খনিজ দ্রব্য পরিষ্কার এবং তার প্রক্রিয়াকরণ
খণিজ দ্রব্যএর এনজিনিয়ারিং। খনিজকে খনি থেকে তোলার পরে,
ব্যবহার্য করার জন্য ভৌত ও রাসায়নিক নানান প্রক্রিয়ায় আলাদা করার পদ্ধতি। ররস তার
গ্লসারিতে তার পুর্বের অন্য এক সঙ্কলক, সোমদেব বর্ণিত খনিজকে গুঁড়ো করার নানান ধরণের,
বিভিন্ন মাপের যন্ত্রের বর্ননা দিছেন যেমন ক্রাসার(কাঁদানি), গ্রাইন্ডার(পেসানি,
মরদানি, ঘর্ষণি), মরটার(খালভ khalva), বাঁশের,
ধাতুর এবং কাপড়ের তন্তু দিয়ে, মোটা চুলের দিয়ে তৈরি নানান প্রকারের সিভস (চালনি)
এবং লোহার তপ্ত মরটার (আয়স তপ্ত খালভ) যার হাজারো ছোট্ট ছোট্ট ফুটো সবথেকে ছোট
ধাতুর অংশকে ছেঁকে নিতে পারে। ধান বা তণ্ডুল শস্য ঝাড়ার পর যে ভাবে কুলোর বাতাস
দিয়ে বাকি খড় আলাদা করা হয়, সেই ভাবে হাওয়া চালিয়ে, পৃথিবীর গ্রাভিটেসনাল ধর্ম
ব্যবহার করে নানান পরিমানের গুঁড়ো নানাভাবে উড়িয়ে আলাদা করা হত(একে বলা হচ্ছে সুরপ
surpa)। জল দিয়েও ধুয়ে আলাদা করার পদ্ধতিও জানা ছিল(ধৌতি,
স্খলন)। স্খলন আবার কখনো অ্যালকালি বা ক্ষার এবং অ্যাসিড বা কাঞ্জিকা বা আমলা দ্রব
দিয়ে পরিষ্কার করা বোঝাত।
শয়ে শয়ে বছর ধরে ভারতে ধাতু এঞ্জিনিয়ারিঙ্গের কাজ হয়ে
আসছে। কার্বন পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, রাজস্থানের দারিবা খনিতে ৬৪ মিটার গভীরে ৩৬০
খ্রীস্টপুর্বাব্দেও খনি থেকে খনিজ তোলার কাজ করা হত। আম্বমন্তরের কপার, লেড এবং
দস্তা খনির মাথায়, খনি থেকে খনিজ তোলার জন্য তৈরি মাচার কাঠ পরীক্ষা করে দেখা
গিয়েছে সেই খনিটি দ্বিতীয় খ্রীস্টপুর্বাব্দেও জীবিত ছিল। ঝাওার দস্তা খনির কার্বণ
পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে সেটিও দ্বিতীয় খ্রীস্টপুর্বাব্দেও চালু ছিল।
অন্ধ্র প্রদেশের গুন্টুর জেলার আগ্নিগুন্ডালায় ৩ কিমি
ব্যাপী এবং ৩০ মিটার গভীরের যে তামার খনি এবং কর্মশালা উদ্ধার হয়েছে তার সময় ধরা
হয়েছে ১০০০ খ্রিস্টাব্দ। তিন কিমিজোড়া সমগ্র এলাকায় গভীর খাদান থেকে খনিজ উদ্ধার
করা, তাকে ভেঙে গুঁড়ো করা এবং তার পর তাকে গলানো হত। ফলে এলাকাজুড়ে পাওয়া যাচ্ছে
পাথরের ঢিবি, খনিজের ঢিবি, খনিজ পদার্থ গুঁড়ো করার পাথরের ঢিবি, ধোয়ার জন্য
চৌবাচ্চা, বাতিল নানান বর্জ্য পদার্থের ঢিবি, গলানো চুল্লি, ধাতু গলার পর বেরনো
বর্জ্যের ঢিবি, লোহা-কার্বন সংকরের ঢিবি ইত্যাদির চোখে দেখা প্রামান্য ইতিহাস।
খনিজ এবং অন্যান্য দ্রব্যের রাসায়নিক
প্রক্রিয়াকরণের(তোলা খনিজ থেকে ছেঁকে ধাতু বার করার প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে) নানান
ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু প্রত্নতাত্বিক এলাকা থেকে তার কোনও বিশদ প্রক্রিয়ার কথা জানা
যাচ্ছে না। গুজরাতের ধাতোয়া এলাকা খুঁড়ে ল্যাটেরাইট চেঁছে লিমোনাইট বের করে তা
গলানোর আগে শুকিয়ে হেমাটাইট করে নেওয়া হত। ররস বলছে, টরমালাইন এবং অন্য রত্ন থেকে
ইম্পিউরিটিজ় বের করার জন্য জলে অ্যালকালি, অ্যাসিড এবং নুন গুলে ধুয়ে নিতে হয় এবং
দস্তার গুঁড়ো থেকে কারবোনেট বের করার জন্য হাল্কা অ্যাসিড প্রয়োগ করতে হবে, গন্ধক
পরিস্কারের জন্য দুধে ফুটিয়ে তারপর জলে ধুয়ে নিতে হবে। ব্রাস থেকে কপার নিষ্কাশনের
জন্য দস্তাকে হাল্কা অ্যাসিডে চুবিয়ে রাখতে হয়। এধরনের আরও নানান প্রক্রিয়াকে
স্বেদনা বলা হয়েছে।
গলানো ধাতুকে পরিস্কারের জন্য স্কাম থেকে গরম হাওয়া বইয়ে
দিয়ে দিয়ে মিশ্রিত বস্তুগুলিকে অক্সিডাইজ়িং করতে হয় এবং এই পদ্ধিতিকে তাড়না বলা
হয়। ব্রোঞ্জ(কাংস্য বা ঘোষ) থেকে কপার উদ্ধারের পদ্ধতি হল বাঁকা নলের মধ্যে হাওয়া
বইয়ে দিয়ে(তাডনা), সেই হাওয়ায় আর্সেনিক কম্পাউন্ড (তালক) চালনা করে টিনকে আলাদা
করে বের করে নেওয়া হয়। এবারে যে ধাতুটি উদ্ধার হল তার বিশেষ নাম হল ঘোষক্রস্ট
তাম্র।
এছাড়াও ররসতে কেঁচোর পেট থেকে ধাতু উদ্ধারেরও বর্ণনা
দেওয়া হয়েছে।
লোহা, এলুমিনিয়াম এবং তামা প্রকৃতিতে থাকতে থাকতে
ক্ষুদ্র জীবাণুর সংস্পর্শে এসে সালফেট চূর্ণে পরিণত হয়। এই সালফেটগুলোকে লিচিং
করে, তারপর পাতন পদ্ধতিতে ছেঁকে তাকে বাষ্পীকরণ করলে পড়ে থাকে ক্রিস্টাল
এ্যালাম(তুভারি), ফেরাস সালফেট(কাসিস) বা কপার সালফেট। ররস বলছে কিভাবে কপার
সালফেটকে(মায়ুরকান্ত নীল সস্যক) রিডাকসন করে কোসিনেলা(লেডিবার্ডেরমত) ধরণের লাল
কপার(ইন্দ্র গোপকৃতি) পাওয়া যায়।
No comments:
Post a Comment