দ্বিতীয় অংশ
জেমস ডব্লিউ ফ্রে, অসকোস, উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক। তিনি বাঙলা সুবার পাটনার সোরা ব্যবসা সম্বন্ধে বিশদে ইতিহাস রচনা করেছেন. এই ইতিহাস যেমন মনোগ্রাহী, তেমনি বাঙলার ইতিহাস এবং প্রযুক্তি চর্চকদের আর শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষার বিষয়. ব্রিটিশ আধিপত্য বিশ্লষণে নানান দিকগুলি এর আগে বিশদে বিশ্লেষিত হয়েছে, কিন্তু সেই আলোচনায় সোরার ভূমিকার কথা আর সেই উত্পাদনে বাঙলা সুবার পাটনার কথা খুব একটা উঠে আসে নি। বলা দরকার প্রাচীন কাল থেকেই ১৯০০ সাল পর্যন্ত পাটনা বিশ্ব সোরা বাজারে বিশাল এক ভূমিকা নিয়েছে. এই ইতিহাস আমরা বিশদে এই প্রবন্ধে কয়েকটি অংশে ভাগ করে দেখব. এবারে দ্বিতীয় অংশ.
বিশ্বেন্দু
জেমস ডব্লিউ ফ্রে, অসকোস, উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক। তিনি বাঙলা সুবার পাটনার সোরা ব্যবসা সম্বন্ধে বিশদে ইতিহাস রচনা করেছেন. এই ইতিহাস যেমন মনোগ্রাহী, তেমনি বাঙলার ইতিহাস এবং প্রযুক্তি চর্চকদের আর শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষার বিষয়. ব্রিটিশ আধিপত্য বিশ্লষণে নানান দিকগুলি এর আগে বিশদে বিশ্লেষিত হয়েছে, কিন্তু সেই আলোচনায় সোরার ভূমিকার কথা আর সেই উত্পাদনে বাঙলা সুবার পাটনার কথা খুব একটা উঠে আসে নি। বলা দরকার প্রাচীন কাল থেকেই ১৯০০ সাল পর্যন্ত পাটনা বিশ্ব সোরা বাজারে বিশাল এক ভূমিকা নিয়েছে. এই ইতিহাস আমরা বিশদে এই প্রবন্ধে কয়েকটি অংশে ভাগ করে দেখব. এবারে দ্বিতীয় অংশ.
বিশ্বেন্দু
ভারতের সোরা সর্বপ্রথম ইওরোপের মুখ
দেখে ভিওসির হাত ধরে ১৬১৮ সালে। ইওরোপিয়রা ভারতে আসার আগেই ত্রয়োদশ শতকে মোগলরা ভারতে
বাজি তৈরির কারিগরী নিয়ে আসে। মোগল রাজত্বের রাজনৈতিক অস্থিরতা ভারতে সোরা উত্পাদন
বাড়িয়ে দেয়। আফগানদের কারিগরিতে বাঙলা ও জৌনপুরে(বর্তমান
উত্তরপ্রদেশে) খুব বড়ভাবে সোরা এবং নানান ধরনের অস্ত্র তৈরির উদ্যম নেওয়া হল। সে সময়ের দুটি পারসিক অভিধানে সোরা তৈরির বিশদ তথ্য
ভিত্তিক বিবরণ নথিবদ্ধ হয়েছে। বাঙলা ও জৌনপুরের মধ্যের প্রায় ৮০০
কিমি এলাকা ভারতের সোরা তৈরির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। এই নথিদুটি
থেকে আমরা জানতে পারি, ১৪৬০(এর ৪০ বছর পরে প্রথম শুরু হবে পূর্ব ভারতীয়-ইওরোপিয়
বাণিজ্য)তেই এলাকার শাসকেরা তাদের মূল ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সোরা তৈরির কাজ রাষ্ট্রীয়করণ
করে ফেলেছিল। ইওরোপিয়রা ভারতে আসার আগেই সোরা শিল্পকে ভিত্তি করে
বিনিয়োগ, বিতরণ, উত্পাদন, শ্রম বিনিয়োগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল এই অক্ষে। বারুদ তৈরির
কাজে পশ্চিম ইওরোপের থেকে ভারত অন্ততঃ একশ বছর এগিয়েছিল। তবে গবেষকেরা ধন্ধে
থাকছেন ১৫৩০এর আগে এশিয় দেশগুলির সমুদ্র বাণিজ্যে সোরা ছিল কী না। Vengalil A. Janaki বলছেন, পোলাপ জল, আফিম, সিঁদুর, রং,
