দ্বিতীয় খণ্ড
আওরঙ্গজেবের পুত্র আর নাতিদের বিষয়ে
বাহাদুর শাহ(মুয়াজ্জম)
৯। শাহজাদা মুয়াজ্জমের গ্রেপ্তারি
সম্রাট যখন শাহজাদা মহম্মদ মুয়াজ্জম বাহাদুর শাহকে কারাগারে নিক্ষেপ করার জন্য মনস্থ করে তাঁকে আহ্বান জানালেন, শাহজাদা এলেন ভজনালয়ে। গন্ধ দ্রব্যের দারোগা বক্তাবর খাঁকে মহামহিম বললেন, ‘আমার সন্তানের পছন্দের প্রত্যেকটি আতর নিয়ে এস’। বাহাদুর শা বিনীতভাবে বললেন, ‘এই দাসের নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার যোগ্যতা কি? (আমার নিজের পছন্দ করে আনা থেকে)কোন গন্ধটায় আপনি, মহামহিম খুশি হন, সেইটা আনি’। সম্রাট উত্তর দিলেন, ‘আমার নির্দেশ আমার আনুগ্রহের নিদর্শন’। বাহাদুর শাহ বক্তাবর শাহকে বললেন, ‘মোমের গন্ধ(আতরইফিন্দ) যা আছে সেটা নিয়ে এস। মহামহিম চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘হ্যাঁ আমিও, আমার মনে সেই দূরদর্শী ভাবনাটাই কাজ করছিল বলেই তুমি এখানে এসেছ’। যখন গন্ধটি এল, তখন আওরঙ্গজেব শাহজাদাকে জামার হাতা খুলে দিয়ে এগিয়ে আসার নির্দেশ দিলেন, যাতে সম্রাট নিজের হাতে সেই গন্ধদ্রব্যটিকে তার হাতে ডলে দিতে পারেন। গন্ধ দ্রব্যটি গায়ে মেখে যখন শাহজাদা মাথা ধন্যবাদ জানানোর জন্য নত করতে পিছিয়ে গেলে, সম্রাট মুহরম খাঁকে নির্দেশ দিলেন, হামিদুদ্দিন খাঁয়ের সাহায্য নিয়ে যেন তার পুত্র এবং চার সন্তানকে নিরস্ত্র এবং আটক করা হয়। তারা যখন প্রথমে মহম্মদ মুয়িজুদ্দিনএর কাছে গেলেন, তিনি তার হাত তরোয়ালের বাঁটে দিলেন। বাহাদুর শাহ ক্রোধে তার সন্তানের প্রতি বলে উঠলেন, ‘শয়তান, তুমি তোমার বিশ্বাসের কেন্দ্র এবং কাবার(পূণ্য সম্রাট) নির্দেশ বিরোধ করছ?’ তার নিজের হাতে তিনি তার (বড়)সন্তানের শস্ত্র খুলে নিয়ে মুহরম খাঁকে অর্পন করলেন। অন্য সন্তানেরা কোন কথা না বাড়িয়ে তাদের শস্ত্র সম্পর্পন করল।
যখন সম্রাট এটা শুনলেন, বললেন, ‘এই ভজনখানা জোসেফের কুঁয়োর স্থান নিয়েছে, এবং সে জোসেফের মর্যাদা অর্জন করল’।
মন্তব্য – শাহজাদা মুয়াজ্জম, পরের দিকে প্রথম বাহাদুরশাহকে আওরঙ্গজেব, ২১ ফেব্রুয়ারি ১৬৯৫ সালে কয়েদ করেন এবং মুক্তি দেন ৯ মে, ১৬৯৫ সালে। তার পর তাঁকে লাহোরের সুবাদার রূপে পাঠানো হয়। তবে মাসিরই আলমাগিরি এই ঘটনার একটু আলাদা বিবরণ প্রদান করছে। এই উপকথায় যে বক্তাবর খাঁয়ের নাম বলা হচ্ছে, তিনি কখোনোই মিরাটইআলমএর লেখক হতে পারেন না, তিনি মারা যান ৯ ফেব্রুয়ারি ১৬৯৫ সালে। তার নাম খ্বাজা বক্তাবর, খাঁয়ে রূপান্তরিত হয়েছেন এখানে। এখানে ফিন্দ শব্দটি নিয়ে খেলা করা হয়েছে কেননা ফিন্দের একটি মানে সুগন্ধী মোম আরেকটি মানে বিশৃঙ্খলা। মক্কার কালো চৌকোণা মসজিদটার নাম কাবা, যার দিকে মুখ ফিরিয়ে মুসলমানেরা নমাজ পড়েন। জেকবের সন্তান জোসেফকে তার দুর্বিনীত ভায়েরা শুকনো কুঁয়োয় ফেলে দেয়, তার পরে দাস হিসেবে একজন মিশরের পানে যাওয়া এক বণিককে বিক্রি করে দেয়। এই দুর্ঘটনা জোসেফকে মিশরের প্রধানমন্ত্রী হতে সাহায্য করে।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment