তৃতীয় অধ্যায়
অর্থ ও ঘরগেরস্তি(হাউসহোল্ড) দপ্তর৬
অর্থ ও ঘরগেরস্তি(হাউসহোল্ড) দপ্তর৬
৩। কয়েকজন প্রখ্যাত
দেওয়ানের কাজকর্মের খতিয়ান
আমরা, মধ্য সপ্তদশ
শতে, কয়েকজন প্রখ্যাত দেওয়ানের কাজ-কর্মের পদ্ধতি জানতে পারি তাঁদের দপ্তরের তথ্য
রাখার নীতিতে চোখ বুলিয়ে। শাহজাহানের সময়ের প্রখ্যাত উজির ছিলেন শাদুল্লা খান।
তিনি যেভাবে কাজ করতেন তাঁর একটা বর্ণনা দেওয়া গেলঃ
প্রাথমিকভাবে দিনের
প্রথমের কাজ হল, তিনি যে সব চিঠি পান, সেগুলি পড়ে উত্তর লেখেন। তারপর তিনি তনখা
দপ্তরের নানান নিবেদন দেখেন, কোনটি গ্রহনযোগ্য। সেগুলি কেন তিনি গ্রহণ করলেন, তাঁর
যুক্তি নির্ধারিত করে, সেগুলির কারণ লিখে, তলায় স্বাক্ষর করে সম্রাটের কাছে পেশ
করেন। পরের কাজ আয়মা দপ্তরের শুল্ক বিহীন জমি বন্টনের আবেদন ঝাড়াই বাছাই করা, এবং
স্বাক্ষর করা। এর পর আমিন দপ্তরের তৈরি সংক্ষিপ্তসার(য়াদদাস্ত) স্বাক্ষর করেন।
তারপর ব্যক্তিগতভাবে কিছু মানুষের আবেদন নিবেদন শোনেন। দপ্তরে যাওয়ার আগে তিনি
যুবরাজ, প্রশাসক এবং অন্যান্য প্রখ্যাতদের পাঠানো প্রতিনিধিদের থেকে তাদের বক্তব্য
শোনেন।
তবে সব কাজ শুরুর
আগে চৌকির(প্রাসাদের চারপাশের থাকা বিভিন্ন প্রখ্যাতদের দেওয়া বিভিন্ন রাতের) রক্ষীর
তালিকা স্বাক্ষর করেন।
তিনি ব্যক্তিগতভাবে
গোপনে রাজকীয় চিঠিগুলি লেখেন। তবে হঠাত জরুরি কোন চিঠি এলে সেটি (বাধ্যহয়েই)
দপ্তরে লেখেন।
আর এক দেওয়ান জাফর
খাঁয়ের কাজের পদ্ধতি হল, প্রথমে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ফার্মান এবং জরুরি চিঠিগুলির
মুসাবিদা করেন। তনখা দপ্তরের পাঠানো নানান নথি, নিবেদন(আর্জি) এবং
নির্দেশ(পরওয়ানা) পড়েন এবং পরীক্ষা করেন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। খালসা দপ্তরের কোনও
নথি থাকলে, বা কোন মাকডি বা এবস্ট্রাক্ট মেমো ইত্যাদি যদি তাঁর সামনে উপস্থিত হয়,
জমা দেয় সেগুলি বিচার বিবেচনা করেন। তাঁর পরে তিনি বাকি কাজে হাত দেন।
৭ এপ্রিল ১৭৫৬ সালে
সাদুল্লা খানের মৃত্যু আর তাঁর উত্তরাধিকারী মীর জুমলার পদারোহনের(৭ জুলাই ১৬৫৬)
মধ্যে এবং ১৬৫৭ সালে রাজা রঘুনাথ দেওয়ানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তাঁর দপ্তরের
কাজ নিম্নলিখিতভাবে সম্পাদন করতেন –
যে সব আবেদন তিনি পেতেন
সেগুলির সারাংশ সর্বাগ্রে তিনি সম্রাটের সম্মুখে তুলে ধরতেন। সরকারি চিঠি(ফরমান)
লেখার পর সেগুলি তিনি সম্রাটকে পড়ার জন্য দিতেন। সেগুলি অনুমোদিত হলে তিনি সেগুলি
নতুন করে লিখতেন। দেওয়ানের সরকারি হুকুমনামাগুলির বিভিন্ন প্রত্যায়িত নকল(এটেস্টেড
কপিজ - তাসদিকাত) মিলিয়ে যে সব সংক্ষিপ্তসার স্মারকলিপি(এবসট্রাক্ট মেমো) তৈরি হত,
তার নিচে তিনি লিখে দিতেন ওয়াকিয়া(ইনকর্পোরেট উইথ রিপোর্ট অব ইভেন্টস)। ওয়াকিয়ার
বিভিন্ন সংক্ষিপ্তসার স্মারকলিপিতে তিনি লিখতেন দ্বিতীয়বারের জন্য মহামহিম
সম্রাটের গোচরে আনা হয়েছিল(আর্জিইমুকাররার – তাঁর অনুমতির জন্য) এবং প্রধান ওয়াকিয়ার
সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হল(এই ওয়াকিয়া পদ্ধতিটি আইনিআকবরিতে বিশদে লিখিত আছে - মহামহিম সম্রাট
চৌদ্দ জন করণিক(ওয়াকিয়ানবিশ) নিযুক্ত করেন। তাঁদের কাজ হল, যে কোন উচ্চপদস্থ
কর্মচারী বা দপ্তরের প্রধান তাঁর কাছে কিছু নিবেদন করবেন, সেই কথাগুলি তাঁরা খাতায়
লিখে রাখবেন... বিভিন্ন মনসবে পদপূরণ, বেতন, জায়গির, মজি বা অর্থ দান, ফর্মান জারি
করা, ...যুদ্ধ...মৃত্যু ইত্যাদি। বিশেষ এক কর্মচারী এই খাতার লেখাগুলি শুদ্ধ করে
দেওয়ার পর তা সম্রাটের সামনে পেশ করা হয় এবং তাঁর সম্মতি নেওয়া হয়। করণিকেরা
প্রত্যেক সমীক্ষার নকল তৈরি করেন, সেগুলি যাদের প্রয়োজন, তাঁদের হাতে তুলে দেন।
এতে স্বাক্ষর করেন সেই কর্মচারী যিনি এই খাতাগুলি সম্রাটের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
এই সমীক্ষার নাম হল য়াদদাস্ত বা মেমোর্যান্ডাম।
এছাড়াও প্রচুর
নকলনবিশ থাকতেন, যারা এই নকল খাতাগুলির সংক্ষিপ্ত সংস্করণ করেন যার নাম হল তালিকা।
এটি স্বাক্ষর করতেন ওয়াকিয়ানবিশ, রিসালাদার, মীরইআর্জ এবং দারোগা। এবারে য়াদদাস্ত
ফেরত না দিয়ে তাঁরা তালিকাগুলি ফেরত দিতেন এবং সেগুলি স্বাক্ষর করতেন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সেটি চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হত।
তাসদিক – প্রত্যায়িত
করা; বিভিন্ন নথি, সরকারি করণিক, আধিকারিকদের হাত বদলের সময় যে পাঞ্জার মত চিহ্ন
দেওয়া হয়।)
No comments:
Post a Comment