ঊজ় ইস্পাতঃ চতুর্থ শতেই অপুর্ব গুণমানের ভারতের ইস্পাত
নিয়ে বিশ্বে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। চতুর্থ শতে পারস্যের সম্রাটের সভায় টেসিআস(Ktesias), পঞ্চম শতে সেই রাজ সভায় ছিলেন। তিনি বলছেন পারস্যের
সম্রাট তাকে ভারতীয় ইস্পাতের দুটি তারোয়াল উপঢৌকন দিয়ে ছিলেন। চতুর্থ শতে, অশোকের
বহু লিপি সুত্রে এক বিশেষ ধরণের ধারযুক্ত এবং সুন্দর দেখতে ইস্পাতের হাতিয়ারের
বর্ননা পাচ্ছি। কুইন্টাস কারসিয়াস বলছেন পুরু রাজকে পরাজিত করার পর(৩২৬
খ্রিস্টপুর্বাব্দ) ১০০ ট্যালেন্ট বা ৩০ পাউন্ডের ইস্পাত উপহার পেয়েছিলেন।
আজ বলা সম্ভব নয়, কখন এবং কিভাবে ভারতে ঊজ় ইস্পাতের
আবির্ভাব হল। এটি একসঙ্গে মহীশুর, সালেম এবং হায়দ্রাবাদে তৈরি হত। দামাস্কাসের
নানান হাতিয়ার তৈরির জন্য ভারত থেকে ঊজ় ইস্পাতের মণ্ড রপ্তানি হত আরব
রাষ্ট্রগুলিতে। এটি যেমন কঠিন এবং দৃঢ
ছিল তেমনি সহজে প্রসারিতও হত। বিশ্বে দামাস্কাস তরোয়াল তার ওপরে তৈরি আল্পনার
সৌন্দর্য, দৃঢতা, কাঠিন্য,
ধারের জন্য বিষের প্রখ্যাত ছিল।
র ফ ট্যাইলিকোট, আ হিস্টোরি অফ মেটালার্জি, ১৯৭৬,তে
ভারতের ধাতুতে কার্বন সংকরের বিবর্তন বিষয়ে বলছেন ক্রুসিব্লে লোহা গলানোর সময়
১-১.৬% কার্বন(খুবই বেশী) সংকর নিয়ে বেশী পরিমাণ কার্বনওয়ালা ইস্পাত সিমেন্টেসান
পদ্ধতিতে তৈরি হত। তার বিশ্বাস এই ইস্পাত মধ্যযুগে এসে ঊজ় নামে পরিচিত হল। এটি
পরে দামাস্কাস ইস্পাত নামে পরিচিত হল কেননা এটি ততদিনে ভারত থেকে পশ্চিম এশিয়া এবং
তারও পরে পশ্চিমের দেশগুলোতে রপ্তানি হাওয়া শুরু হয়েছে।
ঊজ় ইস্পাত তৈরির পদ্ধতিটি আজকের ধাতুবিদ্যায় যেটি ক্রুসিব্ল
বা সিমেন্টেসন পদ্ধতি নামে পরিচিত। পদ্ধিতিটি একটু বেয়াড়া ধরণের। ক্রুসিব্লের
মধ্যে প্রবেশ করিয়ে যে লোহায় কার্বন জোড়ার কাজ হয়, সেই কার্বনের সুত্র হল কাঠ; তাই
ঊজ় স্টিলে দামাস্কাস আলপনা তৈরি হত। প্রথমে সরাসরি আকরিক পুড়িয়ে পেটাই লোহা তৈরি
হত। এরপর পেটানো লোহাকে ঊজ়ে পরিণত করতে ক্রুসিব্লের মধ্যে সেটির সঙ্গে কাঠের
টুকরো, লতা পাতা, ডাল পালা ইত্যাদি ঢুকিয়ে সেঁটে দিয়ে দিয়ে কাঠকয়লার ওপর বড় বড় হাপরের মাধ্যমে হাওয়া
দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে পোড়ানো হত। এই ঘটনাটি
ঘটত ৪-৫ ঘণ্টা ধরে। এর পরে বার বার তাপিত করতে হত যাতে অতিরিক্ত কার্বন পুড়ে যেত। কখনও এর ওপর ঠাণ্ডা জল ঢালা হত। অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে
এবং উনবিংশ শতের শুরুতে ভারতের কয়েকটি
যারগায় ঊজ় তৈরি হত। প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বলছেন, এর থেকে প্রমাণ হয় ভারতের
ক্রুসিব্ল স্টিল খ্রিস্ট জন্মের অনেক আগে থেকেই ভারতে তৈরি হত।
অন্যদিকে ব্রনসন বলছেন ঊজ় ইস্পাত তৈরি করেছে কোনও একটি
আরব দেশ, কেননা ভারতে ঊজ় ইস্পাত তৈরির ধাতুভৌগোলিক উদাহরণ তিনি পাচ্ছেন না। তিনি মনে করেন না, যে ধরণের গুনমানে সেদিনের
স্টিল তৈরি হত সেটি অষ্টাদশ বা উনবিংশ শতের প্রযুক্তিতে করা যেত। তিনি বলছেন, এখনও
পর্যন্ত কারবুরাইজ়ড, বা পাইল ওয়েল্ডিং, বা কেস হার্ডেনিং প্রযুক্তিতে তৈরি করা
লোহার দ্রব্য প্রত্নতাত্বিক ক্ষেত্র থেকে পাওয়া যায় নি। শেষ সহস্রাব্দের আগে ভারতে
ক্রুসিব্ল ইস্পাত তৈরিই হত না। এবং এই সময়ে ক্রুসিব্ল ইস্পাত ভারতে ব্যবহার হত,
এমন কোনও তথ্যও পাওয়া যায় নি। প্রকাশ এই তত্বের সরাসরি বিরোধিতা করছেন। তিনি
উদাহরণ দিয়েছেন ভারতের চিকিতসাস্ত্রের সংকলক চরকের(৭০০ খ্রিস্টপুর্বাব্দ)। তিনি ২০
ধরণের শল্য চিকিৎসার যন্ত্রপাতির বর্ননা দিছেন, এবং প্রত্যেকটির কার্বুপারজেসন এবং
দাঢ্য ধর্ম জোড়ার জন্য কি কি পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে তা বর্ননা করেছেন। তিনি
রস-রত্ন-সমুচ্চয়ের উদাহরণ দিয়ে বলছেন। সেখানে ক্রুসিব্লএর বর্ননা এবং সেটি কি
ভাবে তৈরি করতে হবে তার উল্লেখ করেছে। একই সঙ্গে প্রকাশ স্বীকার করছেন, এখনও
পর্যন্ত ভারতে প্রাচীন ক্রুসিব্ল ইস্পাতের একটিরও উদাহরণ পাওয়া যায় নি, এবং এর
এখনও কোনও লিখিত বর্ননাও নেই। হেগড়েও বলছেন এখনও পর্যন্ত ভারতের কোনও
প্রত্নতাত্বিক উতখননে হোমোজিনিয়াস ইস্পাতেরও উদাহরণ মেলে নি। ব্রনসন বলছেন
ক্রুসিব্ল ইস্পাত তৈরির শুরুটি ভারতে হয়েছিল, কিন্তু সাহিত্যিক তথ্য বলছে সেটি
ভারত থেকে আরবে এবং পারস্যে চলে গিয়েছিল।
�� V � � ��' ( $ �ত্যধিক কার্বুরাইজ় করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment