স্বজনপোষণও
বেশ ছিল। অষ্টাদশ শতকে ভারত তথা কলকাতায় রাইটারের চাকরি পাওয়া
ভাগ্যের ব্যাপার ছিল। এ তথ্য পাচ্ছি আর্থার এসপিনাল, কর্নওয়ালিস ইন বেঙ্গল
পুস্তকে। আজও ভারতে ধারণা রয়েছে লন্ডনের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো
ঝড়তি পড়তি ডাকাবুকো যুবকেরাই ভারতে নির্বাসিত হতেন কোম্পানির কাজে। অথচ
এসপিনালসহ অনেকের কাজে এবং তত্কালীন নানান নথি সাক্ষ্যে প্রমাণিত এর থেকে বড়
মিথ্যে আর কিছু হয় না। ১৮৩০ সালেও প্রখ্যাত ব্যারন অথবা ব্যারনেটদের পুত্ররা
কলকাতায় জাহাজঘাটায় নামত রাইটাররূপে।
এসপিনাল বিশদে সে সময়ের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ
ব্যক্তিত্বের আত্মীয়দের কথা বিশদে উল্লেখ করেছেন। অন্যতম
প্রধাণ ও প্রখ্যাত আমলা জি এফ গ্রান্ট সাতবছর সেনা বাহিনীতে চাকরি করে রাইটাররূপে
কর্মজীবন শেষ করেন। কর্নওয়ালিসের অন্যতম প্রধান জেলা অফিসার টমাস
ল(১৭৫৬-১৮৪৬), ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড এলিনবরোর তুতো ভাই কার্লাইলের বিশপএর
পুত্র। ১৭৮৯তে জেলা কালেক্টরের পদ থেকে কয়েক বছর পর গভর্নর
জেনারেল কাউন্সিলে উন্নীত হওয়া পিটর স্পিকি, প্রখ্যাত ক্যাপ্টেন স্পিকির পুত্র। কর্নওয়ালিসের
সময়ের অন্যতম কালেক্টর সি এইচ পুরলিং কোম্পানির এক ডিরেক্টরএর পুত্র। ত্রিহুতের কালেক্টর
রবার্ট বাথরাস্ট, নরউইচএর বিশপের ভাই। ১৭৭২এ ভারতে আসা রবার্ট লিন্ডসে,
আর্ল অব ব্যালকারেসের পুত্র। কাউন্সিলের অন্যতম মেম্বর, চার্লস
স্টুয়ার্ট(১৭৪৩-১৮২১) লর্ড ব্ল্যানটাওয়ারের কনিষ্ঠ পুত্র। এসপিনাল
তাঁর পুস্তকে, তত্কালীন প্রখ্যত এক পত্রিকা, আলেকজান্দারের ইস্ট ইন্ডিয়া
ম্যাগাজিনএর ১৮৩৪এ একটি প্রবন্ধ উল্লেখ করছেন, অন দ্য নাম্বার অব রাইটার্স
এপয়েন্টেড ফ্রম হোম ইন দ্য লাস্ট ফাইভ ইয়ার্স থ্রি অয়ার সন্স অব নোবলম্যান, ৮ ওয়ার
ব্যারোনেটস সন, ২১ সনস অব ক্লারজিমেন, ৫৬ সনস অব কোম্পানিজ সিভিল সার্ভেন্টস, ৭৪
সনস অব অফিসার্স ইন দ্য কোম্পানিজ আর্মি, ৩৭ সনস অব অফিসার্স ইন হিজ ম্যাজেস্টিজ
আর্মি অর নেভি, ১৪৫ সনস অব মার্চেন্টস, ব্যাঙ্কার্স, প্রফেসনাল মেন, এন্ড
ডেন্টলমেন অন্ড এইট সনস অব ডেরেক্টর্স।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে একচেটিয়া ব্যবসা করার সনদ
পেয়েছিল। পি জে মার্শাল বলছেন,
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাছা বাছা কিছু কর্মচারী কোম্পানির দেওয়া
নিয়োগপত্রেই ভারতে ব্যক্তিগত ব্যবসার অনুমতি পেত। শতাব্দের শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কোম্পানি এই চুক্তি
মান্য করত। ক্রমশঃ
ব্যক্তিগত ব্যবসায় বিধিনিষেধের পরিমান বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবুও কোম্পানির নাকের ডগায় ব্যক্তিগত ব্যবসা চলত – উচ্চতম পদে আসীন গভর্ণর নিজে ব্যবসা করলে অথবা ঘুষ গ্রহণ করলে,
নিম্নতমপদে আসীন রাইটারেরা নিজেদের নোলা সামলে রাখার অজুহাত পায় না। প্রাক-পলাশি যুগে একজন গভর্নর সব মিলিয়ে পেতেন ২৪০
পাউন্ড, কাউন্সিলর ৪০ পাউন্ড, ফ্যাক্টর ১৬ পাউন্ড, রাইটার মাত্র ৫ পাউন্ড। ভারতে চাকরিতে নিচুশ্রেণীর কর্মচারীরা নানান ভাতা পেলেও
কলকাতায় বিলাসবহুল জীবনযাপন করার জন্য প্রয়োজন ছিল বাড়তি অর্থ, আর তার জন্য করতে
হত ব্যবসা, নিতে হত ঘুষ। অনেকের আবার লক্ষ্য
ছিল বাঙলায় যথেষ্ট অর্থ অর্জন করে, ইংলন্ডে ফিরে, পার্লামেন্টে একটি আসন দখল করা। সে যুগে পার্লামেন্টের ১০ শতাংশ সদস্য ছিলেন ভারতে
লুঠের অথবা ঘুষের অর্থে বড়লোক – বাঁকা
কথায় নবোব। বাত্সরিক ৮০০ পাউণ্ডে
যখন লন্ডনে রাজারহালে থাকা যেত, তখনকার হিসেবে ২০ থেকে ২৬ হাজার পাউন্ডে
পার্লামেন্টে আসন কেনা ছিল জলভাত।
No comments:
Post a Comment