দশম অধ্যায়
৩। রাষ্ট্রীয় কারখানাগুলির কাজকর্ম
সাধারণের লব্জে মুঘল আমলে ১২টা খাজাঞ্চিখানা আর ৩৬টি কারখানা ছিল বলে জানা যাচ্ছে, যা আমরা শাকির খাঁএর স্মৃতি-বর্ণনায় পাচ্ছি। মারাঠি ঐতিহাসিকেরা মাত্র ১৮টা কারখানার বর্ণনা দিয়েছেন, যদিও এই দুটি বর্ণনার নাম কিন্তু মিলছে না। যাওয়াবিতইআলমগিরি ৬৯ কারখানার অস্তিত্ব জানাচ্ছে, কিন্তু পুঁথির অপাঠ্য হস্তাক্ষরের জন্য অনেক নাম বোঝা যাচ্ছে না। আইনইআকবরিতে ২৬টি কারখানার বিশদ বর্ণনা আছে এবং সংক্ষিপ্তাকারে আরও ১০টা, মোট ৩৬টার বর্ণনা রয়েছে।
এই তালিকা কূট দৃষ্টিতে সমালোচনা করার আগে সত্যিকারের কারখানার সঙ্গে ভাণ্ডার আর দপ্তরগুলির পার্থক্য করা জন্য কারখানার কাজকর্ম বর্ণনা করা দরকার।
নিজের চোখে দেখে শামসইআফিফ, ফিরুজশাহ আমলের কারখানার বর্ণনা দিচ্ছেন, ‘সুলতানের ৩৬টি কারখানা রয়েছে, এবং সাধারণত সেইগুলি থেকে তিনি তার ব্যবহারের জিনিসপত্র আদায় করেন। প্রত্যেকটি নানা ধরণের দামি জিনিসপত্রে ভর্তি থাকে(যেমন গাছপালা, আসবাব এবং অন্যান্য কাঁচামাল) – এই সংখ্যা অগুনতি...প্রত্যেক বছর বিপুল সংখ্যক অর্থ বরাদ্দ হয় এই কারখানাগুলির জন্য। এগুলির ভাণ্ডার অর্থাৎ রালিবি বছরে নির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ পায়, এঁদের থাকে হাতিখানা, অশ্বআস্তাবল, গাধার আস্তাবল, উটের আস্তাবল, রান্নাঘর, ঝাড়লন্ঠনের ঘর, খানসামাদের জন্য তৈজস এবং মাদুর ভণ্ডার। এই রালিবি ভাণ্ডারগুলির জন্য প্রত্যেক বছর একলক্ষ ৬০ হাজার টঙ্কা বরাদ্দ ছিল, এছাড়া সেগুলির গাছগাছালি, তাদের হিসাবরক্ষক এবং অন্যান্য আধিকারিকদের বেতন মোট একলক্ষ ৬০ হাজার রৌপ্য টঙ্কা বরাদ্দ ছিল। ...ঘায়ের আলিবি কারখানাগুলিতে, যেমন জমাদারখানা, ইলমখানা, ফরাশখানা, রিকাবখানা ইত্যাদির নতুন দ্রব্যের জন্য প্রতিবছর অর্থ বরাদ্দ থাকত। ...প্রত্যেক কারখানা একজন খাঁ বা অভিজাত মালিকের দেখাশোনায় রাখা হত...তার নাম খ্বাজা আবুল হাসান...যখন সুলতান কিছু নতুন বানাবার ইচ্ছে প্রকাশ করতেন, তিনি তা লিখতেন সাধারণ অধীক্ষককে, সেই চিঠি উপযুক্ত কারখানায় পাঠানো হত এবং অবিলম্বে কাজ শুরু হয়ে যেত... প্রত্যেক কারখানার অনেকজন হিসাবরক্ষক ছিল’(তারিখইফিরোজশাহী)।
সুলতানের কঠোর নির্দেশ ছিল শহরে যে কর্মী বসে এয়েছে কাজ না পেয়ে তাকে যেন তার কাছে পাঠানো হয়। প্রত্যেক মহল্লায় আরক্ষকেরা ঘুরে ঘুরে এ ধরণের বেকার মানুষকে খুঁজে খঁজে সুলতানের সামনে উপনীত করত, এবং তাদের দক্ষতা আর কাজের উৎসাহ, ইচ্ছা দেখে তিনি তাদের হয় কারখানায়, না হয় যে কোন অভিজাতর বাড়িতে উপযুক্ত কাজে বহাল করতেন।
আরব ভৌগোলিক দিমিস্কি লিখছেন, ‘সুলতানের কারখানায় ৪০০ রেশম শিল্পী নিযুক্ত ছিলেন, তারা রাজসভার প্রত্যেকের জন্য নানান সময়ের, উৎসবের, সম্মানের, উপহার ইত্যাদির জন্য পরিধেয় বুনতেন, এছাড়া চিন, ইরাণ, আলেক্সান্দ্রিয়া থেকেও পরিধেয় আসত। প্রত্যেক বছর সুলতান ২ লক্ষ তৈরি পরিধেয় বিতরণ করতেন। এছাড়াও বিভিন্ন উপাসনাগার এবং সন্তদের জন্যও পরিধেয় প্রস্তুত হত।
‘সুলতান সোনার সুতো তৈরির জন্য ৫০০ জন কারিগর তৈরি রাখতেন, যেগুলি তার স্ত্রী কিংখাব বানিয়ে পরতেন, এবং বিভিন্ন অভিজাত এবং তাদের স্ত্রীদের উপহার দেওয়া হত’।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment