ্ধির বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে আষ্টেপৃষ্ঠে। লেখাগুলো বড় হবে।
ভাল লাগলে পড়বেন, মন্তব্য করবেন, আতঙ্ক হলে ক্ষমাঘেন্না করে এড়িয়ে যাবেন। - উইভার্স, আর্টিজান, ট্রাডিশনাল পার্ফর্মিং আর্টিস্টস গিল্ডের পক্ষে বিশ্বেন্দু)
বাংলার রপ্তানি বাণিজ্য পলাশির পর জগতশেঠেদের ঋণ নিরপেক্ষ হয়ে গেল
পুর্বপ্রকাশিতের পর...
বড় পুঁজির অন্যতম সহায় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা। ১৭১৭ থেকে ১৭৬৭ পর্যন্ত দিল্লির মুঘল দরবারে জগত শেঠদের দবদবা বজায় ছিল। শোনা যায় ফতেচাঁদের সহায়তায়ই মুর্শিদকুলি সম্রাটের বিষ নজর এড়াতে পেরেছিলেন। তবে মুর্শিদকুলির নাতি সরফরাজের জন্য বা সুজাউদ্দিনের জন্য সরাসরি দিল্লির দরবারে খুব কিছু করেন নি শেঠেরা। কিন্তু ফতেচাঁদের সমর্থন সুজাউদ্দিনের পরোক্ষে কাজে লেগেছিল। ১৭৪০এর লড়াইতে একটু দূর থেকে আলিবর্দির কর্মকাণ্ড দেখেছেন, বাধ্য হয়ে সহায়তাও করেছেন। সরফরাজের হার এবং মৃত্যুর পরই ফতেচাঁদ আলিবর্দিকে ফরমান আনানোর ব্যবস্থা করেন। পলাশি কাণ্ডের আগে সিরাজের আশংকা ছিল শেঠেরা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। মহতাব রাই আর স্বরূপচাঁদের কর্মকাণ্ড বাংলাকে পলাশির চক্রান্তের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।
ফতেচাঁদ ১৭৪০এর লড়াইএর পক্ষ নিয়েছিলেন অবশেষে। ১৭৫৭য় মহতাব রাই আর স্বরূপ চাঁদ পূর্বজর পথ ধরে পলাশি ঘটিয়ে ছাড়লেন। কিন্তু ইতিহাস পুনরাবর্তিত হল না – ক্ষমতার রাশ আর শেঠেদের হাতে রইল না। ১৭৪০এ আলিবর্দির নিজের সেনা বাহিনী ছিল আর ভরসা ছিল সরফরাজের বাহিনীর বিশ্বাসঘাতকতার ওপর। কিন্তু ১৭৫৭য় মির্জাফর ছিল ঠুঁটো জগন্নাথ। সে সরাসরি নির্ভর করেছিল ব্রিটিশদের যুদ্ধ ক্ষমতার ওপর। মির্জাফরের একমাত্র যোগ্যতা ছিল তার যুদ্ধে অযোগ্যতা আর চরম সময়ে বিশ্বাসঘাতকতা। মুর্শিদাবাদে তার ডাকনাম ছিল ক্লাইভের গাধা। ১৭৪০এর বিপ্লব ফতেচাঁদদের যেমন সম্পদের-খ্যাতির চূড়ায় উঠতে সাহায্য করেছিল, তেমনি ১৭৫৭র বিশ্বাসঘাতকতা তাঁদের মাটিতে নামিয়ে এনে সাধারণ নাগরিকে পরিণত করল।
তবে লিটল বলছেন, তাঁরা রাজসভায় ইংরেজদের নানাভাবে সাহায্য করার বিনিময়ে কিন্তু কিছু দাবি করেন নি। উমিচাঁদ বা অন্যান্যদের সম্পদ ক্ষুধার পাশে জগতশেঠেরা দাঁড়াননি – যদিও সিরাজ বা সরফরাজের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অন্যতম অংশিদার ছিলেন শেঠেরা। পলাশি উত্তর মুর্শিদাবাদ লুঠে যেভাবে ক্লাইভ, ওয়াটস, স্ক্যাফ্রন, নবকৃষ্ণ, রামচাঁদ বা অন্যান্যরা যেভাবে খাজাঞ্চি লুঠতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সে কাজে তাঁরা সামিল হননি। কথিত যে সে সময়ে নবাবের খাজাঞ্চিতে ৪০ কোটি টাকা ছিল – নরেন্দ্র কৃষ্ণ বলছেন হয়ত একটু বেশিই ধারণা করা হয়েছিল – তবু এই পরিমান অর্থের আশেপাশে সম্পদ জমা ছিল খাজাঞ্চিখানায়। এই হিসেবে উমিচাঁদের ভাগ ছিল ৫ শতাংশ অর্থাৎ ২০ লক্ষ – আমরা জানি সে তা পায় নি। খাজাঞ্চির ভিতর আর বাইরের অংশ তন্নতন্ন করে লুঠ করা হয়। শেঠেরা এই লুঠের বিরোধিতা করেছিল – তাঁরা চান নি তাঁদের হাতের পুতুল নবাব শূন্য হাতে নবাবি শুরু করুক।
অবস্থা এমন হয় যে পলাশীর পরের দিনের হওয়া এই লুঠ আটকানোর ক্ষমতা তাঁদের ছিল না। নতুন নবাব মির্জাফর নিজেই ক্লাইভের ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল ছিল। সিয়েরুলমুতক্ষরিণের বক্তব্য শেঠেরা ব্রিটিশদের পলাশি চক্রান্ত সফল করার জন্য তিন কোটি টাকা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অঙ্কটা হয়ত একটু বাড়াবাড়ি (তবে কেন বাড়াবাড়ি নরেন্দ্র কৃষ্ণ বলছেন তা বোধগম্য হল না – সিরাজকে সরাতে আর নিজেদের নবাব বসাতে তিন কোটি টাকা ছিল শেঠেদের হাতের ময়লা – বর্গীরা যখন বাংলা লুঠতে এল, তখন শেঠেদের অনুপস্থিতিতে খাজাঞ্চি থেকে ২ কোটি আর্কট মুদ্রা লুঠ করে নিয়ে যায় – কবি বলছেন, এই লুঠ যেন শেঠেদের কাছে গৃহস্থের খড়ের গাদা থেকে দুই আঁটি খড়ের সমান চুরি মনে হল) কিন্তু মনে রাখতে হবে ১৭৪০ এবং ১৭৫৭৮য় শেঠেরা কিন্তু নবাব তৈরি করেছিল। কলকাতা কাউন্সিল ১৭৬০, ১৭৬৩ এবং ১৭৬৫তে নবাব তৈরি করেছিল অর্থ লুঠের জন্য ‘কত লাখ আমাদের দেবেন?’ এই ছিল ব্রিটিশ চিন্তা।
জগত শেঠ মহতাব রাই আর মহারাজা স্বরূপচাঁদ নিজেদের তৈরি বিপ্লবে নিজেরাই ডুবে মরলেন। ইতিহাসে এই ঘটনা আকছার ঘটেছে। পলাশির পর শেঠেদের পতন দ্রুত ঘনিয়ে আসতে থাকে। মির কাসিম, ‘এমন এক শয়তান যে সে সরাসরি শেঠেদের মুখে চপেটাঘাত করে’। মির কাশিম শেঠেদের গ্রেফতার করে মুংগের নিয়ে যায়, বিহারের বাড়ে তাঁদের হত্যা করে এবং তার পরিবারের থেকে আরও অর্থ দাবি করার জন্য কিছু সদস্যকে তার সগে বন্দী করে রাখে।
তবুও বলতে হবে ১৭৫৭র চক্রান্ত এমন এক অবস্থা তৈরি করল, যাতে এই ধরণের কোন হিংসাত্মক ঘটনা না ঘটলেও জগতশেঠেরা তলিয়ে যেতে বাধ্য হতেন। ঘটনাক্রমের ওপর তাঁদের নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছিল। কোম্পানির আমলাদের ব্যক্তিগত ব্যবসা করার জন্য আর অর্থ ধার করতে হল না। শেঠেরা তাঁদের আর্থিক সামর্থে এবং রাজনৈতিক যোগাযোগে যেভাবে পলাশি পূর্ব সময়ে ব্রিটিশদের নানাভাবে সাহায্য করেছেন, তাতে বহু ব্যবসায়ী বাংলায় আসতে চাইতেন না – তাঁদের ধারণা ছিল বাংলায় জগতশেঠদের পালিত পুত্র ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরাই শেষ কথা।
পলাশির চক্রান্তে উদ্ভুত ঘটনায় কোম্পানির ব্যবসা আর শেঠেদের কম সময়ের ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে রইল না। পলাশির পর কোম্পানি আর তার আমলাদের এত অর্থ উদ্বৃত্ত হল যে তাঁরা দেশে ব্যক্তিগত ব্যবসার লাভ নিয়ে যেতে ঘুরপথে ডেন, ডাচ আর ফরাসি কোম্পানির খাজাঞ্চিতে রাখতে শুরু করল, যারা তাঁদের লন্ডনে বিল অব এক্সচেঞ্জ করে টাকা শোধ দিত। ফলে ডেন, ডাচ আর ফরাসি কোম্পানিদেরও আর শেঠেদের কাছে হাত পাততে হল না। মার্ক্স বলছেন এই পুঁজির কোন জন্ম শংসাপত্র ছিল না।
পলাশির চক্রান্তের পর বাংলার রপ্তানি বাণিজ্য জগতশেঠেদের ঋণ নিরপেক্ষ হয়ে গেল।(চলবে)...
ভাল লাগলে পড়বেন, মন্তব্য করবেন, আতঙ্ক হলে ক্ষমাঘেন্না করে এড়িয়ে যাবেন। - উইভার্স, আর্টিজান, ট্রাডিশনাল পার্ফর্মিং আর্টিস্টস গিল্ডের পক্ষে বিশ্বেন্দু)
বাংলার রপ্তানি বাণিজ্য পলাশির পর জগতশেঠেদের ঋণ নিরপেক্ষ হয়ে গেল
পুর্বপ্রকাশিতের পর...
বড় পুঁজির অন্যতম সহায় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা। ১৭১৭ থেকে ১৭৬৭ পর্যন্ত দিল্লির মুঘল দরবারে জগত শেঠদের দবদবা বজায় ছিল। শোনা যায় ফতেচাঁদের সহায়তায়ই মুর্শিদকুলি সম্রাটের বিষ নজর এড়াতে পেরেছিলেন। তবে মুর্শিদকুলির নাতি সরফরাজের জন্য বা সুজাউদ্দিনের জন্য সরাসরি দিল্লির দরবারে খুব কিছু করেন নি শেঠেরা। কিন্তু ফতেচাঁদের সমর্থন সুজাউদ্দিনের পরোক্ষে কাজে লেগেছিল। ১৭৪০এর লড়াইতে একটু দূর থেকে আলিবর্দির কর্মকাণ্ড দেখেছেন, বাধ্য হয়ে সহায়তাও করেছেন। সরফরাজের হার এবং মৃত্যুর পরই ফতেচাঁদ আলিবর্দিকে ফরমান আনানোর ব্যবস্থা করেন। পলাশি কাণ্ডের আগে সিরাজের আশংকা ছিল শেঠেরা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। মহতাব রাই আর স্বরূপচাঁদের কর্মকাণ্ড বাংলাকে পলাশির চক্রান্তের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।
ফতেচাঁদ ১৭৪০এর লড়াইএর পক্ষ নিয়েছিলেন অবশেষে। ১৭৫৭য় মহতাব রাই আর স্বরূপ চাঁদ পূর্বজর পথ ধরে পলাশি ঘটিয়ে ছাড়লেন। কিন্তু ইতিহাস পুনরাবর্তিত হল না – ক্ষমতার রাশ আর শেঠেদের হাতে রইল না। ১৭৪০এ আলিবর্দির নিজের সেনা বাহিনী ছিল আর ভরসা ছিল সরফরাজের বাহিনীর বিশ্বাসঘাতকতার ওপর। কিন্তু ১৭৫৭য় মির্জাফর ছিল ঠুঁটো জগন্নাথ। সে সরাসরি নির্ভর করেছিল ব্রিটিশদের যুদ্ধ ক্ষমতার ওপর। মির্জাফরের একমাত্র যোগ্যতা ছিল তার যুদ্ধে অযোগ্যতা আর চরম সময়ে বিশ্বাসঘাতকতা। মুর্শিদাবাদে তার ডাকনাম ছিল ক্লাইভের গাধা। ১৭৪০এর বিপ্লব ফতেচাঁদদের যেমন সম্পদের-খ্যাতির চূড়ায় উঠতে সাহায্য করেছিল, তেমনি ১৭৫৭র বিশ্বাসঘাতকতা তাঁদের মাটিতে নামিয়ে এনে সাধারণ নাগরিকে পরিণত করল।
তবে লিটল বলছেন, তাঁরা রাজসভায় ইংরেজদের নানাভাবে সাহায্য করার বিনিময়ে কিন্তু কিছু দাবি করেন নি। উমিচাঁদ বা অন্যান্যদের সম্পদ ক্ষুধার পাশে জগতশেঠেরা দাঁড়াননি – যদিও সিরাজ বা সরফরাজের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অন্যতম অংশিদার ছিলেন শেঠেরা। পলাশি উত্তর মুর্শিদাবাদ লুঠে যেভাবে ক্লাইভ, ওয়াটস, স্ক্যাফ্রন, নবকৃষ্ণ, রামচাঁদ বা অন্যান্যরা যেভাবে খাজাঞ্চি লুঠতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সে কাজে তাঁরা সামিল হননি। কথিত যে সে সময়ে নবাবের খাজাঞ্চিতে ৪০ কোটি টাকা ছিল – নরেন্দ্র কৃষ্ণ বলছেন হয়ত একটু বেশিই ধারণা করা হয়েছিল – তবু এই পরিমান অর্থের আশেপাশে সম্পদ জমা ছিল খাজাঞ্চিখানায়। এই হিসেবে উমিচাঁদের ভাগ ছিল ৫ শতাংশ অর্থাৎ ২০ লক্ষ – আমরা জানি সে তা পায় নি। খাজাঞ্চির ভিতর আর বাইরের অংশ তন্নতন্ন করে লুঠ করা হয়। শেঠেরা এই লুঠের বিরোধিতা করেছিল – তাঁরা চান নি তাঁদের হাতের পুতুল নবাব শূন্য হাতে নবাবি শুরু করুক।
অবস্থা এমন হয় যে পলাশীর পরের দিনের হওয়া এই লুঠ আটকানোর ক্ষমতা তাঁদের ছিল না। নতুন নবাব মির্জাফর নিজেই ক্লাইভের ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল ছিল। সিয়েরুলমুতক্ষরিণের বক্তব্য শেঠেরা ব্রিটিশদের পলাশি চক্রান্ত সফল করার জন্য তিন কোটি টাকা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অঙ্কটা হয়ত একটু বাড়াবাড়ি (তবে কেন বাড়াবাড়ি নরেন্দ্র কৃষ্ণ বলছেন তা বোধগম্য হল না – সিরাজকে সরাতে আর নিজেদের নবাব বসাতে তিন কোটি টাকা ছিল শেঠেদের হাতের ময়লা – বর্গীরা যখন বাংলা লুঠতে এল, তখন শেঠেদের অনুপস্থিতিতে খাজাঞ্চি থেকে ২ কোটি আর্কট মুদ্রা লুঠ করে নিয়ে যায় – কবি বলছেন, এই লুঠ যেন শেঠেদের কাছে গৃহস্থের খড়ের গাদা থেকে দুই আঁটি খড়ের সমান চুরি মনে হল) কিন্তু মনে রাখতে হবে ১৭৪০ এবং ১৭৫৭৮য় শেঠেরা কিন্তু নবাব তৈরি করেছিল। কলকাতা কাউন্সিল ১৭৬০, ১৭৬৩ এবং ১৭৬৫তে নবাব তৈরি করেছিল অর্থ লুঠের জন্য ‘কত লাখ আমাদের দেবেন?’ এই ছিল ব্রিটিশ চিন্তা।
জগত শেঠ মহতাব রাই আর মহারাজা স্বরূপচাঁদ নিজেদের তৈরি বিপ্লবে নিজেরাই ডুবে মরলেন। ইতিহাসে এই ঘটনা আকছার ঘটেছে। পলাশির পর শেঠেদের পতন দ্রুত ঘনিয়ে আসতে থাকে। মির কাসিম, ‘এমন এক শয়তান যে সে সরাসরি শেঠেদের মুখে চপেটাঘাত করে’। মির কাশিম শেঠেদের গ্রেফতার করে মুংগের নিয়ে যায়, বিহারের বাড়ে তাঁদের হত্যা করে এবং তার পরিবারের থেকে আরও অর্থ দাবি করার জন্য কিছু সদস্যকে তার সগে বন্দী করে রাখে।
তবুও বলতে হবে ১৭৫৭র চক্রান্ত এমন এক অবস্থা তৈরি করল, যাতে এই ধরণের কোন হিংসাত্মক ঘটনা না ঘটলেও জগতশেঠেরা তলিয়ে যেতে বাধ্য হতেন। ঘটনাক্রমের ওপর তাঁদের নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছিল। কোম্পানির আমলাদের ব্যক্তিগত ব্যবসা করার জন্য আর অর্থ ধার করতে হল না। শেঠেরা তাঁদের আর্থিক সামর্থে এবং রাজনৈতিক যোগাযোগে যেভাবে পলাশি পূর্ব সময়ে ব্রিটিশদের নানাভাবে সাহায্য করেছেন, তাতে বহু ব্যবসায়ী বাংলায় আসতে চাইতেন না – তাঁদের ধারণা ছিল বাংলায় জগতশেঠদের পালিত পুত্র ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরাই শেষ কথা।
পলাশির চক্রান্তে উদ্ভুত ঘটনায় কোম্পানির ব্যবসা আর শেঠেদের কম সময়ের ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে রইল না। পলাশির পর কোম্পানি আর তার আমলাদের এত অর্থ উদ্বৃত্ত হল যে তাঁরা দেশে ব্যক্তিগত ব্যবসার লাভ নিয়ে যেতে ঘুরপথে ডেন, ডাচ আর ফরাসি কোম্পানির খাজাঞ্চিতে রাখতে শুরু করল, যারা তাঁদের লন্ডনে বিল অব এক্সচেঞ্জ করে টাকা শোধ দিত। ফলে ডেন, ডাচ আর ফরাসি কোম্পানিদেরও আর শেঠেদের কাছে হাত পাততে হল না। মার্ক্স বলছেন এই পুঁজির কোন জন্ম শংসাপত্র ছিল না।
পলাশির চক্রান্তের পর বাংলার রপ্তানি বাণিজ্য জগতশেঠেদের ঋণ নিরপেক্ষ হয়ে গেল।(চলবে)...
No comments:
Post a Comment