প্রথম খণ্ড
২। প্রথম জীবনেই দারার প্রতি আওরঙ্গজেবের ঈর্ষা
দারাশুকোর জন্য আগ্রায় একটি রাজপ্রাসাদ বানানো হয়েছে। সেখানে তিনি শাহ জাহান এবং সম্রাটের অন্য তিন সন্তানকে আহ্ববান করলেন। ভারতীয় গ্রীষ্ম। তাই নদীর কাছাকাছি মাটির তলার ঘর বানানো হয়েছে। মানুষের উচ্চতার থেকেও বেশি বড় আলেপ্পোর আয়নাটা নদীর দিকে মুখ ফেরানো। দারা পিতা আর তাঁর ভাইদের নিয়ে সেই ঘরের সৌন্দর্য দেখাতে নিয়ে গেলেন। মহম্মদ আকবর দরজায় ঢোকা বেরোনোর পথে বসে পড়লেন। দারা সেটা দেখে সম্রাটকে ইশারা করলেন/চোখ মারলেন, যেন বলতে চাইলেন দেখুন কোথায় সে বসেছে। মহামহিম বললেন, ‘পুত্র, আমি জানি তুমি জ্ঞানী এবং সন্তদের মত জীবনযাপন কর, কিন্তু তোমার পদমর্যাদা তোমায় বজায় রাখতে হবে – কথায় বলে যে নিজের মর্যাদা বোঝে না সে নাস্তিক। কি প্রয়োজন ছিল, যে পথে মানুষ যাতায়াত করে, সেপথে তোমার বসার, এবং তাও তোমার ছোট ভাইদের সামনে?’ আওরঙ্গজেব উত্তর দিলেন, ‘পরে আপনাকে জানাব কেন আমি এখানে মাটিতে বসেছি’। আরও কিছু সংশ্লিষ্ট কথাবার্তার পর আওরঙ্গজেব উঠে তার সান্ধ্যকালীন নামাজ, জুহরের জন্য তৈরি হতে লাগলেন, এবং সম্রাটের অনুমতি ছাড়াই নিজের বাড়িতে ফিরে গেলেন। সম্রাট শুনলেন, এবং আওরঙ্গজেবকে সাত মাসের জন্য সভায় এসে দর্শকাসনে বসার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন। সাত মাসের পর সম্রাট সাম্রাজ্ঞী জাহানারাকে বললেন, ‘তুমি তার বাড়ি যাও, শুনে এস সে কেন সেদিন মাটিতে বসেছিল’। বেগম সাহেবা গেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি উত্তর দিলেন, ‘যে দিন দারা শুকো আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিল, সে পিতা আর তিন ভাইকে একদরজাওয়ালা মাটির তোলার ঘরে বসাবার উদ্দেশ্যপূর্ণ পরিকল্পনা করে, বার বার আমাদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য সেই ঘর থেকে ঢুকছিল আর বেরোচ্ছিল, আমার সন্দেহ/ভয় হচ্ছিল, সে হয়ত আমাদের ঘরের ভিতরে ঢুকিয়ে রেখে দেবে তাহলেই সব শেষ(দরজা বন্ধ করে মেরে ফেলার চক্রান্ত করছে)। সে এতবার উদ্বেগহীনভাবে ঘরবার করছিল, যে আমার মনে হচ্ছিল, যে আমাকে কাজটা করতেই হবে(দরজা আটকে বসাটা), যাতে সে নিজে ঘরের মধ্যে থাকে(আর আমরা বাইরে)। কিন্তু মহামহিম নিজের মর্যাদা রক্ষার জন্য আমাকে ভর্তসনা করলেন। এবং আমি সর্বশক্তিমানের কাছে মার্জনা চেয়ে বেরিয়ে আসি’। এটা শোনার পরেই সম্রাট শাহজাদাকে আদর করে ডেকে দয়া দেখালেন। শাহজাহা প্রধানমন্ত্রী শাহদুল্লা খাঁকে বললেন, ‘আপনাদের ইচ্ছা মত আপনি রাজধানী থেকে যে কোন জায়গায় যে কোন কাজের জন্য আমায় নির্বাসন দিন, আমি রাতের ঘুম আর মনের শান্তি হারিয়েছি’। তাঁকে মহামহিম তাঁর ইচ্ছেতেই লাহোর থেকে দাক্ষিণাত্যের সুবাদার করে পাঠিয়ে দেন।
মন্তব্য – শেষ স্তবকে উল্লিখিত লাহোর আসলে মুলতান। আওরঙ্গজেব লাহোর(পাঞ্জাব)এর সুবাদার কখোনোই ছিলেন না। ১৪ জুলাই ১৬৫২তে দাক্ষিণাত্যের সুবাদার নিযুক্ত হন, মুলতান থেকে ওখানে যান।
১ ডিসেম্বর ১৬৪৫ দিল্লির যমুনার তীরে বাড়ির জন্য দারাকে ৪৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়(আবদুল হামিদের পাদশানামা)। এই প্রাসাদ শাহ জাহান প্রথম ঘুরে দেখেন ১৪ মার্চ ১৬৪৩। যমুনার পাশের আগ্রার এই বাড়িতে সম্রাট থাকেন ২০ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট ১৬৪৪ পর্যন্ত। ২৮ মে থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত আওরঙ্গজেবকে আগ্রায় উক্তভাবে অপমান করে সভায় যোগ দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, এর পরে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৬৪৫ গুজরাটের সুবাদার করে পাঠানো হয়। সেই বছর সম্রাট আগ্রায় দারার প্রাসাদ যান ২ জানুয়ারিতে।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment