প্রণতি
ইংরেজ শাসনে প্রাণদিয়ে, নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে, স্বাধীণতার স্বপ্ন দেখানো কোটি কোটি দিগম্বরী, প্যারীসুন্দরী, শিরোমণি, বিশ্বনাথ, তিতু, বীরসা, দুদুমিঞা, সিদোর প্রতি আভূমি
ধিক্কার
হিন্দু হউক, মুসলমান হউক, খ্রীষ্টান হউক, শিখ হউক, পারসিক হউক, তিতুর ন্যায় কখোনো কারোর দুর্বুদ্ধি হয়, ভ্রান্তি হয়, তিতুর দৃষ্টান্তে নিশ্চিতই তাহার চৈতন্য হইবে। তিতুর বড় দুর্বুদ্ধি। তাই তিতু বুঝিলনা ইংরেজ কত ক্ষমাশীল,- কত করুণাময়! দুর্বদ্ধি তিতু ইংরেজদের সে করুণা, সে মমতা বুঝিল না... এই ভারতে ইংরেজের রাজত্বে ইংরেজদের করুণার মর্ম, ইংরেজের বাত্সল্যেরভাব, কে না বুঝে, ইংরেজের রাজত্বে সুখামৃতের নিত্যসুখস্বাদ কে না করে!
তিতুমীর, বঙ্গবাসী, বিহারীলাল দত্ত
কোম্পানির এই নিয়ম বাঙলায় রেশম বস্ত্রের উত্পাদনকারীদের কঠোর হাতে দমন করার জন্য নিখুঁত পরিকল্পনা। এই নীতি অবশ্যই কার্যকর করতে হবে, যাতে বাঙলায় রেশম উত্পাদন ব্যবস্থা চিরকালের জন্য ধংস হয়ে যায়। যাতে শিল্পোন্নত দেশটির(অবিভক্ত বাঙলাদেশের) অবস্থার সম্পূর্ণ পরিবর্তন ঘটে এবং এই দেশটি গ্রেট ব্রিটেনের শিল্পেত্পাদনের চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামাল সরবরাহ ক্ষেত্রে পরিণত হয়, সেই ভাবেই এই নীতি কার্যকরী করে তোলা অবশ্যই প্রয়োজন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সিলেক্ট কমিটি (সুপ্রকাশ রায়, ভারতের কৃযক স্বাধীণতা সংগ্রাম ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম)
১৭৫৭ খ্রীঃ অব্দের পর ছিদামের ন্যায় যে সকল নিষ্ঠুর নরপিশাচ ইংরাজ বণিকদিগের রেসমের কুঠিতে এবং লবণের গোলায় কার্য করিত, আজ তাহার পৌত্র-প্রপৌত্রগণ মধ্যে অনেকেই বঙ্গের অভিজাত(aristocracy) বলিয়া পরিগণিত। এই অভিজাতদিগকে একবার স্মরণ করাইয়া দিতেছি যে, বঙ্গের শিল্পী, বঙ্গের কৃষক, বঙ্গের বাণিজ্যব্যবসায়ী এবং সর্বপ্রকার শ্রমোপজীবীদিগের শোণিত ইহাদের শরীর পরিপোষণ করিতেছে, সেই সকল নিরাপরাধী লোকের বিনাশের উপর ইহাদের অভিজাততীয় গৌরবের ভিত্তি সংস্থাপিত হইয়াছে।((চণ্ডীচরণ সেনঃ নন্দকুমার ও শতবত্সর পূর্বের বঙ্গ সমাজ))
ঋণস্বীকার
এর আগের পোস্টে আমরা যে কাজটির কথা বলেছি, সেই কাজটির মুখপত্র হিসেবে লোকফোক ব্লগটি কাজ করছে। এই ঋণ স্বীকারটি সেই বইএর মুখড়া থেকে নেওয়া। পড়ার সময় বইএর যায়গায় ব্লগ কথাটি বসিয়ে নিলেই কার্য(পাঠ)শুদ্ধি হয়ে যাবে।
এই ব্লগটির পোস্টগুলির আষ্টেপৃষ্ঠে বহু ভাবনার, তত্বের সঙ্গে লেখকদের ভাবনাতো বটেই, বহু নাম না জানা, নাম জানা
বহু মানুষের ভাবনা চিন্তা-দর্শণ-প্রদেয় তথ্য জড়িয়ে রয়েছে। তথ্য-তত্বের মুটেগিরি করে দেশি, গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে থেকে আমরা যা
শিখেছি, তার বাইরে বহুদিন ধরে নানান ব্যক্তি, সংস্থা, আলোচনাসভায় ওঠা তথ্য বিচার
বিশ্লেষণে জড়িয়ে থেকে যে সূত্রগুলো পেয়েছি, তার একটা বড় অংশ, গ্রন্থিবদ্ধকরে এই ব্লগে সঞ্চয় করা গিয়েছে। খুব আলগোছে
বহু সাধারণ আলোচনা থেকেও নানান মানুষের সঙ্গ করে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমরা
জেনেছি, আবিষ্কার করেছি নিজেরা ঋদ্ধ হয়েছি। আরও কাজ শেষ হয় নি।
আমাদের দলের প্রায় প্রত্যেক সদস্যই বামপন্থী আদর্শে জারিত পরিবারে বড়
হয়েছে। বিদ্যালয় জীবন থেকে শুরু করে বেড়ে
ওঠার সময়ে নানান বামপন্থী সাহিত্য, বই, পত্রপত্রিকার মধ্যে বড়ভাবে দাগ কেটেছিল,
সুপ্রকাশ রায়ের ভারতের কৃষক বিদ্রোহ ও
গণতান্ত্রিক সংগ্রাম। বইটি আজও আমাদের পথ দেখাচ্ছে। ভারত, ভারতের জনগণ সম্বন্ধে সুপ্রকাশ রায়ের নানান মার্ক্সীয় দ্বিধা
দ্বন্দ্ব সত্বেও বইটি গ্রামীণ মানুষের অদম্য স্বাধীণতাস্পৃহাকে বুঝতে, সম্মান
জানাতে সাহায্য করেছে। তাঁর এই বইটি সম্বল করে আমরা তৈরি
করেছি বাঙলার কৃষক স্বাধীণতা সংগ্রামের ইতিহাস। ঐতিহাসিকেদের বিবৃত স্বাধীণতা সংগ্রাম বনাম বিদ্রোহ তত্ব দ্বন্দ্বের বাইরে
বেরিয়ে এসে, এই লড়াই বিদ্রোহগুলোকে স্বাধীণতা সংগ্রামরূপেই দেখেছি। এই বইএর সূত্র ধরে আমরা পৌঁছে গিয়েছি নানান বইএর মূলে।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী থেকে দীনেশচন্দ্র হয়ে জয়া মিত্র, ধরমপালজী থেকে ক্লদ
আলভারেজ হয়ে উইনিন পেরিরা আর অনুপম মিশ্ররমত হাজারো প্রখ্যাত অখ্যাত কর্মীর নানান
রচনা আমাদের নতুনভাবে ভারতবর্ষকে বুঝতে সাহায্য করেছে – বিশেষ করে অকেন্দ্রিভূতসমাজের ধারণাটি আমরা নিজেরা যতটুকু না অর্জন করেছি,
তার বাইরে নানান তত্বতথ্য এঁদের থেকেই উপহার পেয়েছি। এই বইএর একটি উচ্ছ্বাসের বড় সম্বল উইলিয়ম এডামের তিনদফার বাঙলা বিহারের
শিক্ষা সমীক্ষা। এই সমীক্ষার তথ্য আমাদের পুরোনো
বাঙলা বুঝতে সাহায্য করেছে। ধরমপালজীর
লেখা থেকে সেটি পেয়ে মূল সমীক্ষাটির প্রকাশনা পর্যন্ত যেতে পেরেছি। বিনয় ঘোষেরমত বহু গবেষক কিন্তু তাঁদের নানান বইতে, এডামের রিপোর্টটির মূল
প্রতিপাদ্যটুকু এক স্তবকেই সেরে অন্য তথ্যে চলে গিয়েছেন। বলা দরকার পালিয়ে গিয়ে বেঁচেছেন, নাহলে ঔপনিবেশিক এবং ইওরোপকেন্দ্রিক
বামপন্থী দর্শণ হয়ত মুখ থুবড়ে পড়লেও পড়তে পারত।
এডাম প্রসঙ্গে একটা ভুলের স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের এই কাজের অন্যতম সুহৃদ-বন্ধু সুতনু ভট্টাচার্যমশাইকে আমরা অ্যাডাম
সমীক্ষার সুত্রটি দিই, এবং তিনি তাঁর একটি লেখায় সেই সুত্রের প্রাপ্তি স্বীকার
করেছেন। ধরমপালজীকে অন্ধভাবে অনুসরণ করতে গিয়ে এডামকে বুঝতে অনেকটা ভুল করতে
যাচ্ছিলাম। ধরমপালজীর লেখা পড়ে আমাদের ধারণা
হয়েছিল এডাম, তত্কালীন সরকারের শিক্ষানীতির কথা প্রতিধ্বনী করছেনমাত্র, কেননা তাঁর
সমীক্ষা সরকারি অর্থেই প্রতিপালিত হয়েছে। নানান
তত্ব-তথ্য আলগোছে আলোচনা কালে সুতনুদা আমাদের নতুন দিশায় এডামকে খুঁজতে বুঝতে
বললেন, কয়েকটি যায়গা ধরিয়েও দিলেন। এডাম সমীক্ষা
লেখার কাজে অনেকদূর এগিয়ে গিয়েও এডামের মূল সমীক্ষার তিনটি প্রতিবেদন জোগাড় করে
আবার নতুন করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়লাম। স্বীকার করতে
বাধানেই এডামকে বুঝতে আমরা ধরমপালজীর তথ্য অনুসরণ করে কিছুটা পথভ্রষ্ট হয়েছিলাম। যখন কলকাতায় ইংরেজি পড়ার ধুম লেগেছে, সেই সেই সময় কিন্তু মেকলের এবং
রামমোহনের অন্তরঙ্গ বন্ধু পাদ্রি এডাম নিদান দিচ্ছেন, বাংলা জুড়ে যে শিক্ষা
ব্যবস্থা রয়েছে তাকে বজায়রাখার। সেই পথ যদি না
সুতনু ভট্টাচার্য আমাদের ধরিয়ে দিতেন তাহলে আমরা মহাপাতকী হতাম।
No comments:
Post a Comment