প্রথম খণ্ড
৭। খাজ্বার যুদ্ধ
সুজার বিরুদ্ধে লড়াইতে নামার আগের দিনে রাত যখন সাড়ে সাত ঘন্টা কেটেছে, আওরঙ্গজেব জানতে পারলেন, (শিবির পাল্টানো)রাজা যশোবন্ত সিংকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে(সুজার পক্ষে লড়াইয়ের) অগ্রগামী সৈন্যদল পরিচালনার। তখন আওরঙ্গজেবের সৈন্য সংখ্যা গোলান্দাজ আর পদাতিক নিয়ে ১৪০০০, এবং পথে পড়া কেন্দ্রিয় সৈন্যবাহিনীর একটা শিবির লুঠ করে বেশ কিছু গোলা আর পশু সম্পদ উদ্ধার করেছেন তিনি। বিপক্ষের সৈন্য কিছুটা হলেও ছিন্নভিন্ন। খবর পেলেন সেই বাহিনী শয়তান যশোবন্ত সিংএর সঙ্গে যোগ দিয়ে তার বিরুদ্ধে লড়াইএর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি তখন তাহাজ্জুদ নামাজে বসে; যশোবন্তের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশের দিকে হাত তুলে বললেন, ‘সে যদি যেতে চায়, তাঁকে যেতে দাও’ কিন্তু আর কিছু বললেন না। নামাজ শেষ করে মীর জুমলাকে ডেকে বললেন, ‘যেসব ঘটনা ঘটছে সর্বশক্তিমানের ইচ্ছেতেই ঘটছে, এবং যুদ্ধের মধ্যে যদি এই ভণ্ডটি যদি এই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে তাহলে এই অবস্থা থেকে উদ্ধার পাওয়া মুশকিল’।
তক্ষুণি তিনি দুন্দুভি বাজানোর আর বাহিনীকে বিলম্বে তৈরি হওয়ার নির্দেশ দিয়ে নিজে একটা হাতর পিঠে চড়ে সারা রাত তার বাহিনী নিয়ে যুদ্ধ প্রান্তরের দিকে চললেন।
প্রভাতের আলো ফুটতেই বোঝা গেল, সুজার সেনা বাহিনী বাঁদিক থেকে আক্রমন করেছে। সেদিকে আওরঙ্গজেবের একটা ছোট কামান বাহিনী রয়েছে। কিছু অসহায় মানুষের জীবন গেল। সঙ্গে সঙ্গে আওরঙ্গজেব তার মাহুতকে চিৎকার করে নির্দেশ দিলেন, ‘যে কোন উপায়ে তুই আমাকে সুজার হাতির কাছাকাছি নিয়ে চল’। তখনই সম্রাটের পরামর্শদাতা এবং ঘনিষ্ঠ সঙ্গী মুরশিদ কুলি সম্রাটের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বললেন, ‘সম্রাটের এই ধরণের স্পর্ধা দেখানো ঠিক নয়’। আওরঙ্গজেব উত্তর দিলেন, ‘আমরা কেউই এখোনো সম্রাট হই নি। এই ধরণের ডাকাবুকো কাজ করেই মানুষ সম্রাটের স্তরে উন্নীত হয়, এবং আমাদের কেউ একজন যদি সম্রাট হয়, এবং তার পরেও যদি এই ধরণের সাহস লোপ পায়, তাহলে তার ক্ষমতা বেশিদিন থাকবে না’।
(কবিতা) ‘মানুষই একমাত্র তার গোষ্ঠীর বধুর হাত কঠিনভাবে জড়িয়ে ধরতে পারে/ সেই একমাত্র তার আত্মীয়ের তরবারিতে চুমু দেয়’।
.
মন্তব্য – খাজ্বার যুদ্ধ হয়েছিল ৫ জানুয়ারি ১৬৫৯ সালে। এবং সুজার বাহিনী বিসদৃশভাবে পরাজিত হয়। কামানের যুদ্ধ হয় তবে কম। সুজা তার বাহিনী নিয়ে বাঁদিক থেকে আক্রমন করে। মাসিরউলউমরা বলছে, দাক্ষিণাত্যে আওরঙ্গজেবের সুবাদারির আমলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব আমলা খুরাসানি, ধারমত যুদ্ধে নিহত হন, ফলে তিনি কোনভাবেই খাজ্বা যুদ্ধে থাকতে পারেন না। আরেকজন মুরশিদ কুলি খাঁ বাংলার নবাব, সাম্রাজ্যের সেবায় বহু পরে বেতনভুক্ত হন, আর তাহাজ্জিদ মধ্যরাত্রির পরের আদায় হয়।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment