নবম অধ্যায়
৭। সম্রাট জামিন হিসেবে অভিজাতদের পরিবারগুলিকে ব্যবহার করা
অভিজাতদের ওপরে আরও কিছু পকড় সম্রাটের ছিল। অধিকাংশ অভিজাত পরিবার মূলত মধ্য এশিয়া এবং পারস্যের এবং কিছু তুর্ক সাম্রাজ্য থেকে আসা কিছু দুঃসাহসিক ব্যক্তি। পার্সিরা সে যুগে তাদের শিক্ষা, সাহিত্যচর্চা, আর্থব্যবস্থা এবং হিসেবরক্ষা আর মার্জিত ব্যবহারের জন্য প্রখ্যাত ছিলেন। মুঘল সাম্রাজ্যের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল পারসিক শাহ এবং তুর্কি সুলতানি সাম্রাজ্যের নিম্নপদাধিকারিকদের ফুসলিয়ে ভারতে এনে কাজে নিযুক্ত করা। আওরঙ্গজেব সরাসরি বলতেন, এইসব বিদেশিরা ভারতীয় মুসলমানদের থেকে অনেকাংশে উত্তম, কর্মক্ষম, এবং বৌদ্ধিকভাবে এগিয়ে থাকা, আর পশ্চিম তুর্কেরা তাদের সঙ্গে কিছুটা ইওরোপিয় সংস্কৃতি এবং জ্ঞানবিজ্ঞান বয়ে নিয়ে আসতেন। এই সব সাম্রাজ্যের নানান ধরণের আধিকারিক, যারা হয় তাদের কাজে সম্মানচ্যুত হতেন বা সম্রাটের রোষ দৃষ্টির সামনে পড়তেন, তাদের কাছে একমাত্র বিকল্প হত ভারতে পালিয়ে এসে মুঘল সাম্রাজ্যে তদের দেশের কাজের থেকে বহু বেশি পদের, সম্মানের এবং আর্থিক সুবিধের কাজ নেওয়া। এই ধরণের বিদেশি অধিকারিক, যাদের কাজে মুঘল সাম্রাজ্যের যথেষ্ট গৌরব বৃদ্ধি পেয়েছিল, তারা আওরঙ্গজেবের শিয়া-বিরোধী মনোভাবে এবং ভারতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মতবাদের প্রভাবে এবং সপ্তদশ শতের শেষের দিকে পারস্যের শাহের এবং তার কিছুটা পরে সাফাভি সাম্রাজ্যের অপকর্ষে অনেকটা হতোদ্যম হয়ে পড়েন। কিন্তু মুঘল সাম্রাজ্য যতদিন টিকে ছিল, পারসি বা তুর্ক উচ্চবংশজাত মানুষেরা ভারতীয় সাম্রাজ্যে আদরের সঙ্গে গৃহীত হন এবং সম্রাটেরা তাদের সন্তান-সন্ততিদের এই নব্য ভারতীয় অভিজাতদের পরিবারে বিয়ে দেওয়ার জন্য লালায়িত হতেন।
কিন্তু পরের দিকে তাদের পরিবারকে জামিন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তুর্কি আব পারস্য থেকে পালিয়ে আসা কোন উদ্বাস্তু যতদিননা তাদের গোটা পরিবারকে সেদেশ থেকে ভারতে না নিয়ে আসছেন, তাদের সরকারি কাজে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অবাধ স্বাধীনতা বা উচ্চপদ দেওয়া হত না। এর অর্থ, তারা যাতে কোন ভাবেই ভারত ছেড়ে সহজে পালিয়ে না যেতে পারেন। সেই সব উচ্চপদস্থ আদিকারিকেরা যখন সুবায় যেতেন, তখন তাদের হয় সন্তান নয় কোন প্রতিনিধি (উকিল)কে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হত। হিন্দু রাজারাও এই কাজটা করতেন।
(নবম অধ্যায় শেষ)
(চলবে)
No comments:
Post a Comment