আয়রন কার্বাইডের( Fe3C) উপস্থিতি ধাতুর দৃঢতা ধর্ম যোগ করতে সাহায্য করে। লোহা
এবং লোহার কার্বাইড যা সেমেন্টাইট নামে পরিচিত ইস্পাতের ওপর একটি প্রলেপ ফেলে দেয়।
ফলে ফেরাইট স্তরের জন্য ইস্পাত মেলেব্ল হয়ে ওঠে। এই স্তর স্ট্রাকচারের নাম
পারলাইট।
আমাদের ধারণা লোহাকে কাঠকয়লার জ্বালানিতে দীর্ঘক্ষন
তাপিত করার মধ্যে দিয়ে, ধাতু প্রযুক্তিবিদেরা হঠাৎই কার্বন সংকর পদ্ধতিটির
আবিষ্কার ঘটিয়ে ফেলেন। আধুনিক পদ্ধতিটি হল রট(পেটাই) লোহা বা লঘু ইস্পাত(মাইল্ড
স্টিল)কে একটি কার্বনসমৃদ্ধ গুঁড়ো অনুঘটকের উপস্থিতিতে নির্দিষ্ট সময়ে
নিয়ন্ত্রিতভাবে জ্বালিয়ে, কার্বুরাইজেসন ঘটানো হয়। বোধহয় প্রাচীন লোহা গলানো
পদ্ধতিতে প্রযুক্তিবিদেরা কাঠকয়লার নিয়ন্ত্রিত জ্বালানি দ্বারা ফোর্জংএর সময় বার
বার পেটাই লোহাকে গরম করতে করতে এই পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেছেন।
লোহায় কার্বন মিশ্রনটি অনেক ধীরে ধীরে ঘটে। এবং লোহার
পিণ্ডটি যদি বড় বড় হয় তাহলে মিশ্রনের লয়টি আরও ধীর হয়ে পড়ে। দীর্ঘক্ষন ধরে
কারবুরাইজেসন প্রক্রিয়া চলতে থাকায় কার্বন লোহার প্রান্তে এসে জমা হতে থাকে ফলে
লোহাটির ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পায়। পুরনো দিনের লোহা কর্মীরা আদতে কার্বন সংকর লোহায়
কার্বনের অতিরিক্ত উপস্থিতি লোহাকে ভঙ্গুর করে, এই তথ্য জানতে পেরেছিলেন। ফলে এই
প্রাযুক্তিক অসুবিধেটুকু থেকে উদ্ধার পেতে তারা একটা পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, সেটি
হল লোহাকে না গলিয়ে শক্ত লোহাতেই কার্বন মিশ্রণ করা। অনেকগুলি ছোট ছোট লোহার টুকরোকে কারবুরাইজড করে তার সঙ্গে স্তরওয়ালা(ল্যামিনেটেড) শক্ত ইস্পাতের(হার্ড
স্টিল) ধর্ম যুক্ত লোহা পাইলিং করা। প্রাচীন কাল থেকে এই ল্যামিনেসন পদ্ধতিটি
আমাদের ধাতু প্রযুক্তিবিদেরা বিকাশ ঘটিয়েছিলেন। এই ইস্পাত ব্যবহার করে নানান ধরণের
দৈনন্দিনের ব্যবহারের দ্রব্য, অস্ত্র ইত্যাদি তারা তৈরি করতেন।
ধাতোয়ার উৎখননে প্রথম এ ধরণের ধাতব বস্তু পাওয়া
গেল। এটি ৫০০-৪০০ খ্রিষ্টপুর্বাব্দের একটি লোহা তৈরির কেন্দ্র। হাল দেওয়ার ফলা,
ছুরি, শান দেওয়ার যন্ত্র(চিজ়েল) বিশ্লেষণ করা হল। একমাত্র হালের ফলাতে পাওয়া গেল
ল্যামিনেটেড স্ট্রাকচারের ওয়েল্ডিং। এর থেকে যে সিদ্ধান্তটি করা যায় সেটি হল, এটি তিনটি স্তরে তৈরি হয়েছে। প্রথম, ব্লুমের পিণ্ডটি খোলা ৯০০ ডিগ্রি
সেলসিয়াস তাপের আগুনে লাল করা হয়। ফোর্জিংএর সময় বর্জ্যগুলি আলাদা হয়ে পড়ে এবং
ধাতুর কারবুরাইজেসন হয় এবং এট দৃঢতা অর্জন করে। এবারে এই ব্লুমকে পিটিয়ে ছোট্ট
একটি লোহার ফালিতে পরিণত করা হয়। দ্বিতীয় স্তরে ওয়েল্ডিং পদ্ধতিতে একটির পর একটি এ
ধরণের ছোট ছোট ফালি জোড়া হয়। আজকের দিনে একে স্মিথ ওয়েল্ডিং বলে। শেষ স্তরে সমগ্র
বস্তুটিকে ইচ্ছে অনুযায়ী আকার দেওয়া যেতে পারে। ক ট ম হেগড়ে অ্যান ইন্ট্রোডাক্সন
টু এন্সিয়েন্ট আয়রন মেটালার্জি, ১৯৯১তে বলছেন প্রাচীন ভারতের কর্মকারেরা তাপ দেওয়া
এবং দ্রুত ঠাণ্ডা করার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অস্ত্রের ধারের দিকটি শক্ত করার
পদ্ধতিটি জানতেন, যদিও তিনি এ ধরনের কোনও দ্রব্য প্রত্নতাত্বিক ক্ষেত্র থেকে
উদ্ধার করতে পারেন নি কেননা সেগুলি ছিল জংএ জরাজীর্ণ।
No comments:
Post a Comment