চুল্লিকে ‘তৈরি’ করা এবং চুল্লির কাজ
প্রথমে শুকনো চুল্লিকে পূজা করা হয়। প্রার্থনা করা হয়
যাতে চুল্লি ভাল পরিমাণে লোহা উৎপাদন করে। এর পরে চুল্লির ভেতরে কিছুটা চারকোল
সাজিয়ে চুল্লিকে গরম করার জন্য আগুন দেওয়া হয়। ক্রমশঃ চুল্লিতে রাখা চারকোল পুড়ে
চুল্লিকে তপ্ত করতে থাকে। একই সময় প্লাটফর্ম থেকেও সাধারণপরিবেশে হাওয়া দিয়ে কয়লা
পোড়ানো হতে থাকে। বাইরের লোহাচুরের সঙ্গে রাখা কয়লাগুলি যখন পুড়ে তপ্ত লাল রঙ ধারন
করে তখন তপ্ত লোহা আকরিককে চুল্লির মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়। এইভাবে একের পর এক স্তর
তৈরি হতে থাকে যতক্ষন না ১৫ থেক ২০ কিলো তপ্ত আকরিক চুল্লির পেটের মধ্যে ঠেসে
যাচ্ছে। শেষ লোহার আকরিক দেওয়ার পর একদম শেষে জ্বলন্ত কয়লার স্তরটি সাজিয়ে দেওয়া
হয়। বেলোর সাহায্য হাওয়ার ব্লাস্ট চুল্লির মধ্যে দেওয়া হয়। এই নানান স্তরে সমাজের
মেয়েরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং ভাট্টি চালানো তাদের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ কাজ
হিসেবে ধরা হয়। চুল্লিতে ১১৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা তোলা এবং বজায় রাখার
জন্য বেলোকে কখনও জোরে কখনও ধীরে হাওয়ার ব্লাস্ট বইয়ে দক্ষতাপুর্ণভাবে ব্যবহার করা
হয়।
চুল্লিতে যে লোহা তৈরি হচ্ছে তার গুণমান সবসময় এক
মাত্রায় থাকছে না। বহু সময় দেখা যাচ্ছে, লোহায় কার্বনের মিশেল এত বেড়ে যাচ্ছে যে
লোহা একটু আঘাতেই ভেঙে চুর হয়ে যাচ্ছে। অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোহারেরা ভাল লোহা, খারাপ
লোহাকে আলাদা করতে পারছেন। চুল্লি থেকে জে স্পঞ্জ লোহা পাওয়া যাচ্ছে, সেটি একটি ফোর্জ
চুল্লি(হার্থ)তে SiO2(বালি)র সঙ্গে মিশিয়ে আবারও গরম করা হয় এবং তপ্ত লোহা বের করে নেহাই দিয়ে পিটিয়ে ২৫ মিমি চৌকোনা
দণ্ড তৈরি করা হয়। এই পেটানোর সময় দণ্ডের ওপর সিলিকা(অভ্র না বালি?) ছেটানো হয়
যাতে এটি ফোর্জিংএর সময় FeO বর্জ্যের
সঙ্গে মিশে আরও গলানো লোহাকে একটু তরল করে দেয়। এই প্রক্রিয়ায় যে লোহার দণ্ড পাওয়া
গেল, তা লোহারদের কাছে পাঠানো হয়। এই দণ্ড নিয়ে লোহারেরা নিজেদের সমাজের নানান
কাজের জন্য বিভিন্ন ধরণের হাতিয়ার তৈরি করেন। তাঁরা ১০০ বছর পুরনো একটি কুড়ুল
লোহার পাড়া থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁরা এটির রাসায়নিক বিশ্লেষণ করেন। ইগাকি ভারত,
চিন, জাপানের দশম খ্রিস্টাব্দ থেকে সপ্তদশ শত পর্যন্ত প্রাপ্ত লোহার অ্যাটমিক পোলারাইজেসন
বিশ্লেষণ করেন। তার পরীক্ষা বলছে, প্রাচীন লোহার জং নিরোধী ক্ষমতা অনেক বেশি ছিল। শেষে
একটি কথাই বলাযায় বাস্তারের মাড়িয়া আর
হালবি সমাজ ভারতের প্রাচীন লোহা তৈরির পদ্ধতির সঙ্গে জড়িয়ে ছিল। তাদের ছোট্ট
চুল্লিতে তাঁরা ফোর্জ লোহা তৈরি করতে পারতেন। বস্তারের আগাড়িয়াদের লোহা তৈরির
পদ্ধতিটি সমীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। কেননা তাঁরা তাদের এই পদ্ধতিটি বাইরের কারোর
সামনে খুলে ধরতে রাজি হন নি, এবং এলাকার দুর্গমতার জন্যেও। ভবিষ্যতের উতসুকদের
জন্য আমরা এই সমীক্ষাটি পেশ করলাম।
No comments:
Post a Comment