অরূপদা, নীলাঞ্জন সঈদের সিরাজের মৃত্যু বিষয়ক একটি লেখা পড়তে দিয়েছেন, সোমনাথো য়ামাদের মন্তব্য জানতে চেয়েছেন। নীলাঞ্জন যে ইওরোপিয় ঐতিহাসিকের প্রতিপাদ্য নিয়ে কাজ করেছেন সেটা হল পলাশী হয়ই নি, সিরাজকে খুন করে মীরজাফর, ইত্যদি ইত্যাদি। আমাদের কাছে সিরাজ কি করে মারা গেলেন ইতিহাস গৌণ তো বটেই কিন্তু সিরাজ যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন সে তথ্যটা প্রাথমিক।
এবারে আমাদের কথা---
আমরা এই ধরণের ইতিহাস খুঁজি - ব্যতিক্রমী, কিন্তু জোরালো। সুশীল চৌধুরী স্পষ্ট
ব্যতিক্রমী ইতিহাসবিদ যিনি উল্টো রাস্তায় হেঁটে সোজাসুজি বলেছিলেন সিংহাসনে বসার
পরে সিরাজ অন্য মানুষ। এটা অনেকেই মেনে নিতে পারেন নি। সিরাজ নিয়ে আমরা আজও
সুশীলবাবুর অনুগামী, যদি না কোন ব্যতিক্রমী ভাবনা সেটাকে পেড়ে ফেলতে
পারে। এই বইটা পড়ার আগে কোন মন্তব্যে যাচ্ছি না। সিরাজ বিষয়ে
আপাতত সুশীলবাবু পথ দেখাচ্ছেন। অন্য কিছুতে আমরা তাঁর অনুগামী নই - কেননা আমাদের
খোঁজ ছোটলোকের ব্যবসা আর তাদের ব্যবসা কেড়ে নেওয়ার ইতিহাস খোঁজা। অন্য সব গৌণ। এই
বিষয়টা নিয়ে কেউই প্রায় কাজ করেন নি বলতে গেলে। তাই আমাদের খোঁজা শুরু হয়েছে শূন্য
থেকেই।
ইওরোপিয়রা ভারতে এসেছিল প্রাথমিকভাবে দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে
১) বাণিজ্য
২) বাণিজ্যে যে অধমর্ণতা ছিল সেটিকে বদলানো ইওরোপের পক্ষে।
পর্তুগিজ থেকে ফরাসী থেকে ডাচ থেকে ব্রিটিশ সক্কলেই চেষ্টা করেছে সোনার দেশ
ভারতউপমহাদেশ দখলের, সফল হয়েছে ব্রিটিশ। এবং ব্রিটিশেরা যুদ্ধে
অজেয় পলাশীর আগে এ রকম তত্ত্ব ওঠেই নি। বহুবার মুঘলদের সঙ্গে লড়াইতে তারা গোহারাণ
হেরেছে - স্বয়ং সিরাজের সঙ্গে হেরেছে। ১৮০০/১২০৭ সালেও টিপু সুলতানের সঙ্গেই পেরে
উঠছিল না তার মারণ হাউয়ের বিরুদ্ধে। তারা সেই হাউই উলরিচে নিয়ে গিয়ে গবেষণা করে
নতুন ধরণের হাউই উদ্ভাবন করে এবং তাতেও সফল হয় না - শেষে একজন বিশ্বাসঘাতকএর
সাহায্যে টিপুকে বশ করে। এবং সেই হাউই নিয়ে তারা ফরাসীদের বিরুদ্ধে জেতে।
ভারতে ইওরোপিয় মারের ইতিহাসটা পলাশী থেকে শুরু নয় তার অনেক আগে থেকেই চলছে -
সেটা পলাশীতে গিয়ে পূর্ণতা পেল।
কি করে?
কারণ দিন চার পাঁচেক আগে এক লেখায় আমরা দেখিয়েছি শুধু
পলাশী থেকে ক্লাইভই আইনি ঘুষে রোজগার করেছিল ১১২২৮ কোটি টাকা আজকের মুদ্রায়। তার
বাঙ্গালি ব্রিটিশ অনুগামীদের কথা হিসেবে আনি নি।
পলাশী ছিল বিশ্ব ইতিহাসের ব্যতিক্রমী
বিন্দু - যেখানে ছলে বলে কৌশলে ইওরোপ তার ব্যালেন্স অব পেমেন্টের গতি পালটে ফেল্ল।
এতদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, লাতিন আমেরিকা, আমেরিকা, আফ্রিকা, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া কোথাও বাণিজ্যের
নামে, কোথাও দাস
ব্যবসায়, কোথাও শুধু
দস্যুতা চালিয়ে, কোথাও বাজার
থেকে(যেমন্ আমস্টারডামের দামি ধাতু বাজার থেকে রূপো আর সোনা কিনে) সোনা রূপো লুঠ
করে এই উপমহাদেশ, চিন আর
পারস্যে ব্যবসা করতে আসত - এই উপমহাদেশে ব্যবসার রীতিই ছিল মূলত দামি ধাতু আর দামি
রত্ন বিনিময় - যে জন্য আজও বিনিময়ে রূপিয়া কথাটা থেকে গিয়েছে - এবং এই দামি ধাতু
ছাড়া মদ্য, আর ঘোড়া ছিল
উপমহাদেশের একমাত্র আমদানি। এই যে সম্পদ ইওরোপিয়রা উপমহাদেশে বাণিজ্যের জন্য যোগাড়
করত সারা বিশ্বে সন্ত্রাস চালিয়ে, সেটা কোম্পানির ভাষায় ইনভেস্টমেন্ট।
পলাশীর পরের লুঠে কোম্পানি এত আইনি রোজগার করল(বেআইনি রোজগারের কথা বলছিই না) যে তাকে আর ইওরোপ বা সারা বিশ্বজুড়ে আর এই ইনভেস্টমেন্ট জোগাড় করতে হল না, এক বছর আগেও ১৭৫৭/১১৬৪ সে জাহাজ ভরে সোনারূপো এনেছে ইওরোপ থেকে ১৭৫৮/১১৬৫ থেকে তারা জাহাজ ভরে নিয়ে যেতে শুরু করল দামি ধাতু বাংলা থেকে। বাংলার টাঁকশালের দখল নিল ব্রিটিশ যা সিরাজের সময় পায় নি। তাকে রূপো আরাই শতাংশ বাটা দিয়ে টাকায় ভাঙ্গাতে হত বাংলায়।
ফলে সারা বিশ্বের বাণিজ্য ইতিহাস পালটে গেল।
কিন্তুয় ব্রিটিশেরা বাংলার খাজানায় তো হাত দিয়ে বিনিয়োগ তুলল, কিন্তু ন্য ইওরোপিয় কর্পোরেট কোম্পানির কি দশা হল? তারাও তো সারা বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগ আনত বাংলায়।
এটা আরও গুরুত্বপূর্ণ, ব্রিটিশ ফ্রি মার্চেন্ট, ইন্টারলোপার্স আর কোম্পানির চাকুরেরা ব্যক্তিগত বাণিজ্য করে যা রোজগার করত, সেই লাভ আইনিভাবে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া মুশকিল ছিল। তারা সেই বিপুল লাভ বিনিয়োগ করল ফরাসী, ডাচ ইত্যাদি কোম্পানিতে এবং সেই বিল আমস্টার্ডামে বা প্যারিসে গিয়ে তারা ভাঙ্গাত। ফলে ইওরোপিয় কোম্পানিগুলোকে আর বাংলায় ব্যবসা করতে অর্থ বিনিয়োগ করতে হল না, ব্রিটিশ ব্যক্তি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগেই বাংলায় ব্যবসা চালিয়েছে তারা। ফলে ইওরোপ এক বছরেই উত্তমর্ণ হয়ে উঠল।
বিশ্বের ইতিহাস পালটে গেল চিরতরে।
তারপরে শুরু হল ব্রিটিশদের বাংলার বিশিল্পায়ণ।
গোটা ইতিহাসটা আসলে আমরা এই দিক থেকে দেখি - শেষ পর্যন্ত সিরাজ একটা বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পারেন নি।
অন্য সব কিছু অনুগল্প।
পলাশীর পরের লুঠে কোম্পানি এত আইনি রোজগার করল(বেআইনি রোজগারের কথা বলছিই না) যে তাকে আর ইওরোপ বা সারা বিশ্বজুড়ে আর এই ইনভেস্টমেন্ট জোগাড় করতে হল না, এক বছর আগেও ১৭৫৭/১১৬৪ সে জাহাজ ভরে সোনারূপো এনেছে ইওরোপ থেকে ১৭৫৮/১১৬৫ থেকে তারা জাহাজ ভরে নিয়ে যেতে শুরু করল দামি ধাতু বাংলা থেকে। বাংলার টাঁকশালের দখল নিল ব্রিটিশ যা সিরাজের সময় পায় নি। তাকে রূপো আরাই শতাংশ বাটা দিয়ে টাকায় ভাঙ্গাতে হত বাংলায়।
ফলে সারা বিশ্বের বাণিজ্য ইতিহাস পালটে গেল।
কিন্তুয় ব্রিটিশেরা বাংলার খাজানায় তো হাত দিয়ে বিনিয়োগ তুলল, কিন্তু ন্য ইওরোপিয় কর্পোরেট কোম্পানির কি দশা হল? তারাও তো সারা বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগ আনত বাংলায়।
এটা আরও গুরুত্বপূর্ণ, ব্রিটিশ ফ্রি মার্চেন্ট, ইন্টারলোপার্স আর কোম্পানির চাকুরেরা ব্যক্তিগত বাণিজ্য করে যা রোজগার করত, সেই লাভ আইনিভাবে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া মুশকিল ছিল। তারা সেই বিপুল লাভ বিনিয়োগ করল ফরাসী, ডাচ ইত্যাদি কোম্পানিতে এবং সেই বিল আমস্টার্ডামে বা প্যারিসে গিয়ে তারা ভাঙ্গাত। ফলে ইওরোপিয় কোম্পানিগুলোকে আর বাংলায় ব্যবসা করতে অর্থ বিনিয়োগ করতে হল না, ব্রিটিশ ব্যক্তি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগেই বাংলায় ব্যবসা চালিয়েছে তারা। ফলে ইওরোপ এক বছরেই উত্তমর্ণ হয়ে উঠল।
বিশ্বের ইতিহাস পালটে গেল চিরতরে।
তারপরে শুরু হল ব্রিটিশদের বাংলার বিশিল্পায়ণ।
গোটা ইতিহাসটা আসলে আমরা এই দিক থেকে দেখি - শেষ পর্যন্ত সিরাজ একটা বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পারেন নি।
অন্য সব কিছু অনুগল্প।
No comments:
Post a Comment