মুঘল সম্রাটদের সারাদিন
পারস্যের ইতিহাস
সূত্রে আমরা মুঘল সম্রাটের দৈনিন্দিন কাজকর্মের বর্ণনা পাই(স্টাডিজ ইন ঔরঙ্গজেব’স
রেইন দ্রষ্টব্য)।
সকালে উঠে প্রার্থনা
এবং ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সকালের দর্শন দিতেন, তখন হাতি যুদ্ধ বা
সেনাদের কুচকাওয়াজ হত। তার পর জনগণের দর্শনের জন্য দেওয়ানিআম বসত দুঘন্টা ব্যপী।
সে সময় প্রধান বক্সী তাঁর কাছে বিভিন্ন সেনা কর্মচারীর দরখাস্ত এবং সেনাবাহিনীর
নানান অবস্থার সমীক্ষা পেশ করতেন। বিভিন্ন সেনাধ্যক্ষ্যের পদন্নোতি বা নতুন পদে
অভিষেকের নির্দেশ নিতেন সম্রাট। বিভিন্ন সুবা থেকে সেনাধ্যক্ষ্যরা, যারা পদন্নোতি বা নতুন পদ পাওয়ার জন্য সম্রাটের সন্নিধানে
এসেছেন তাদের বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হত। এরপর
সম্রাটের কাছে আসতেন স্বরাষ্ট্রদপ্তরের কর্মীরা(ডিপার্টমেন্ট অব ক্রাউনল্যান্ড অর
দ্য এমপারার্স প্রিভি পার্স)। তাদের দপ্তরের প্রধানদের মার্ফত তাঁরা তাদের আর্থিক
বরাদ্দের দাবিদাওয়া পেশ করতেন।
আর থাকতেন সম্রাটের
কাছাকাছি থাকা সভাসদেরা। তাঁরা বিভিন্ন প্রদেশের শাসক, রাজা এবং অন্যান্য আমলার
বদলি বরখাস্ত বা চাকরির ব্যবস্থা করতেন। এবং তাদের পাঠানো বিভিন্ন উপহার সম্রাটকে
দিতেন। বিভিন্ন প্রান্তপ্রধান বা রাজাদের পাঠানো চিঠিগুলি সম্রাট নিজে পড়তেন।
অন্যান্য নানান তথ্য বা নানান বিষয় তাকে জানানো হত। এই কাজ শেষ হয়ে গেলে প্রধান-সদর,
বিভিন্ন প্রান্ত সদরের পাঠানো নানান বিষয়ের চুম্বক সম্রাটকে জানাতেন। তিনি বিভিন্ন
দরিদ্র বুদ্ধিজীবি, সৈয়দ, শেখ এবং ধর্মীয় গুরুদের নানান চাহিদা সম্রাটকে জানাতেন
এবং তাঁর পক্ষ থেকে তাঁদের হয়ে দান সংগ্রহ করতেন।
পূর্বে পাশ হওয়া
মনসব, জায়গির, অর্থসাহায্য এবং বিভিন্ন আর্থিক বিষয় নতুন করে সম্রাটের সামনে পেশ
করা হত। তাঁর পর সেনাবাহিনীর আস্তাবলের ঘোড়া, হাতি ইত্যাদি সম্রাটের সামনে কুচ
করানো হত। সম্রাট দেখতেন সেগুলি ঠিকঠাক পুষ্ট হচ্ছে, না তাদের বরাদ্দ চুরি হচ্ছে।
জনগনের দর্শন শেষ
হয়ে গেলে, তাঁর খুব কাছের সভাসদদের নিয়ে শুরু করতেন তাঁর ব্যক্তিগত দেওয়ানিখাস
দর্শন। তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় নানান কাজ কর্ম সম্পাদন করতেন। বিভিন্ন
খুব গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় চিঠি, নির্দেশ ইত্যাদি লেখা হত, পড়া হত। সম্রাটের মৌখিক
নির্দেশ শুনে চিঠি বা সমীক্ষার উত্তরে বিভিন্ন ফর্মান লেখা হত। রাষ্ট্রের সব থেকে
গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব আধিকারিক, তাঁর দপ্তর সংক্রান্ত দেশের নানান তথ্য সম্রাটকে
জানাতেন এবং সম্রাটের তৎসংক্রান্ত ইচ্ছা তিনি লিখে নিতেন। Head Almoner(মানে জানতে হবে) বিভিন্ন দান পাওয়া বিখ্যাতদের অবস্থা তাকে
জানাতেন। তারপর বিভিন্ন শিল্পীর তৈরি অলঙ্কার আর প্রাসাদের নানান স্থাপত্যমর্ম
ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করা হত এবং সিদ্ধন্ত নেওয়া হত।
এর পর আরও একটি
গুপ্ত মন্ত্রণা অধিবেশন বসত শাহবুর্জ মিনারে। এই বৈঠকে সাধারণত থাকতেন শুধু উজির,
আর হাতে গোণা কয়েকজন আমন্ত্রিত ব্যক্তি।
বিকেল ৩টার পর
জনগণের জন্য ছোট সময়ের জন্য একবার দর্শনের ব্যবস্থা ছিল, যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ
আলোচনা বাদ পড়ে যেত, তাহলে সে সময় সেটি আলোচনা হত। সভাসদেরা, রাতের প্রহরীরা
সম্রাটকে অভিবাদন জানাতেন সে সময় এন্ড দ্য রয়্যাল স্টান্ডার্ডস(qur) ওয়ার প্রেজেন্টেড।
সন্ধ্যায় মোমের আলো
জ্বালানোর পর দেওয়ানিখাসএ বিভিন্ন গান বাজনার মহফিল বসত। শাহজাহান তাঁর খুব কাছের
সভাসদ বা হাতেগোণা কিছু আমলা, কিছু ভাগ্যবান নিয়ে কম করে এধরণের আনন্দনুষ্ঠানে
দুঘন্টা ব্যয় করতেন – এটা সম্রাটদের ব্যক্তিগত মনোরঞ্জনের জন্য আয়োজিত হত – গান,
বাজনা এবং নৃত্য হত। আওরঙ্গজেব গোঁড়া মুসলমান ছিলেন। তাঁর সময় এধরণের
আনন্দানুষ্ঠান বন্ধ ছিল, হত শুধু দরকারি নানান আলোচনা। রাজস্ব দপ্তরের নানান
কাজকর্ম উজির সম্রাটকে জানাতেন এবং তাঁর নর্দেশনামা নিতেন। অন্যান্য রাষ্ট্রীয়
কাজকর্মও সম্পাদন হত।
এই কর্মচক্র সপ্তাহে
তিনদিন ব্যত্যয় হত। শুক্রবার, ইসলামি ছুটির দিন, বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস ছুটি, আর
বুধবার, বিচার দিবস, কোন জনদর্শন হত না দেওয়ানিখাসে, সেদিন সম্রাট বিচার দিতেন।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment