চতুর্থ অধ্যায়
সুবাগুলির প্রশাসন
১। আধিকারিকরা
গ্রামের জীবন অপছন্দ করে ফলে গ্রামের স্বার্থে তাঁরা বিরূপ ছিলেন
সুবা’র প্রশাসনিক
কাঠামো মূলিত কেন্দ্রিয় কাঠামোর ক্ষুদ্র প্রতিরূপ। প্রশাসনের প্রধান ছিলেন নাজিম,
মানুষের লব্জে সুবাদার, আর ছিলেন দেওয়ান, বক্সী, কাজি, সদর, বুয়ুতাত এবং একজন নীতিবাগীশ,
কিন্তু কোন খানইসামান পদ ছিল না। (জেলার বক্সীরা সাধারণত দপ্তরে না কাটিয়ে
সুবাদারদের সঙ্গে জুড়ে থাকতেন।?)
সুবার সদরে
প্রশাসনের মূল কেন্দ্র ছিল। গ্রিক ভাষ্যে যেভাবে আমরা শহুরে সরকারের নিদর্শন পাই
সেটি ঠিক সে ধরণের প্রশাসন নয়, এটি একটি প্রশাসন যেটি শহরে থাকে এবং শহর এবং তার
আশেপাশের বসবাসকারী অধিবাসীদের বিষয়ে বেশি চিন্তিত ছিল। মুঘলেরা শিকার করতে।
বাগানে বেড়াতে এবং মাঝে মাঝে দূরে যেতে ভাল বাসলেও – আদতে কিন্তু তাঁরা অনপনেয় নাগরিক
ঘরানার মানুষ ছিল – তাঁদের দেখাদেখি তাঁদের সভাসদ, আধিকারিক এবং সাধারণভাবে বললে
মুসলমান সমাজের মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তরা সকলেই নগরের অধিবাসী ছিলেন। গ্রাম
সাধারণভাবে অবজ্ঞার বস্তু ছিল, এবং গ্রামজীবনকে শাস্তি হিসেবে ধরে নেওয়া হত।
অথচ গ্রাম থেকে
তাঁদের খাদ্য আসত; সেটাই হয়ত তাঁদের গ্রামের সঙ্গে শেষ যোগাযোগ-সূত্র। রোমে
সম্রাটের পাশে বসে যেভাবে কবিরা গ্রামকে দেখতেন, প্রায় সেই তত্ত্বেই মুঘল কবি,
অভিজাতরা প্রভাবিত ছিলেন। এ সংক্রান্ত একটা পার্সি কবিতা শোনা যাকঃ জঘ দুম সুইশহর
ওয়া সর সুইদেহ/দুমইআন জঘ আঝ সরইয়ু বেহ। যার অর্থ – বায়সের লেজ শহরের পানে, মাথা
গ্রামের দিকে/সত্যিকারের লেজ মাথার থেকে উত্তরম।(হামিদুদ্দিনের আহকমইয়ালামগিরি
থেকে – অনুবাদ গ্রন্থকারের)
সুবার প্রশাসন
গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত ১) ফৌদারদের মাধ্যমে, যদিও সে প্রায়শই শহরে অতিবাহিত
করত, ২) প্রশাসনের নিচের দিককার আধিকারিকেরা রাজস্ব আদায় করার জন্য গ্রামে থাকতেন,
৩) সুবাদারদের সভায় মাঝেমধ্যে জমিদারদের আসার মাধ্যমে, ৪) সুবাদার যদি কোন দিন
গ্রামে যেতেন। এবং স্বাভাবিকভাবেই গ্রামের সঙ্গে এই যোগাযোগ খুব যে কিছু ঘনিষ্ঠ তা
বলা যাবেই না, এবং প্রথম অধ্যায়ে আমি যা বলেছি, তা নতুন করে এখানে বলি, গ্রামকে নিজের
মত করে বিকাশ হতে দেওয়া হয়েছিল, এবং যতদিন তাঁরা অবিচ্ছিন্নভাবে সাম্রাজ্যকে কর
দিয়ে গিয়েছে, ততদিন শহরের আধিকারিকরা কেউ গ্রামের দিকে মুখ ঘুরিয়েও তাকান নি।
No comments:
Post a Comment