লোহারমত দামি পণ্যের সঙ্গে গুজরাটি সোরা ক্যাম্বে থেকে মালাক্কায় পাড়ি দিত, তার
পর জাভা পর্যন্তও যেত। তবে এই রপ্তানির তারিখটি নিয়ে ধন্ধ
কাটে নি।
পির্তুগিজেরাএ বিষয়ে কতটা এগিয়েছিল তা
খুব একটা বোঝা যায় নি কেননা Estado
da India র বাণিজ্যে
সোরা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ছিল না। ১৫৪৭এ পর্তুগিজ আর বিজয়নগরের শাসকদের
মধ্যে চুক্তিতে বলা হয় পর্তুগিজেরা বিজয়নগর রাজ্যে সোরা খোঁজার কাজ করবে, এর বেশি
অবশ্য আর কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। তবে সোরা বিষয়ে যে পর্তুগিজেরা বেশ
মাথা ঘামাচ্ছে তা কিন্তু এই চুক্তির মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে। পর্তুগিজ সেনা
এবং ভাড়াটে সেনা ভারতে আগ্নেয়াস্ত্র বাজার বাড়াতে সাহায্য করেছে, যদিও বহু হাজার
বছর ধরে ভারত বারুদ চিনত। পর্তুগিজ
সৈন্যেরা বাজার এবং কারখানাগুলো থেকেই তাদের দরকারি বারুদ বা সোরা কিনত। তখনও ইওরোপে পর্তুগিজেরা বড় পরিমানে বারুদ রপ্তানি করা
শুরু করে নি। সঞ্জয় সুব্রহ্মনিয়ম বলছেন পর্তুগিজেরা বাংলা থেকে গোয়ায়
বারুদ নিয়ে যায়। তবে এই তথ্যের সূত্রটি কী তা তিনি জানান নি।
১৫১০এ পর্তুগিজেরা পুরোনো বিজাপুরী
অস্ত্রাগার দখল করলে বিশদ পরিমান বারুদ অধিকার করে। পরে তারা
সমুদ্রের কাছে একটা বারুদের মিলও বানায়। রায়বাগের সোরা দিয়ে সেই মিলটি চলত। পরিচালনা করত
ভারতীয় সাবকনট্রাকটার আর চালানো হত দাসদের দিয়ে। বিজাপুরের
সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী নাইট্রেট সরবরাহ করত স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এই চুক্তি
মারাঠাদের সঙ্গেও আঠোরশ শতক পর্যন্ত চলেছিল। ১৫২০ থেকেই ভাটকল কারখানায়
পর্তুগিজেরা সোরা উত্পাদন করতে শুরু করে।
সম্প্রতি Rene Barendse ভারত মহাসার বিষয়ে গবেষণায় পর্তুগিজদের সোরা ব্যবসা
সম্বন্ধে নতুন তথ্য উন্মোচন করেছেন। ১৬১৭তে পর্তুগিজ রাজা অন্য ইওরোপিয়দেরমতই
আরও বেশি সোরা অধিকারের জন্য অধ্যাদেশ জারি করেন। পর্তুগিজেরা
পাঞ্জাবের সিন্ধু পর্যন্ত গিয়ে সোরা বাণিজ্য চালু রাখে। ধাবলেও সোরা
বাণিজ্য চলত। মারাঠাদের
পতনের সঙ্গে এই শহরটির রমরমা শেষ হয়ে যায়। এতদিন ইওরোপিয় বাণিজ্যে সোরা, অন্য
পণ্যগুলের সঙ্গে আরও একটি পণ্য হিসেবে রপ্তানি হত। রপ্তানিতে তার
নিজের পরিচয় গড়ে ওঠে নি। কোঙ্কনী সোরা বাণিজ্য নতুন এক বন্দর রাজাপুরে উঠে আসে। এবং আদিল
শাহদের হাত থেকে এই ব্যবসা আরব এবং ইরানী বণিক আর বিনিয়োগকারীদের হাতে এসে পড়ে। রাজাপুরে
সারস্বত ব্রাহ্মণেরা সোরা ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। বিনিয়োগ আসে
গোয়া এবং দিউএরমত সুদূর থেকেও। শিবাজী(১৬৬৪-১৬৮০) এবং তাঁর
উত্তরাধিকারীরা নাইট্রেট বাণিজ্যকে রাষ্ট্রীয় করণ করেন। তাই পর্তুগিজ শক্তি, তাদের ভারতীয় দালাল,
বানজারা বণিকদের মারাঠা রাজশক্তির সঙ্গে ব্যবসা করতে হত।
No comments:
Post a Comment