গত ২ আগস্ট, ২০১৩, জয়া মিত্র এবং আমি
উত্তরপাড়ার টাউন স্কুলে, ৪৪ বছরের নাটকের দল, ইউনিট থিয়েটারের এক অনুষ্ঠানে যোগ
দিতে গিয়েছিলাম। বাংলার অন্য অঞ্চলেরমত উত্তরপাড়ায় পাহাড়ের
বহু ওপরের অংশে, দল বেঁধে ঘুরতে যাওয়ার কয়েকজন মানুষ রয়েছেন। উত্তরাখণ্ডের যে ঘটনাটি ঘটল কয়েক মাস আগে, সেই সময় তাঁরা গিয়েছিলেন সেই অঞ্চলে। সেই বিপর্যয়ের মধ্যে সেই মানুষগুলো পড়েন। কিন্তু কোনও
প্রাণহানি ঘটেনি। উত্তরকাশিতে সেই দুর্ঘটনা কেন ঘটল, সেই কারন জানার জন্য ইউনিট
থিয়েটার এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। পাঠশালার বড় একটি ঘরে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়। বিদ্যালয়টি বেশ বড়। মেয়েদের শিক্ষার জন্য
নিবেদিতপ্রাণ। বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো যথেষ্ট ভাল।
অনুষ্ঠানে প্রথমে অনীক চট্টোপাধ্যায়, পেছনের
দেওয়ালে ঝোলানো লেখার কালো কাঠে যাত্রাপথ এঁকে, তাদের উত্তরকাশীর দুরবস্থার বর্ণনা
দেন। পরে কৃষি
বিজ্ঞানী বিজয় চৌধুরী বলতে উঠে প্রশ্ন তোলেন, বিপর্যয় কাকে বলব। বললেন হিমালয় খুব নতুন এক পর্বত
শ্রেণী। তার ভাঙাগড়া চলছে। এবং চাষে নানান দূষণ এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সবাইকে
খাওয়াতে পারার ক্ষমতা নিয়েও নিজের মত প্রকাশ করেন। শেষে প্রায় সাতটার দিকে বলতে ওঠেন জয়াদি।
বলেন, তিনি আজ যা বলবেন সবই মাঠেঘাটে শেখা। মাঠেঘাটের মানুষেরাই আমার মাস্টারমশাই।
এক জায়গায় যা দেখেছি, সেই কথাই আমি অন্য জায়গায় বলি। অনেকটা কাকের মত। তিনি
বক্তব্যের মূল বিষয় শুরু করলেন একটি প্রশ্ন দিয়ে, কাকে বিপর্যয় বলব। একে প্রকৃতির খামখেয়াল, দুর্যোগ, ইত্যাদি নানান নামে ডাকা হচ্ছে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? সম্ভবতঃ
উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়, হয়ত বিশ্বের সবথেকে বড় অ্যাকসিডেন্ট। এক যায়গায় এত মানুষ,
এত প্রাণী হয়ত এর আগে একসঙ্গে মারা যান নি। যেভাবে ধস নেমেছে, তা এর আগেও দেখা যায়
নি। তাই বহু মানুষ জানতে চাইছেন কেন এমন ঘটল? একে শুধুই দুর্যোগ বললে সত্যের অপলাপ
হবে। এটি প্রকৃতির খামখেয়াল নয়। এর আগেও এধরনের ছোট ছোট ঘটনা এখানে ঘটেছে।
উত্তরকাশীতেই পর পর কয়েক বছর নানান ঘটনা ঘটে গিয়েছে। ভারতের অন্যত্র হিমালয় সংলগ্ন
অঞ্চলেও নানান ঘটনা ক্রমাগত ঘটে চলেছে। আমরা সেগুলো কিছুদিনের মধ্যে ভুলে গিয়েছি।
আর এখন কোনও ঘটনায় খুব বেশি প্রাণহানি না ঘটলে বোধহয় সেদিকে খুব একটা নজর পড়ে না।
আর প্রচুর প্রাণহানি হলেও সাবধান হইনা। ২০০০এর বাংলার বন্যা তার বড় উদাহরণ। তার
ব্যাপকতা আমরা সকলে ভুলেছি। বাড়ির ছাদ সমাজ জল উঠেছিল। কত মানুষ পশু মরেছিল তার
লেখাজোখা নেই। অথচ সে বন্যা কেন হল, কিভাবে হল, কি ক্ষতি হল তা নিয়ে খুব একটা কাজ
হয় নি। অথচ কোশীর বন্যার পরে বিহারের একদল মানুষ, কোন কোন নদিতে কেন বন্যা হল,
কিভাবে হল, কি কি ক্ষতি হল তা নিয়ে নয় খণ্ডের বিশদে বই লিখেছেন। বাংলা নিয়ে সে কাজ
কিন্তু আমরা করতে পারিনি। এই উদাসীনতা কেন?
No comments:
Post a Comment