দ্য ইকনমিক
হিট ম্যান, ফাস্ট ফুড নেশন, ডেথ অ্যান্ড লাইফ অফ গ্রেট আমেরিকান সিটিজেরমত গবেষণা নির্ভর বইগুলোয় আমেরিকায়
বড় পুঁজির কর্মক্ষেত্র হিসেবে মধ্যবিত্ত সমাজে মতামত তৈরির ছকের পথ দেখানো হয়েছে। আরও দেখানো হয়েছে ছোট পুঁজিকে গিলে খেয়ে, বহুত্ববাদকে ধংসকরে, একদেহী(মোনোলিথিক) তিমিঙ্গিল হয়ে ওঠার ইতিহাস। বলা যাক, ভারতের মধ্যবিত্তের স্বপ্নের দেশ আমেরিকাতেও এই উন্নয়ন খুব একটা পুরনো
গল্প নয়। ঐতিহাসিকভাবে বিংশ শতকের শুরুর তিন-চার দশক আমেরিকা ছোট-মাঝারি পুঁজির
দেশ ছিল। ইয়োরোপীয় কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর বিশ্বজোড়া লুঠ আর আধিপত্যে, আমেরিকার
স্বাধীনতাকামীরা দেখেছিলেন, কোম্পানিগুলো কিভাবে দেশগুলিকে শোষণ করে, ছোট পুঁজি ধংস করে, বড় পুঁজি
নিয়ন্ত্রিত ইয়োরোপীয় রাষ্ট্রযন্ত্র তৈরি করেছে। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেনের কব্জা থেকে আমেরিকাকে
মুক্ত করে, বিশাল গণতান্ত্রিক দেশে, ছোট পুঁজি নির্ভর, ব্যক্তিগত উদ্যমে, পরস্পরের সঙ্গে মিলে মিশে চলার রাজনৈতিক
ব্যবস্থার জন্ম দিলেন তাঁরা।
বড় পুঁজি, আমেরিকার সেই আর্থ-রাজনৈতিকভিত্তি ভেঙ্গেচুরে দিল, বিংশ শতকে
চার, পাঁচ ছয়ের দশক থেকে। গোটা আমেরিকায় করপোরেটিকরনের উদ্যমের বুলডোজার, গুঁড়িয়ে দিল ছোট উদ্যমের পুঁজি। সরকারি মদতে এবং বিনিয়োগে হাইওয়ে তৈরি কোম্পানি,
জটিল বৈদ্যুতিন প্রযুক্তি নির্ভর জুয়া খেলা কোম্পানি, মুফতে জমি নিয়ে বাড়ি তৈরির
কোম্পানি, সিনেমা প্রযোজক, গণমাধ্যম কোম্পানি, গাড়ি কোম্পানি, বিশাল বিশাল খুচরো বাজার- যা পাইকারি বাজারের থেকেও বড়, চটজলদি খাওয়ার
কোম্পানি, প্রতিরক্ষা উদ্যম, আণবিক কোম্পানি, বড় বাঁধ তৈরির কোম্পানি, স্বাস্থ্য-শিক্ষা বিনিয়োগ আর অর্থ বিনিয়োগেরমত (ফিনান্সিয়াল
ইন্সটিটিউসন) অন্যান্য হাজারো কর্পোরেট কোম্পানি, পরস্পরের সঙ্গে হাত মেলাল নতুন ধরণের আমেরিকা(ভবিষ্যতে বিশ্ব) গড়ার জন্য। সরকারের নানান সুযোগ-সুবিধে কাজে লাগিয়ে, নতুন এক জীবনযাত্রা নির্ভর আমেরিকা গড়ায়
পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করল তারা। এই কাজে সফল হতে গেলে উদ্দেশ্যপুরনভাবে খতম করে দিতে হল আমেরিকার স্বাধীন মাঝারি, ছোট ছোট ব্যবসা। আমেরিকা সরকারের নানান পরিকল্পনায় তাত্বিক ইনপুট দিয়ে কর্পোরেট নির্ভর নতুন ধরণের আমেরিকা গড়ে তুলতে উদ্যমী হল বড় পুঁজি। যেখানে অসুবিধা, সেখানে বড় পুঁজি সরকারের নানান দপ্তরের সাহায্য নিয়ে, ছোট পুঁজির করপোরেটিকরণ করে ফেলল[যেমন করে ইয়োরোপ, আমেরিকা, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে রাস্তার খাবার বিক্রি করা হকারদের করপোরেটাইজেসন সম্পন্ন হয়েছে। যেমন করে বাংলাদেশে সেলফ-হেল্প দল গড়ার নাম করে, বিশাল সংখ্যক গ্রামীণদের খুব খুব ছোট পুঁজি(বিশ্বেন্দু নন্দ আর পার্থ পঞ্চাধ্যায়ীর সম্পাদনায় “হকার কথা” বইটিতে সুতনু ভট্টাচার্যর প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য), বড় ব্যাঙ্কের আওতায় চলে এসেছে, যেমন করে, ছোট গলি, চার রাস্তায় রূপান্তরিত হয়ে হাইওয়ে নাম পেয়ে তার করপোরেটাইজেসন সম্পন্ন করেছে, যেমন করে পাড়ার ছোট ছোট ক্রেতার পুঁজি দখল করতে, এলাকা এলাকায় হাইপার মল তৈরি করে, ছোট বাজারকে ভাতে মেরে মধ্যবিত্তের করপোরেটাইজেসন সম্পন্ন হয়েছে]। বিনিয়োগে ব্যর্থ হলে চিরাচরিত রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগের দাওয়াইতো রইলই। এই সময় থেকেই র্যাসনালাইজেসনের নামে, জোর করে নানান কোম্পানি অধিগ্রহনের উদ্যম শুরুহয়{এই দর্শনেই টাটা স্টিলের অবয়বের পাঁচগুণ বড় কোম্পানি, কোরাস দখল। নিন্দুকেরা প্রচার করে, টাটারা নাকি ঐতিহাসিকভাবে এশিয়ায় রথসচাইল্ড পরিবারের দালালি করত, আজও করে। তাদের হয়ে এখানে অন্যতম বিনিয়োগকারী হিসেবে কাজ করত তারা। টাটারা সেই কোন কালের আফিম ব্যবসার যুগ থেকে গাঁটছড়া বেঁধে রথসচাইল্ড পরিবারের আত্মীয়, সাসুন পরিবারের সঙ্গে মিলে হংকং আর বম্বে থেকে চিনে আফিম ব্যাবসা করত (টাটাদের আফিম ব্যবসায় জুড়ে থাকার প্রমানের জন্য http://lokfolk.blogspot.in/search/label/%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%86%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A6%BE দেখুন)।
টাটাদের কোরাস দখলের মূল পরামর্শদাতা ছিল রথসচাইল্ডের একটি কোম্পানি (http://www.livemint.com/Money/CwRq6o0OEFoACetqnmUigM/NM-Rothschild-rides-into-India-on-a-Tata-SteelCorus-high.html পশ্য)। রথসচাইল্ডের সরাসরি মদত ছাড়া এত বিশাল পুঁজি জোগাড়, বিভিন্ন সরকার নমনীয় করে তেল খাওয়া মেশিনেরমত কর্মক্ষম করা, গোটা ইওরোপ-লাতিন আমেরিকা জুড়ে সরকারি মদতে জনমত গড়ে তোলার কাজ করা, শুধুমাত্র তুরুশ্চু টাটা কোম্পানির কম্ম ছিল না। কেননা অতিসাম্প্রতিক কর্পোরেট ইতিহাস বলে, টাটারা শুধু নিজেদেরই অযুত পরিমাণ সম্পদ নয় নয়, তৎকালীন বাংলা সরকারের, সিপিএম পার্টির সমস্ত রকম সম্পদ-সমর্থন সম্বল করে, দেশ-বিদেশের তাবড় সংবাদ মাধ্যমের বেনজির সমর্থন সত্ত্বেও, মাত্র ১০০০ একরের সিঙ্গুর প্রকল্প সামলাতে পারেনি। ল্যাজ গুটিয়ে বাংলা থেকে পালিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে কর্পোরেটদের বড় রাষ্ট্রীয় মদতদার, নরেন মোদীর বিপুল ভর্তুকির অরথনীতিতে। সংবাদ জগতের মদতে মুফতে কোটি কোটি টাকার মুফত প্রচার পেয়েও, বিশ্বের সবথেকে কম দামী চার চাকা মাসে ১০০০ও বিক্রি করতে পারে নি (লক্ষ্য বছরে ৩ লাখ+)। টেলিকম, বিমান ব্যবসা করতে গিয়ে বড় পুঁজির মদতদার ভারত সরকারকে প্রভাবিত করতে গিয়ে নাকানি চোবানি খেয়েছে। তারা একা করল কোরাস দখল! কয়েন না কয়েন না কত্তা! গোরায় হাসব! এইত বহু চর্চিত কর্পোরেটিয় দক্ষতার হাল। সরকারি মদত ছাড়া সব কর্পোরেটই বড় শূন্য।}। তো আমেরিকায় ছোট পুঁজির অগস্ত্যযাত্রা সম্পন্ন হল। ছোট পুঁজি ক্রমশঃ নির্ভর হয়ে পড়তে থাকে বড় পুঁজির ওপর। নইলে না মরে, টিমটিম করে বেঁচে থাকা। বড় পুঁজির কোম্পানিরা পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে, বিশ্ব শোষণ করার, আরও বড় উদ্যম হয়ে ওঠার সমস্ত বাধা সরিয়ে দিতে থাকে।
No comments:
Post a Comment