যে দিনটিতে ভারতের ধাতু প্রযুক্তিবিদেরা, চলতি
প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে, চাহিদা এবং নির্দিষ্ট কাজ করতে পারবে এমন দ্রব্য তৈরির
দিকে নজর রেখে, লোহার সঙ্গে কার্বনের সংকর ঘটিয়ে দিতে পারলেন, সেই দিনটি ভারতের
ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবে। ভারতে প্রাচীন কাল থেকে ছোট গলন চুল্লি(ব্লুমারি)
থেকে যে পেটাই লোহা উতপন্ন হত তা ধর্মে ছিল খুবই নরম এবং কাজের উপযোগী। এটির সঙ্গে
কার্বন সংকর ঘটিয়ে ভারতের ধাতু প্রযুক্তিবিদেরা এতে শক্তি এবং দৃঢতার ধর্ম দুটি
জুড়লেন। ঢালাই লোহায় যে কার্বনের পরিমাণ থাকে, ইস্পাতে থাকে তার অনেক কম। সমসত্ব(হোমোজিনিয়াস)
ইস্পাতের প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রন করা বেশ কঠিন কেননা, লোহার গলনাঙ্ক ১৫৪০ ডিগ্রি
সেলসিয়াস বজায় রাখতে হয়। এবং এই তাপমাত্রা ওঠার আগে লোহা গলতে শুরু করে না। এবং
একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে চুল্লিতে এই একই তাপমাত্রা বজায় রাখাও বেশ কঠিন কাজ।
তাহলে কিভাবে লোহার কার্বন সংকর তৈরি করা গেল?
তাত্বিকভাবে লোহাকে নির্দিষ্ট সময় ধরে ৯০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, কাঠকয়লা এবং নানান
জৈব বস্তুর সংযোগে উত্তপ্ত করতে থাকলে এই কাণ্ডটি ঘটান সম্ভব। প্রাথমিক কালে লোহা
গলানোর সময় প্রযুক্তিবিদেরা উদেশ্যপুর্নভাবে কার্বন সংকর তৈরি করতে হয়ত চান নি
কেননা তাতে সাধারণ আকরিক গলাতে যে পরিমাণ জ্বালানি প্রয়োজন হয়, তার তুলনায় অনেক
বেশী জ্বালানি লাগে। জ্বালানিপুর্ন চুল্লিতে লোহা আকরিককে জ্বালিয়ে(রিডিউস) কার্বন
মনোক্সাইড ধোঁয়া তৈরি করে ধাতু লোহায় পরিণত করা হয়। এই সময়ে যদি আকরিক-লোহার তুল্যমূল্য মাত্রা বাড়ানো হয় তাহলে, জ্বালানির
পরিমাণ অনুযায়ী জ্বলন্ত ধাতুর সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণে কার্বন মিশে কার্বন সংকর
তৈরি হয়। ধাতুতে এই কার্বন সংকরায়নের মাত্রা প্রায় শূন্য থেকে চার শতাংশ পর্যন্ত
হতে পারে।
চুল্লি থেকে উদ্ধার করা শুদ্ধ পেটাই লোহাকে যদি আবার ৭৪০
ডিগ্রি সেলসিয়াসের কিছুটা ওপরে গরম করা যায় তাহলে সে তার মধ্যে থাকা কার্বনের
একাংশ ছেড়ে দিতে থাকে। আবার লোহায় কার্বন
জোড়ার কাজও এই পদ্ধতিকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে করা যায়। ৭৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে লোহা
চুল্লিতে লোহায় যে বিক্রিয়া হয় তার সমীকরণটি এইরূপ
3Fe + 2CO = Fe3C + CO2
সেমেন্টাইটে( Fe3C) পৌঁছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গলিত লোহা দ্রবীভূত হয়ে পড়ে। কার্বন মনোক্সাইড ধোঁয়া লোহায় কার্বন যোগ করে। জ্বালানির সঙ্গে মিশে কার্বন ডাইঅক্সাইড আর কার্বন মনোক্সাইড তৈরি করতে থাকে। এর সঙ্গে অনুঘটক হিসেবে যদি সামান্য অ্যালকালি যোগ করা যায় তা হলে এই প্রক্রিয়াটি আরও দ্রুত ঘটতে থাকে। তবে সাধারণ দৃষ্টিতে এটি খুবই ধীর প্রক্রিয়া। কারবুরাইজেসন ঘটে ৮৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ওপরে।
প্রাচীন ভারতে কারবুরাইজেসন – স ক ভাটিয়া, ন্যাশনাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি ফর কনজ়ারভেসন অব কালচারাল প্রপার্টি, ইন্ডিয়ান জার্নাল অব হিস্টোরি অব সায়েন্স, ১৯৯৪
No comments:
Post a Comment