দীনেশ সেনমশাইএর বৃহতবঙ্গ বইএর এবং তাঁর অননুকরণীয় লেখ্যভঙ্গীর
কুহকে আজও মজে রয়েছি। যে মায়াময় সততা আর অসামান্য উদ্যমে
পরতে পরতে খুলে দেখেছিলেন বঙ্গসংস্কৃতির ভিত্তিভূমিকে তার তুলনা আজও মেলা ভার
বললেও কম বলা হয় না। তাঁর পথ ধরতে পারার চেষ্টা আমরা
অন্ততঃ করতে পারিনি, আজও ইওরোপিয় পদ্ধতিতে পন্ডিতি বাংলা লেখার মজাবিল থেকে বেরোতে
পরিনি, চেষ্টার ত্রুটি নেই এ কথা দিতে পারি। কিন্তু আক্ষেপ, তাঁর মায়াময় বাঙলা ভাষাকে অনুসরণ করতে পারলাম না।
অন্য যে বইটির কথা বলতেই হবে সেটি ভারত সরকার প্রকাশিত পাঁচটি খন্ডে পশ্চিমবঙ্গের
পুজা পার্বণ এবং মেলা। বিনয়বাবুর
দক্ষিণ বঙ্গের সংস্কৃতির বিহঙ্গ দৃষ্টির বাইরে বেরিয়ে পড়ে পেলাম গ্রাম থেকে
গ্রামান্তরে মানস ভ্রমণের সুযোগ। অসম্ভব সেই
গায়ে কাঁটা দেওয়া, পাতায় পাতায় শিহরণ জাগানো তথ্য আমাদের ঘাড় ঘাক্কা দিয়ে বাড়ির
বাইরে যে বার করে দিল, ফেরার শেষ পথটিও আর খোলা রাখল না। রয়েছে রাজ্য সরকারের লোকশ্রুতি পত্রিকা। নানা অস্বস্তিকর শহুরে দার্শণিক ভাবনার পাশাপাশি পর গ্রামের গ্রামের
অসম্ভব নানান তথ্য আমাদের প্রাণিত করেছে। সহজিয়া, লোক লৌকিক, লোক, শিলাই কাঁসাই, সুন্দরবন
লোক সংস্কৃতিসহ নানান পত্রিকা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। বছর কয়েক পূর্বে ফুলিয়ায় আবিষ্কার করলাম দশ বছর চলে বন্ধ হয়ে যাওয়া তাঁত
শিল্প নির্ভর পত্রিকা টানা পোড়েন – সম্পাদনা বসাক
সমাজের মাথা হরিপদ বসাকমশাই। অসম্ভব ঋদ্ধ
এই পত্রিকাটি আমাদের দেখা একমাত্র বাঙলায় প্রকাশিত বিষয়ভিত্তিক পত্রিকা, যেটি
নিজের গুনেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। এ ধরণের কাজ
শহুরে অনেকেরই পক্ষে সম্পাদন করা হয়ত সম্ভব হত না তা সসম্মানে জানিয়ে রাখি।
বইটি লেখার সময় ব্যবহার করেছি রজতকান্ত রায়ের পালাশির ষড়যন্ত্র ও
সেকালের সমাজ। এইটি আমাদের ব্রিটিশপূর্ব, অথবা
১৭৫৭র অব্যবহিত পরবর্তী কালের জমিদারির পুঙ্খানুপুঙ্খ আর পলাশির কলাকুশলীদের
তত্ব-তথ্য-অবস্থান বুঝতে সাহায্য করেছে। কোম্পানি
আমলের বাঙলার ব্যবসা বুঝতে চিত্তব্রত পালিত অথবা ইন্দ্রজিত রায়ের সম্পাদিত বেশ
কিছু বই আমাদের পথ দেখিয়েছে। নুনের বাজার
নিয়ে জাপ গবেষক মিকি কান্ডা আমাদের নতুন দৃষ্টি পেতে সাহায্য করেছেন। সুশীল কুমার মুখোপাধ্যায়ের সপ্তদশ, অষ্টদশ শতাব্দের বাঙলার অর্থনৈতিক
ইতিহাসেরও সাহায্য নিয়েছি। এই বইগুলিতে
সুশীল কুমার, পি জে মার্শালের দেখানো পথ ধরে অত্যন্ত নিশ্চিন্ত হয়েছেন যে, ভারত
থেকে নিষ্ক্রামিত অর্থে ব্রিটিশ শিল্পায়ণের তত্ব, সর্বৈব মিথ্যা প্রচার।
No comments:
Post a Comment