বাংলার ইতিহাস, বাংলার গ্রামীণদের ইতিহাস জানতে বাংলার জমিদারিকে জানা দরকার, তাই এই ৯ খানা পোষ্ট। (সূত্র- রজতকান্ত রায়, পালাশির ষড়যন্ত্র ও
সেকালের সমাজ)
হিন্দু রাজত্বকালে বা মুসলমান শাসনের প্রথম অবস্থায় রাজা
ও প্রজা বা সরকার ও রায়তের মধ্যে জমীদার নামে মধ্যবর্ত্তী কেনও শ্রেণী ছিল বলিয়া
জানা যায় না। বিশেষতঃ এক্ষণেও বাঙ্গালা ব্যতীত ভারতের অন্য কোনও স্থানে প্রকৃত
জমীদার নাই। তবে প্রধান প্রধান রাজার অধীনে কতগুলি ক্ষুদ্র রাজা থাকিতেন। এক্ষণে
জিজ্ঞাস্য হইতে পারে যে, বাঙ্গালায় এরূপ জমীদার শ্রেণীর উদ্ভব হইল কেন! আলোচনার
দ্বারা এরূপ অবগত হওয়া যায় যে, খিলজী বংশের পর তোগলকবংশের বাদসাহীকালে খৃষ্টীয়
চতুর্দ্দশ শতাব্দীয় মধ্যভাগ হইতে বাঙ্গালা স্বাধীণ পাঠান নৃপতিগণ দ্বারা শাসিত
হইতে আরব্ধ হয়। পাঠানেরা বাঙ্গালা জয় করিলেও ইহার সীমান্তপ্রদেশের রাজাদিগকে সম্পূর্ণভাবে
পরাস্ত করিতে পারেন নাই। কোন কোন সময়ে তাঁহাদের রাজ্যের কতকাংশ পাঠান রাজ্যভুক্ত
হইলেও, উক্ত রাজগণ সুযোগ পাইলেই তাহা পুনর্ব্বার স্ব স্ব রাজ্যের অন্তর্বিষ্ট
করিয়া লইতেন। তদ্ব্যতীত বাঙ্গালার রাজধানী গৌড় তাহার এক প্রান্তে অবস্থিত হওয়ায় ও
তত্কালে চলাচলের নানানপ্রকার অসুবিধা থাকায়, পাঠান নৃপতিগণ সরকার হইতে রাজস্ব
আদায়ের জন্য কর্ম্মচারীনিয়োগ তাদৃশ সুবিধাজনক মনে করে নাই। এই জন্য তাহারা
বাঙ্গালায়, বিশেষতঃ পূর্ব্ব ও দক্ষিণ বাঙ্গালায় কতগুলি উপযুক্ত ব্যক্তির প্রতি
রাজস্ব আদায়ের ভার অর্পণ করিয়া তাঁহাদের হস্তে সমস্ত ভূমি ছাড়িয়া দেন। এইরূপে
ভূমির কর্ত্তৃত্ব লাভ করিয়া তাঁহারা সাধারণতঃ ভৌমিক ও পরিশেষে জমীদার নামে অভিহিত
হল। ভৌমিকগণ কেবল সরকারের নির্দ্দিষ্ট রাজস্ব প্রেরণ করিয়া নির্ব্বিবাদে সমস্ত আয়
উপভোগ করিতেন। এইরূপে সরকার অপেক্ষা তাঁহাদেরই সহিত প্রজাদের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ঘটে(মুর্শিদাবাদের
ইতিহাস, নিখিলনাথ রায়)।
ব্রিটিশ রাজ এবং হাতে গোণা শহুরে বাঙালির জোটে মমতাময় বাঙলা থেকে কোটি
কোটি টাকার অর্থ আর অপরিমেয় জ্ঞাণ-প্রযুক্তি নিয়ে ইওরোপিয় জ্ঞাণ-বিজ্ঞাণের ধারাকে
পুষ্ট করে ব্রিটেন তথা ইওরোপের প্রযুক্তি বিকাশের কাজকে দ্রুত বিকাশের পথে নিয়ে
গিয়েছে, যদিও এই বিকাশ ছিল পুরোপুরি কেন্দ্রীভূত এবং গ্রাম সমাজ ধ্বংসের ভিত্তির
ওপর দাঁড়িয়ে। ব্রিটিশকে সরাসরি সহায়তা দিয়েছে
বাঙলার শহুরে সমাজভিত্তিক উচ্চবিত্ততার দিকে ধাবিত হওয়া লুঠের খুদকুঁড়োর অধঃপাত
পাওয়া বাঙালি নব্যউচ্চমধ্যবিত্ত।
মুরশিদকুলি খাঁ, মুর্শিদাবাদ.নেট থেকে
No comments:
Post a Comment