{বাংলায় মুর্শিদকুলি খাঁ - মুতামিন-উল-মুলক আলা-উদ-দৌলা জাফর খান নাসিরী নাসির জঙ্গ বাহাদুর' উপাধি পেয়ে সাত হাজারি মনসব পান এবং ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে রাজধানী স্থাপন করেন। বাংলাকে তিনি ১৩টি চাকলায় ভাগ করে সেগুলিকে ২৫টি জমিদারি ও ১৩টি জায়গিরে বন্দোবস্ত করেন। এই বন্দোবস্তের নাম জমা কামেল তুমারী, এবং সমগ্র ব্যবস্থাটি জাফর খানি জমিদারি বন্দোবস্ত নামে পরিচিত। এই আলোচনায় পরিষ্কার হবে বাংলার জমিদারেরা বংশপরম্পরায় জমিদারি ভোগ করছিলেন। মোটামুটি আগামী দিনে, পলাশীর পরে এবং ব্রিটিশ আমলেও বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থা জাফর খানি কাঠামো ধরে তৈরি হয়েছে।
এবারে চতুর্থ অংশ}
মজকুরি তালুক
১। বহরুল - সরকার শরীফাবাদের মধ্যে এই জমিদারির ১৩ পরগণায় ২৪১৩৯৭ টাকা জমা ধার্য হয়। ১১৩৫ সালে সুজার সময়ে এই জমিদারি রামকৃষ্ণকে দেওয়া হয়, পরে এর অধিকাংশ রাজশাহীর মধ্যে ঢুকে যায়।
১। বহরুল - সরকার শরীফাবাদের মধ্যে এই জমিদারির ১৩ পরগণায় ২৪১৩৯৭ টাকা জমা ধার্য হয়। ১১৩৫ সালে সুজার সময়ে এই জমিদারি রামকৃষ্ণকে দেওয়া হয়, পরে এর অধিকাংশ রাজশাহীর মধ্যে ঢুকে যায়।
২। মণ্ডল ঘাট - সরকার সাতগাঁ চাকলা বর্ধমানের অন্তর্গত। এই জমিদারিতে মুর্শিদ কুলী খাঁর বন্দোবস্ত পদ্মনাভের নামে ৫ পরগণায় ১৪৬২৬১ টাকা জমা ধার্য ছিল। পরে এটা বর্ধমান রাজের অধিকারে আসে।
৩। আর্ষা - সাতগাঁর মধ্যে, রঘুদেবের জমিদারির অন্তর্ভুক্ত; পরে এটা বর্ধমানের সঙ্গে মিশে যায়। ১১ পরগনায় জমা ছিল ১২৫৩৫১ টাকা।
৪। চুণাখালি - এর মধ্যে মুর্শিদাবাদ শহর ছিল। এর কিয়দংশ নবাবের খাস তালুক হয়ে যায় এবং অন্য অংশ রাজশাহী জমিদারির অংশভুক্ত হয়ে যায়। ৩ পরগণার রাজস্ব ৯৫৪০৭টাকা।
৫। আসদ নগর ও মহলন্দী দিগর - মুর্শিদাবাদের মধ্যে এই জমিদারির একাংশ রাজশাহীর অংশ হয়। অবশিষ্টাংশ ৩ পরগণায় ৬০৭৯৮ টাকায় বন্দোবস্ত হয়।
৬। জাহাঙ্গীরপুর দিগর - চাকলে ঘোড়াঘাটের অন্তর্গত ছিল। দিনাজপুরের মহাদেবপুরের রাঢীয় ব্রাহ্মণ বংশের নয়নচাঁদ চৌধুরী জাহাঙ্গীরের থেকে এটা পান। মুর্শিদিকুলি খাঁর সময় রাম দেবের সঙ্গে ১১ পরগণায় সদর জমা ছিল ৬৪২৪৯ টাকা। পরে এটা তিন জনের মধ্যে বিভক্ত হয়। মীর কাশেমের সময় ১১৯০৪০ টাকা রাজস্ব নিরূপিত হয়।
৭) আতিয়া, কাগমারী, বড়বাজু, হোসেনশাহী ইত্যাদি চাকলা ঘোড়াঘাটের অন্তর্ভূক্ত এই তালুকগুলো ১০ পরগণায় ৬৭৮৮৩ টাকায় বন্দোবস্ত হয়। মীর কাশেমের সময় ৪ জন মুসলমান তালুকদারে ভাগ হয়ে হয় ১১০০৪১ টাকা।
৮) শালবাড়ি - সরকার বাজুহার অন্তর্গত(১৯০০র দিনাজপুরে) এই প্রসিদ্ধ পরগনার রাজস্ব ৫৭৪২১ টাকা ধার্য হয়। পরে বিভিন্ন তালুকদারের অধিকারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয়। মীরকাশেমের সময় এর সঙ্গে বারবেকপুর মসিদা প্রভৃতি পরগণা মিলিয়ে সদর জমা হয় ১৬৬৪৭৭ টাকা।
৯) তাহেরপুর, বারবেকপুর ও মসদা এই তিন পরগণা ভিন্ন ভিন্ন জমিদারের সঙ্গে ৫৫৭৯১ টাকা জমায় বন্দোবস্ত হয়েছিল। তাহেরপুর সে সময় কংসনারায়ণের বংশধরগণের অধিকারে ছিল। পরে বারকেকপুর দুবলহাটি রাজবংশের অধিকারে আসে।
১০) চাঁদলাই সহ ক্ষুদ্র মহাল - মুর্শিদাবাদ, আকবর নগর, ঘোড়াঘাট ও জাহাঙ্গীর নগর এই চার এলাকায় ছড়িয়ে ছিল। নবাব সরকারের একজন হিন্দু আধিকারিককে ২৪ তালুক ৭ পরগণা ৫৫৭২৯ টাকায় দেওয়া হয়। পরে সত্রাজিৎ আর ভোলানাথের মধ্যে বারো আনা আর সিকিতে বিভক্ত হয়।
১১) পাতিলয়াদহ ও কুণ্ডী - চাকলা ঘোড়াঘাটের মধ্যে এই দুই তালুক ৭ পরগণায় ৬৭৬৩২ টাকায় জমা ধার্য হয়। পরে এটা রাজসাহীতে ঢুকে যায়।
১২) সন্তোষ এবং অন্যান্য- ঘোড়াঘাটের(আজকের ময়মনসিংহ) এই বন্দোবস্তে ২ পরগনায় ৯৪৮০৭ টাকায় জম্যা ধার্য হয়। রঘুনাথ এর দায়িত্বে ছিলেন। পরে দিনাজপুর আর রঙ্গপুরের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়।
১৩) আলাপ সিংও মমিন সিং - দুই পরগণা ৭৫৭৫৫ টাকা জমায় টিকরার মহম্মদ মেহন্দির নামে লেখা ছিল।
১৪) সাতসইকা - (সাতশ ব্রাহ্মণের বাসের জন্য - প্রাচীন নাম সপ্তশতিকা) বর্ধমান জেলার পূর্ব পাশে অবস্থিত। মুর্শিদকুলি খাঁয়ের সময় এই বংশের একরাম চৌধুরীর সঙ্গে ৩ পরগণায় ৫১১৬৭ টাকা জমা ধার্য হয়। পরবর্তীকালে জমিদারি হাতছাড়া হলে এরা পরে সমুদ্রগড়ের রাজা নামে অভিহিত হতেন।
১৫) মহম্মদ আমিনপুর - এই জমিদারি বর্ধমান ও হুগলি জেলায় ভাগীরথীর তীরে কলকাতার উল্টো দিকে অবস্থিত ছিল। এরা উত্তর রাঢীয় পাটুলির রাজা নামে বিখ্যাত। পরে বাঁশবেড়িয়া শ্যাওড়াফুলিতে বাস করেন। ১৪ পরগনায় এদের রাজস্ব ১৪০০৪৬ টাকা ধার্য হয়। মীর কাসেমের সময় ৩২৬৭৪৭ টাকা হয়।
১৬) পাত্তাস, করদিহা, ফতেজঙ্গপুর - চাকলা ঘোড়াঘাটের অন্তর্গত। নয় পরগনায় জমা ১০০৮৭৮ টাকা ধার্য হয়। তিনটে জমিদারি দিনাজপুর রাজের সঙ্গে মিলে যায়।
১৭) পুখুরিয়া ও জাফরশাহী এই দুই মহাল বাজুহার অন্তর্গত ছিল। ৫ পরগণায় এই জমিদারি সদর জমা ৫৪৫১৯ টাকা নির্দিষ্ট হয়। প্রথমটি রাজসাহী ও পরেরটি জালালপুরের মধ্যে পড়ে।
১৮) মাইহাটি - সরকার সাতগাঁর মধ্যে। জনৈক সীতারামের সঙ্গে ১৫ পরগণায় ২৮৮৩১ টাকায় বন্দোবস্ত হয়।
১৯) হুজুরি তালুকান - এই জমিদারিগুলি ছাড়া ৯৮ জন ছোট ছোট তালুকদার খালসা সেরেস্তায় স্বয়ং রাজস্ব দান করতেন - এদের হুজুরি তালুকদার বলা হত। এগুলির অধিকাংশ চাকলা মুর্শিদাবাদ আর সাতগাঁর অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই তালুককে ২ পরগনা ধরে ৯৫৮৫৫ টাকা জমা ধার্য হয়।
২০) আকবর নগর বা রাজমহলের সায়ারাৎ অর্থাৎ শুল্ক প্রভৃতি নিয়ে ২ পরগনা ধরে ৫৪৪৩২ টাকা ধার্য হয়, পরে এটা কাঁকজোলের জমিদারিতে ঢুকে যায়।
২১) অন্যান্য ছোট মহাল - গোটা বাংলায় যে সব পরগণার অংশ বা মৌজা উল্লিখিত জমিদারিগুলোর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল, তাদের এক সঙ্গে ৮ পরগনা ধরে মোট ৪৮৯৯২ টাকা জমা ধার্য হয়।
সব মিলিয়ে মাজকুরি মহালের ১৩৬ পরগণা ও ৭৮৫২০১ টাকা রাজস্ব নির্ধারিত হয়।
(ক্রমশঃ)
(ক্রমশঃ)
সূত্রঃ বাংলার ইতিহাস(আষ্টাদশ শতাব্দী) - নবাবী আমল - কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়
No comments:
Post a Comment