একাদশ অধ্যায়
আওরঙ্গজেব-আলমগিরের রসিকদাস ক্রোড়িকে লেখা রাজস্ব নির্দেশনা সংক্রান্ত ফরমান
অনুবাদ
মিতব্যয়ী এবং ইসলামের প্রতি অনুরক্ত এবং সদা সর্বদা সম্রাটের অনুগ্রহপ্রাপ্ত রসিকদাস জানে-
যে সম্রাটের চাহিদা এবং উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে চাষের জমির পরিমান বৃদ্ধির কাজে এবং চাষীদের এবং বিশেষ করে বৃহত্তরভাবে সাধারণ মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে, যারা সর্বশক্তমানের সর্বোত্তম সৃষ্টি এবং যাদের ওপর সৃষ্টিকর্তা বিশ্বাস রেখেছেন –
জায়গির এবং তাইউল(ফিফ) এবং পরণার দপ্তরে খোঁজখবর নিয়ে, সম্রাটের সভার বিভিন্ন আধিকারিকরা বলছেন, এই বছরের শুরুতে আগের বছরের এবং তার আগের বছরের উৎপাদন তথ্য অনুসারে পরগনার আমিন বিভিন্ন মৌজার উতপাদন(হাসিল), কত জমি চাষযোগ্য, রায়তদের ক্ষমতা এবং সামর্থ এবং অন্যান্য বিষয়ের তথ্য প্রদান করেছেন। এই হিসেব যদি কোন গ্রামের রায়ত মানতে বাধ্য না হয়, তাহলে তার জমির ফসল তোলার সময় জমির ফসলের সঠিক মূল্যমান নির্ধারণ করে তার রাজস্ব নির্ধারণ করে থাকে(কানকুত – পাকা ফসলের পরিমাপ হল কুত)। এবং যে সব গ্রামে চাষীরা খুব দুর্দশাপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, এবং চাষ করার জন্য অর্থের অভাব রয়েছে, তারা ফসলের বিভাগের(ঘাল্লা-বক্সী) সূত্র ধরে চলে, কোথাও অর্ধেক, কোথাও একতৃতীয়াংশ, কোথাও একপঞ্চমাংশ বা এর কাছাকাছি। বছরের শেষে তারা নীতি আর আইন অনুযায়ী সারা বছরের নগদ অর্থ রাজস্ব সংগ্রহের হিসাবকিতাব(তুমর = খাজনা নির্ধারণ বিবরণী), নিজেরা পর্যালোচনা(তাসদিক) করে এবং ক্রোড়িদের অনুমত্যানুসারে, চৌধুরিদের এবং কানুনগোদের স্বাক্ষর করিয়ে কেন্দ্রিয় হিসাব দপ্তরে পাঠায়। কিন্তু প্রত্যেক পরগণার হৈমন্তিক(আটাম) এবং বাসন্তিক(প্রিং) উৎপাদনের বিশদ বিবরণ – যেমন বিগত বছরে কতটা উৎপাদন আশাকরা গিয়েছিল এবং কতটা বাস্তবে পাওয়া গিয়েছে উৎপাদন কতটা কমেছে বা বেড়েছে, উৎপাদনের চরিত্রে কি পরিবর্তন হল, দুবছরের মধ্যে উৎপাদনের হারের পার্থক্য কি দাঁড়াল, মৌজাতে কত রায়ত রয়েছে, পাট্টাগুলি আলাদা করে দেখা হয়েছে কি না, চাষীদের সংখ্যা এবং এধরণের নানান হিসেব তারা আলাদা করে দেয় না। এই তথ্যগুলি প্রত্যেক মহলের আদত অবস্থা বর্ণনা করে, এবং সেখানকার আধিকারিকদের কাজের গুণাগুণ নির্ধারণ করে – যারা প্রায়শই মহলের রাজস্ব আদায়ের যে হিসেব দেখায় তাতে অনেক সময় বৃষ্টি কম হওয়ায় বা নানান দুর্দশায়, ফসল কম হওয়ায় এবং অন্যান্য অজুহাতে মোট রাজস্ব কম দেখায়।
তারা যদি সঠিকভাবে কাজ করে(বা বিশদে কাজ করে), প্রত্যেক গ্রামে ফসলের অবস্থা আন্দাজ করে, কত চাষযোগ্য জমি আছে তা নির্ধারণ করে চাষের এলাকা বাড়ায় যাতে সমগ্র পরগণা মানুষে এবং চাষের কাজে ভরে ওঠে, মানুষ ধনধান্যে ভরে ওঠে, তাহলে কোন দুর্যোগ এলেও রাজস্ব আদায়ের পড়তির যে কোন অবস্থা সামাল দেওয়া যেতে পারে।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment