ঐতিহাসিকেরা যাকে মধ্যযুগ বলেন(কেন বলেন? ভারতে ইয়োরোপীয় যুগটাই নাকি আধুনিক। মধ্যযুগ মানে নাকি অন্ধকারে পড়ে থাকা একটা সময়। তাঁরা আধুনিক। কেননা তাঁরা সম্পদ লুঠ করেছেন, খুন করেছেন, মন্বন্তরের নামে গণহত্যা সাজিয়েছেন, তাঁদের মত করে দালাল তৈরি করে বকলমে তাঁদের মাধ্যমে আজও রাজত্ব করছেন। তাই তার আগের যুগটি স্বাভাবিক কারনে মধ্যযুগ। কেননা তখন বাংলা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ছিল। বাংলা প্রচুর কৃষি, শিল্পদ্রব্যের উদবৃত্তসব পণ্য রপ্তানি করত। অর্থনীতি ছিল উদবৃত। ছিল ১ লাখেরও বেশি পাঠশালা। সব সম্প্রদায় এক সঙ্গে মিলেমিশে বাস করত। বাংলার সদাগরেরা বাংলার বাইরে ব্যবসা করতে যেত(তখন থেকে কয়েক শতক আগে)। ইয়োরোপীয়দের বাংলায় বাণিজ্য করতে দামি ধাতু আনতে হত। ইয়োরোপের এশিয়ায় রপ্তানি বলে কিছু ছিল না। সবই তাঁদের এশিয়া থেকে আমদানি করা পণ্য। আজ, আধুনিক কালের, মাত্র দেড় দশক আগে আমরা বিদেশে ধাতু বন্ধক দিয়ে ঋণের নাগপাশ থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছিলাম।অসাধারণ!), আমরা বলি প্রায় ৫৫০ বছর আগে মুকুন্দরাম কবিকঙ্কন একটি উপন্যাস লেখেন। তাঁর সেই লেখা থেকে সে সময়টা কিছুটা হলেও বোঝাযায়। এবং কয়েকটি পর্বে আমরা সেই উপন্যাসের কয়েকটি পঙক্তি সাজিয়ে দেব যাতে বোঝা যাবে, শহুরে বাংলা সেই সময়ের থেকে অনেক দূরে চলে গেলেও (শহরের থেকে দূরের)গ্রাম বাংলার জীবন এখনও একই রকম রয়েছে। আগে খাবার-দাবার।
এটি প্রথম ভাগ।
হর-পারব্বতীর কৈলাসে গমন
ত্রিজগদীশ্বর
হর ভিক্ষা মাগে ঘর ঘর
আরোহণ করি বৃষোপরে।
বাজান
ডম্বরু শৃঙ্গ, দেখিয়া বাড়য়ে
রঙ্গ
নগবিয়া জগানিত ধরে।।
মাথায়
বেষ্টিত ফণী, অমুল্য যাহার মণি,
কুণ্ডলী কুণ্ডল দোলে কাণে।
কাণে
ধুতুরার ফুল, অমুল্য যাহার মূল,
বাসুকি কিরীট বিভূষণে।।
ভ্রমেন
উজানভাটী, চৌদিকে কোচের বাটী,
কোচবোধ, ভিখা দেয় থালে।
থাল
হইতে চালকড়ি, কেহ দেয় ডাল বড়ি,
কূপি ভরি তৈল দেয় তেলি।
ময়রা
মদোক দেই, সূত্রধার চিঁড়া খই
বেণে দেয় ভাঙ্গের পুটলি।।
লবণিয়া
দেয় লোণ, ঘৃতদধি গোপগণ,
তাম্বূলিতে দেয় গুয়াপান। ইত্যাদি
হর-পারব্বতীর
কোন্দল
আজি
গৌরী রান্ধিয়া দিবেক মনোমত।
নিম
শিম বেগুণে রান্ধুয়া দিবে তিত।।
সুকুতা
শীতের কালে বড়ই মধুর।
কুষ্মাণ্ড
বারত্তাকু দিয়া রান্ধিবে প্রচুর।।
ঘৃতে
ভাজি শক্রাতে ফেলহ ফুলবড়ি।
চোঁয়া
চোঁয়া করিয়া ভাজহ পলাকড়ি।।
রান্ধিবে
চলার ডাল তাতে দিবে খণ্ড।
আলস্য
ত্যজিয়া জ্বাল দিবে দুই দণ্ড।।
রান্ধিবে
মসূর সূপ দিয়া লঘু জ্বাল।
সন্তোলিয়া
দিবে তথি মরিচের ঝাল।।
নটিয়া
কাঁঠাল বীচি সারি গোটা দশ।
ঘৃত
সম্বরিয়া দিবা জামিরের রস।
কড়ুই
করিয়া রান্ধ সরিষার শাক।
কটু
তইলে বাথুয়া করহ দৃঢ পাক।।
রান্ধিবে
মুগের সূপ দিয়া ডাব জল।
খণ্ডে
মিশাইয়া রান্ধ করঞ্জের ফল।।
আমড়া
সংজগে গৌরী রান্ধহ পালঙ্গ।
ঝাট
স্নান কওর গৌরী না কওর বিলম্ব।।
গোটা
কাসুন্দিতে দিবা জামিরের রস।
এবেলার মত রান্ধ এ ব্যঞ্জন দশ।।
।
থাল
হইতে চালকড়ি, কেহ দেয় ডাল বড়ি,
কূপি ভরি তৈল দেয় তেলি।
ময়রা
মদোক দেই, সূত্রধার চিঁড়া খই
বেণে দেয় ভাঙ্গের পুটলি।।
লবণিয়া
দেয় লোণ, ঘৃতদধি গোপগণ,
তাম্বূলিতে দেয় গুয়াপান। ইত্যাদি
No comments:
Post a Comment