পশ্চিমি ব্যবসা অথবা উত্পাদন
প্রক্রিয়ার একটা বড় প্রক্রিয়াই হল ব্যবসা অথবা উত্পাদনের একচেটিয়াকরণ, আজকের
ব্যবসার ভাষায় কনসোলিডেশন। আজ ভারতীয় বড় ব্যবসায়ীরা
দার্শণিকভাবে সেই দর্শণএর অংশিদার। কিন্তু তৃণমূলস্তরের ব্যবসায়ীরা
তাঁদের পালক সমাজের চিরাচরিত সামাজিক রীতিনীতি মান্যকরেই সামাজিক বিকেন্দ্রিক পণ্য
উত্পাদকদেরমতই কোনও ব্যবসাকেই একজন অথবা
এক ব্যক্তির একচেটিয়া ব্যবসারূপে প্রতিভাত করার চেষ্টা করেন নি কোনও দিনই। ব্যবসায়
অথবা উত্পাদনে ব্যক্তিগত দখলদারি ছিল সমাজেরকাছে ঘৃণ্য দর্শণ। চিরাচরিত
সমাজে তাই ব্যবসাজাত মুনাফা একহাতে না রেখে বেঁটে দিয়েছে সমাজের নানান স্তরে।
তৃণমূলস্তরের ব্যবসার অন্যতম
বড় দর্শণ, সাম্যবোধেরভাব। পশ্চিমি জ্ঞাণ আর শিক্ষাচর্চার
দর্শণ অনুসরণ করে ছোট ব্যবসায়ীদের বড় ব্যবসায়ী হয়ে ওঠাকে এতদিন পর্যন্ত সামাজিক
প্রগতির অন্যতম সহায়করূপে ভেবে নেওয়া হয়েছে, এবং এই প্রক্রিয়াকে সহর্ষে সমর্থনও
করা হয়ছে মধ্যবিত্তপোষিত নানান গবেষণা উদ্যমে, এমনকী বামপন্থী রাজনৈতিক আঙিনাতেও। লেখকদের
দৃঢ় বিশ্বাস, চোখের সামনে থেকেও সহজে দেখতে না পাওয়া, এই তৃণমূলস্তরের
ব্যবসায়ীদের বড় ব্যবসায়ী না হয়ে ওঠার দর্শণএর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এদের প্রতি
শাসক মধ্যবিত্তিয় অবহেলার প্রতিক্রিয়া। মধ্যবিত্তের গবেষণায় তাই এতদিনই
উজ্জ্বলসম বড় ব্যবসার প্রক্রিয়াই নজরে এসেছে। সে তথ্য
জেগাড় করাও তুলনামূলকভাবে সহজ। পশ্চিমের বিদ্যাচর্চা বড়ব্যবসার
গুণগ্রাহী। তাদের পাতে সহজে সে তথ্য পরিবেশন করলে প্রচারলাভ ঘটে। তবুও
অনেকসময় মনে হয় আবার নতুনভাবে নতুন দর্শণে পুরোনো ভারতীয় সাম্যভাবী ব্যবসার,
উত্পাদনের নীতিতে কী ফিরে যেতে পারি না। পারিনা যদি সিদ্ধান্তও হয়, তাহলে কী
তৃণমূলস্তরের উত্পাজন এবং ব্যবসার উদ্যমের এই আলোচনাও কী ব্রাত্য থেকে যাবে!
তৃণমূলস্তরের ব্যবসার
মূলগ্রন্থিটি ছিন্ন হয়ে যায়, রাষ্ট্রভিত্তিক ইংরেজ শাসন, দেশের পারম্পরিক উত্পাদন
আর ব্যবসার পরিকাঠামোকে ধংস করে দেওয়ার পর থেকেই। হাজার
হাজার বছর ধরে বিকশিত বাঙলার পারম্পরিক সামাজের রীতিনীতিগুলি ছিন্ন করে ব্রিটেনে
বিকশিত কেন্দ্রিভূত নেশনরাষ্ট্রভিত্তিক দর্শণএর গোড়াপত্তন করা হয় এদেশে। বিকশিত
ভারতীয় সমাজের নানান রূপরসগন্ধও একইসঙ্গে বিলীন হয়ে যেত শুরু করে এই উত্পাদন আর
ব্যবসার ব্যবস্থা ধংসের মধ্যে দিয়ে। এর আগেই আমরা বলেছি, পথ ব্যবসায়ী
অথবা তৃণমূলস্তরের ব্যবসায়ীরা এই দেশজ উত্পাদকেদের সঙ্গে সরাসরি আষ্টেপৃষ্ঠে
জড়িয়েছিলেন। তাই দেশজ উত্পাদকেদের পরিকাঠামো জ্ঞাণভান্ডার ধংসের
সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলস্তরের ব্যবসায়ীদের অবস্থাও আর্থিক ও সামাজিকভাবে নিম্নাভিমুখী
হয়ে পড়ে। তবুও তৃণমূলস্তরের পথ ব্যবসায়ীদের তৈরি পরিকাঠামোর মজা
হল, এরা গায়েগতরে খেটে, তৃণমূলস্তরে দাঁড়িয়ে থেকে যে বাজারটি তৈরি করেছেন দার্ঘ
দিন ধরে, সেই বাজারে সহজে অন্য এককেন্দ্রিক ব্যবসায়ীর দখলি প্রবেশ খুব সহজে হয় না। এঁদের
ক্রেতা যেহেতু মূলতঃ ছোট গৃহস্থ এবং এক্কেবারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, তাই
ক্রেতা-বিক্রেতার সরাসরি ব্যক্তিগত সম্পর্কও তৈরি হয়ে পড়ে খুব সহজেই। ভারতীয়
তৃণমূলস্তরের ব্যবসার রীতিনীতি মেনে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে কিন্তু সম্পর্কটুকু। এই সম্পর্ক
দিয়ে তৈরি হয় মানবিকতা।
No comments:
Post a Comment