ভারতের স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ সমান ব্রিটেন-ইতালি জোট থেকে ১২টি
হেলিকপ্টার কেনার খরচের থেকে বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকা কম. আমার ভারত মহান.
আজও শহুরে ভারতের(যাদের
নির্দেশে ইংরেজি ছাড়া বাঙলা বললে শাস্তি হয়, স্যুট কোটের বদলে পাতলুন ধুতিতে প্রবেশ
নিষিদ্ধ হয়, চাকরিবাকরির দরজা বন্ধ হয়) পিতামাতা দণ্ডমুণ্ডের
কর্তা,
দয়া করে
ভারত সফরে সম্মতি দেওয়া ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নতুন সম্রাট দয়াময় ডেভিড ক্যামেরন, নতজানু
ভারতীয় নেশন স্টেটের নেতাদের দেখে খুশি খুশিভাব না লোকাতে পেরে জালিয়ানওয়ালাবাগে মৃত
অজ্ঞ,
সামন্ততন্ত্রে
ডুবেথাকা, গেঁয়ো, ব্রিটিশ বন্দুকের সামনে
দাঁড়িয়ে স্বাধীণতা চাওয়া নিগার ভারতীয়দের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন. অহো
কী মহানুভতাব!
জনগণমন পিতঃ! তোমার চরণে আমাদের শ্রদ্ধা! ব্রিটিশিয় ইংরেজি বলতে, ব্রিটিশ পদ্ধতিতে জীবনধারনের আদব কায়দা শেখা
ভারতীয় শিক্ষিতরা শিহরিত. প্রায় সবকটি ভাষার সংবাদপত্র মর্মস্পর্শী রিপোর্টে রিপোর্টে ছয়লাপ.
আমাদের পিতৃপিতামহ, মায় আমরাও, যারা
তাঁর বাপদাদার শাসনের বাড়ি খেয়ে বড়, সভ্য-ভব্য, ইংরেজিত হয়েছি তারা জানি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ কত দয়ালু ছিল. ভারত না
চাইলেও ভারতকে ঘাড় ধরে জগতসভায় যোগ্য করে তোলার কত বড় দায় তুলে নিয়েছিল নিজেদের কাঁধে. কই আর কেউতো এই দায় নিজের কাঁধে তুলে নেয় নি. কত বড় কান্ড রে ভাই. আজ বুঝবিনা আজ বুঝবিনে.
ভুলে যাব! কতগুলো গোঁয়ার, মুর্খ, গাঁইয়া
ভারতীয় যারা ব্রিটিশ মার্ক্সবাদও পড়েনি আর কেন্ব্রিজের তৈরি ভারতের ইতিহাসও পড়ে
নি, অন্ততঃ ৭৬এর আর ৪২এর গণহত্যার জন্য সমগ্র সাম্রাজ্যকে ক্ষমা চাইতে বলছেন. কী
আহাম্মক! কী আহাম্মক! ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিক জ্ঞাণচর্চায় মানুষ হয়ে অমানুষেরমত দাবি!
তবুও বিগত দুশ বছরে কোটি কোটি গ্রাম-শহরের ভারতীয়কে নির্বিচারে গণহত্যার
দায় প্রত্যেকটি ইংরেজি জানা ভারতীয়র. এ দায় চাইলেও ঝেড়ে ফেলা সহজ হবে না. দয়াময়
ক্যামেরনের শ্রদ্ধার প্রতি প্রণতি জানিয়ে এই লেখাটি পুণর্প্রকাশ করলাম.
ব্রিটিশ শাসনের
অন্যতম দান, যে দানটি ব্রিটিশ বা ব্রিটিশ অনুগামী চিন্তাবিদেদের লেখনিতে খুব বেশি রেখাপাত
করেন নি, সেটি হল ভারতজোড়া মন্বন্তর ভারতের সাধারণের গণহত্যা। ছিয়াত্তরের
মন্বন্তর নিয়ে কয়েকটা আর বিয়াল্লিশ নিয়ে পদার্থবিদ মধুশ্রীর কাজের পরও সরাসরি কেউ
এই মন্বন্তরগুলোকে গণহত্যা বলতে রাজি নন। বাঙালি গবেষকেরাও একে গণহত্যা বলতে চাননি। অথচ ১৭৫৭র এক
দশকের মধ্যেই প্রথমে বাঙলা, পরে ভারত এক স্থায়ী দুর্ভিক্ষের দেশ রূপে পরিচিত হতে
শুরু করল। ব্রিটিশ শাসনের আগেও বাঙলা তথা ভারত জুড়ে নানান সময়ে দুর্ভিক্ষ হয়েছে
নানান কারণে। তবে
অধিকাংশই প্রাকৃতিক বা লুঠেরাদের লুঠ করে চলে যাওয়া পথ ধরে। সে
দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা এগুলির কোনও টার সঙ্গেই তুলনীয় নয়। সাধারণতঃ সনাতন
ভারতের গতায়াতের সুব্যবস্থাই দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তি এনে দিত। সুসংগঠিত গ্রামসমাজ
নানান দুষ্কর্ম বা দুর্বিপাকের জন্য তৈরি থাকত। প্রত্যক গ্রাম
সমাজে আবশ্যকীয় শষ্যভান্ডার বা আপতকালীন ধর্মগোলা থাকায় ফলে বিভিন্ন এলাকায় নানান
ধরণের দুর্ভিক্ষ এড়ানো গিয়েছে। ব্রিটিশ পূর্ব আমলে সাধারণতঃ মানবসৃষ্ট মন্বন্তর তৈরি হত না। কোনও সময় লুঠেরাদের পলায়নের ফলে মন্বন্তর গড়ে উঠলেও,
ভারতের সমবায়ী সমাজ ঝাঁপিয়ে পড়ত সেই মন্বন্তর রুখতে। মন্বন্তর
ঘটলেও সেই মন্বন্তর ঘটত কয়েক শতাব্দ পর পর। ব্রিটিশ আমলে ছিয়াত্তর থেকে বিয়াল্লিশ পর্যন্ত কিন্তু বেশিরভাগ মন্বন্তরই
মনুষ্যসৃষ্ট এবং এই আমলে মন্বন্তর ঘটেছে প্রায় প্রতি বছর, কোনও বছরে একাধিকও।
ব্রিটিশদেরমত কোনও আগ্রাসী বিদেশি
আক্রমণকারী ভারতের সনাতন গ্রামীণ সামাজিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা ধংসের
উদ্যোগ নেয়নি। প্রায়
এক হাজার বছরের মুসলমান শাসকেরা বহিরাবণে করটুকু নিয়ে সুখী ছিল। এরপর ব্রিটিশদের
পালা।
ভেঙেদিল ভারতের অন্ততঃ দশ হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
বিশ্ববাণিজ্যের চলতি ধারা পরিবর্তন করে তৈরি করল চিন্তার স্থায়ী দাসত্বের যুগ। যা কিছু
বিশ্বের সব দখল করে নিজের করে নিয়ে বিশ্বকে সেই ধারগুলি ভুলিয়ে দিতে সক্ষম হল
চিরতরে। যে
লুঠের রাজত্ব তৈরি করল ব্রিটিশ আর তার সরাসরি ফলশ্রুতি ভারতীয় অনুদানে সৃষ্ট শিল্প
বিপ্লব, তাতে বলিদান হলেন কোটি কোটি গ্রামীণ নরনারী।
No comments:
Post a Comment