বৈদিক কাল থেকে ভারতের ধাতুবিদ্যা বিশ্বে
প্রখ্যাত। ঋগ্বেদে লোহা বা অয়স তৈরির কথা বহুবার আলোচিত হয়েছে। প্রাচীনকালের নানান
কাজে লোহার ব্যবহারে, বিশেষকরে, স্থাপত্যবিদ্যায় যেমন, দিল্লি এবং ধরের লোহা
স্তম্ভ, কোনার্কের মন্দিরে ব্যবহৃত লোহার বিম(স্তম্ভ)গুলি, তাঞ্জোরের লোহার কামান,
এছাড়াও দামাস্কাস হাতিয়ার তৈরির জন্য ঊজ় বা নির্মল ইস্পাত তৈরির উদ্যম এখন সারা
বিশ্ব জানে। এ সমস্ত দ্রব্যের শৈলী এবং নির্মাণ প্রযুক্তি ভারতের গর্বিত ধাতু
ইতিহাসের গৌরব বাখান করে। ১৮৮১র ইকনমিক জিওগ্রাফিতে ভ বল বলছেন, ভারতের
প্রযুক্তিবিদদের দক্ষতায়, কয়েক হাজার বছর আগে, আকরিক লোহা ক্রুসিব্লে গলিয়ে
নির্মল বা ঊজ় ইস্পাত তৈরির উদ্যম সারা বিশ্ব জানত। সে ঘটনা ২০০০ বছরের প্রাচীন।
ব্রিটিশ শাসনে ভারতের ধাতুবিদ্যা নিয়ে বিশদে সমীক্ষা করেছেন হল্যান্ড (ইম্পিরিয়াল
ইন্ডিয়া হ্যান্ডবুক অব কমারসিয়াল প্রোডাক্ট, ১৮৮১), ভয়সি(জার্নাল অব এশিয়াটিক
সোসাইটি অব বেঙ্গল, ১৯৩২), ভেরিয়ার(দ্য আগারিয়া – হাম্ফ্রে মিলফারড), হ্যাডফিল্ড(সিংহলি
আয়রন অ্যান্ড স্টিল অফ এন্সিয়েন্ট অরিজিন, ১৯১২) এবং আরও অনেকে। ভেরিয়ার এলুইন
মধ্যপ্রদেশ এবং সন্নিহিত এলাকা সমীক্ষা করে আগারিয়া সমাজের লোহা তৈরির পদ্ধতির
বর্ননা করেছেন অভুতপুর্ব্ব বিশদ বিবরণে। ম স কৃষ্ণন(আয়রন ওরস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান আসোসিয়েসন অব
কাল্টিভেসন অব সায়েন্স, ১৯৫৫) বিশদে ভারতের প্রাচীন কালের লোহা তৈরির বর্ণনা
লিপিবদ্ধ করেছেন। ম ঘোষের নেতৃত্বে একটি দল, টিস্কো, ১৯৬৩র এক অপ্রকাশিত প্রবন্ধে,
য়্যন্টিক আয়রন অব ইন্ডিয়ায় পুর্ব-ভারতের বিভিন্ন আদিবাসী অঞ্চলে লোহা তৈরির
স্থানগুলোর সমীক্ষা করে লোহা তৈরির প্রক্রিয়াগুলো নথিকরণ বর্ননা করেছেন। তাঁরা
কোরাপুটের জিরাগোড়া আর চিগলাবেচা এবং বিহারের যোদার কামারযোদার চুল্লিগুলো বিশদে
সমীক্ষা করেন। এই দলটি সংশ্লিষ্ট আদিবাসী প্রযুক্তিবিদদের দিয়ে নতুন করে চুল্লি
তৈরি করিয়ে তা দিয়ে লোহা তৈরি করানোর পদ্ধতি সরজমিনে দেখেছেন। সেই বর্ণনা নথিভুক্ত
হয়েছে এবং প্রকাশিতও হয়েছে। কামারযোদার কলাকুশলীদের তাদের চুল্লিটির কর্মক্ষমতার
প্রদর্শনী করতে বলা হয় জামশেদপুরের ন্যাশনাল মেটালার্জিক্যাল ল্যাবরেটরিতে। এই
সমগ্র প্রদর্শন পদ্ধতিটিকে চলচ্চিত্রায়িত করে রাখা হয়েছে। এর আগে দিল্লির স্তম্ভ
এবং আদিবাসী ইস্পাত বহু সমীক্ষা করা হয়েছে (বারগেট এবং স্টেইনারের দ্য দিল্লি
পিলার – আ স্টাডি অফ করসান আসপেক্টস বা লাহিড়ী, ব্যানার্জী নিঝওয়ানএর সাম
অবজারভেসন অন এনসিয়েন্ট আয়রন ইত্যাদি আরও কয়েকটি)। এই কোনও লেখাতেই বস্তার জেলায় লোহা তৈরির
অস্ত্বিত্ব দেখানো হয় নি। প্রাচীন লোহায় জং না পড়া বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে
লোহার কিছু নমুনা সংগ্রহ করি। সেই সুবাদে এই দুই লেখক বস্তার জেলার প্রাচীন
লোহা তৈরির পদ্ধতি বিষয়ে একটি সমীক্ষা চালাই। এবং এই প্রবন্ধে সে বিষয়টি বিশদে উল্লেখ করার চেষ্টা
করছি।
বস্তার জেলার প্রাচীন লোহা তৈরির পদ্ধতি - ব প্রকাশ(বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়), ক ইগাকি(তহকু বিশ্ববিদ্যালয়। ইন্ডিয়ান জার্নাল অব হিস্টোরি অব সায়েন্সেস, জানুয়ারী, ১৯৮৪
No comments:
Post a Comment