দ্বিতীয় অধ্যায়
সার্বভৌম এবং দপ্তরের প্রধানেরা
সার্বভৌম এবং দপ্তরের প্রধানেরা
মুঘল সার্বভৌমত্বের আইনি অবস্থা এবং ক্ষমতা
কোরানিয় আইনের তত্ত্ব অনুসারে বিশ্বাসী(আমিরুলমুমনিন)র একমাত্র একনায়কই সার্বভৌম এবং সাধারণ মুসলমানদের(জামাতি) সমস্ত দায় তার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। কিন্তু তাঁর কাজকর্ম বিচার বা নিয়ন্ত্রণ করার কোন সাংবিধানিক ব্যবস্থা(যেমন মানুষের রায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সভা) ছিল না বা এ ধরণের কোন ব্যবস্থা কোন মুসলমান রাষ্ট্রে কোনদিনই ছিল না এবং তাত্ত্বিকভাবেও বিবেচিতও হয় নি। মুসলমান রাষ্ট্র মূলত সেনা নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র, যেখানে সার্বভৌম সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক সম্রাট এবং তিনিই সেনানায়ক। রোম সাম্রাজ্যের প্রধান(ইমপারেটর)এর ক্ষমতা প্রায় একই ধরণের ছিল, কিন্তু রোমের সংবিধান অনুসারে সম্রাটের একনায়কতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে(সে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা যতই বাস্তবে ব্যর্থ হোক) সম্রাটের নানান সিদ্ধান্ত সিনেটের অনুমোদন সাপেক্ষ ছিল এবং জনসাধারণের দ্বারা প্রধান প্রশাসক(চিফ অফিসিয়াল) নির্বাচিত হতেন। কিন্তু ইসলামি রাষ্ট্রে এ ধরণের কোন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ছিল না। যদিও তাত্বিকভাবে তার কাজকর্ম কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হত মুসলমান জন কৌমের যৌথতার ভাবনার দ্বারা এবং প্রজাকৌমের সামাজিক নিন্দাবাচক উক্তির প্রেক্ষিতে।
অবশ্যই সম্রাট কোরাণের নির্দেশ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছেন, এই অভিযোগে ইসলামি তাত্ত্বিকরা(উলেমা) যৌথভাবে সম্রাটকে সিংহাসন চ্যুত করার ফতেয়া জারি করতে পারতেন। কিন্তু একমাত্র সম্রাটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহই ছিল এ ধরণের ফতেয়া জারি করার হাতিয়ার। কোন সাংবিধানিক সংস্থা ছিল না যেটি অহিংস উপায়ে কোন সম্রাটকে সিংহাসন চ্যুত করে অন্য একজনকে বসাতে পারে। বাস্তবে কোন চরমতম অত্যাচারী একনায়ককে সিংহাসন চ্যুত করার একমাত্র হাতিয়ার হল তার থেকে বেশি সেনা বাহিনী নিয়ে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। সাধারণ সেনাবাহিনী কিন্তু উলেমা বা সম্রাটের মন্ত্রীসভার কাছে দায়বদ্ধ নয় সে সম্রাটের কাছে দায়বদ্ধ।
মুঘল সম্রাটের কোন বাধ্যতামূলক মন্ত্রীসভা ছিল না। সম্রাটের একধাপ অধস্তন ছিলেন উজির বা দেওয়ান, কিন্তু অন্যান্য আমলারা তাঁর সহকর্মী গণ্য হতেন না। তাঁরা তার তুলনায় যথেষ্ট নিচুস্তরের গণ্য হতেন, ফলে তাঁদের মন্ত্রী না বলে আমলারূপে গণ্য করা হত। তাদের যে কোন নির্দেশ উজিরই সংশোধন করতেন, এবং উজিরের মার্ফত কোন সরকারি ফর্মান আমলাদের দেওয়া হত।
সাধারণভাবে যখন ব্যক্তিগত স্তরে সভা দেওয়ানিখাস বসাতেন। সে সভায় উজিরের সঙ্গে অন্যান্য উচ্চপদস্থ আমলারাও যোগ দিতেন এবং তাঁরা সম্রাটকে তাঁদের পরামর্শও দিতেন। তবে অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সম্রাট উজিরের সঙ্গে মিলে নিতেন, সে পরামর্শ সভায় অন্যান্য আমলা বা সভাসদের কোন স্থান ছিল না। বলা দরকার আমলা বা সভাসদ তো দূরস্থান, উজিরের পক্ষে সম্রাটের ইচ্ছেতে বাধা দান করা একান্তই অসম্ভব ছিল। তাঁরা পরামর্শ দিতে পারতেন মাত্র, বিরোধিতা করতে পারতেন না। তাঁদের পদের অসীম নিরাপত্তার অভাব আর পদের ওপর অত্যধিক নির্ভরতার জন্য তাঁরা যদি বুঝতেও পারতেন সম্রাট ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাও তাঁদের পক্ষে সেটা সম্রাটকে বলা সম্ভবপর হত না। মুঘল সরকার তাই একনায়কী এবং ঔরঙ্গজেব, তার সময়ে চতুর্দশ লুইএর মত নিজের নিজের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
(চলবে)
কোরানিয় আইনের তত্ত্ব অনুসারে বিশ্বাসী(আমিরুলমুমনিন)র একমাত্র একনায়কই সার্বভৌম এবং সাধারণ মুসলমানদের(জামাতি) সমস্ত দায় তার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। কিন্তু তাঁর কাজকর্ম বিচার বা নিয়ন্ত্রণ করার কোন সাংবিধানিক ব্যবস্থা(যেমন মানুষের রায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সভা) ছিল না বা এ ধরণের কোন ব্যবস্থা কোন মুসলমান রাষ্ট্রে কোনদিনই ছিল না এবং তাত্ত্বিকভাবেও বিবেচিতও হয় নি। মুসলমান রাষ্ট্র মূলত সেনা নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র, যেখানে সার্বভৌম সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক সম্রাট এবং তিনিই সেনানায়ক। রোম সাম্রাজ্যের প্রধান(ইমপারেটর)এর ক্ষমতা প্রায় একই ধরণের ছিল, কিন্তু রোমের সংবিধান অনুসারে সম্রাটের একনায়কতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে(সে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা যতই বাস্তবে ব্যর্থ হোক) সম্রাটের নানান সিদ্ধান্ত সিনেটের অনুমোদন সাপেক্ষ ছিল এবং জনসাধারণের দ্বারা প্রধান প্রশাসক(চিফ অফিসিয়াল) নির্বাচিত হতেন। কিন্তু ইসলামি রাষ্ট্রে এ ধরণের কোন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ছিল না। যদিও তাত্বিকভাবে তার কাজকর্ম কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হত মুসলমান জন কৌমের যৌথতার ভাবনার দ্বারা এবং প্রজাকৌমের সামাজিক নিন্দাবাচক উক্তির প্রেক্ষিতে।
অবশ্যই সম্রাট কোরাণের নির্দেশ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছেন, এই অভিযোগে ইসলামি তাত্ত্বিকরা(উলেমা) যৌথভাবে সম্রাটকে সিংহাসন চ্যুত করার ফতেয়া জারি করতে পারতেন। কিন্তু একমাত্র সম্রাটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহই ছিল এ ধরণের ফতেয়া জারি করার হাতিয়ার। কোন সাংবিধানিক সংস্থা ছিল না যেটি অহিংস উপায়ে কোন সম্রাটকে সিংহাসন চ্যুত করে অন্য একজনকে বসাতে পারে। বাস্তবে কোন চরমতম অত্যাচারী একনায়ককে সিংহাসন চ্যুত করার একমাত্র হাতিয়ার হল তার থেকে বেশি সেনা বাহিনী নিয়ে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। সাধারণ সেনাবাহিনী কিন্তু উলেমা বা সম্রাটের মন্ত্রীসভার কাছে দায়বদ্ধ নয় সে সম্রাটের কাছে দায়বদ্ধ।
মুঘল সম্রাটের কোন বাধ্যতামূলক মন্ত্রীসভা ছিল না। সম্রাটের একধাপ অধস্তন ছিলেন উজির বা দেওয়ান, কিন্তু অন্যান্য আমলারা তাঁর সহকর্মী গণ্য হতেন না। তাঁরা তার তুলনায় যথেষ্ট নিচুস্তরের গণ্য হতেন, ফলে তাঁদের মন্ত্রী না বলে আমলারূপে গণ্য করা হত। তাদের যে কোন নির্দেশ উজিরই সংশোধন করতেন, এবং উজিরের মার্ফত কোন সরকারি ফর্মান আমলাদের দেওয়া হত।
সাধারণভাবে যখন ব্যক্তিগত স্তরে সভা দেওয়ানিখাস বসাতেন। সে সভায় উজিরের সঙ্গে অন্যান্য উচ্চপদস্থ আমলারাও যোগ দিতেন এবং তাঁরা সম্রাটকে তাঁদের পরামর্শও দিতেন। তবে অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সম্রাট উজিরের সঙ্গে মিলে নিতেন, সে পরামর্শ সভায় অন্যান্য আমলা বা সভাসদের কোন স্থান ছিল না। বলা দরকার আমলা বা সভাসদ তো দূরস্থান, উজিরের পক্ষে সম্রাটের ইচ্ছেতে বাধা দান করা একান্তই অসম্ভব ছিল। তাঁরা পরামর্শ দিতে পারতেন মাত্র, বিরোধিতা করতে পারতেন না। তাঁদের পদের অসীম নিরাপত্তার অভাব আর পদের ওপর অত্যধিক নির্ভরতার জন্য তাঁরা যদি বুঝতেও পারতেন সম্রাট ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাও তাঁদের পক্ষে সেটা সম্রাটকে বলা সম্ভবপর হত না। মুঘল সরকার তাই একনায়কী এবং ঔরঙ্গজেব, তার সময়ে চতুর্দশ লুইএর মত নিজের নিজের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment