চতুর্দশ অধ্যায়
৩। আধিকারিকদের কাজের নীতি(ম্যানুয়্যাল)
একটি পার্সি পাণ্ডুলিপি থেকে গুরুত্বপূর্ণ মুঘল প্রশাসনের বিশদ বর্ণনা পাই, এটি কোনভাবেই অষ্টাদশ শতের পরের রচনা বলাযাবে না। এটি আমি পাই পাটনা জেলার পুরোনো কায়স্থ পরিবার থেকে। ১৪৮ পাতার ছোট বই, প্রত্যেক পাতায় ১১ পংক্তি রয়েছে, কোন কোন পাতায় আবার ১২ বা ১৩ পংক্তিও আছে। প্রথম এবং ষষ্ঠ পাতা এবং শেষের একটি/দুটি পাতা অদৃশ্য। আমি একে ম্যানুয়্যাল অব অফিসার্স ডিউটি বলব।
আরব সাম্রাজ্যের অধীনে মিশর বেশ কিছু প্রশাসনিক পুস্তক তৈরি করেছিল, এবং প্রশাসনের ইতিহাসের ছাত্রদের কাছে এই পাণ্ডুলিপিগুলির গুরুত্ব অপরিসীম। এনসাইক্লোপিডিয়া অব ইসলাম বলছে, ‘মুসাব্বিহি আমাদের প্রচুর নথির সঙ্গে পরিচয় ঘটায় ... ইবন তুয়ারের ফাতিমি রাজসভায় কি ধরণের আদব কায়দা মেনে চলা হত, তাঁর নথি পাওয়া যাবে রাজসভার আদবকায়দা সংক্রান্ত বইতে। ইবন মাম্মাতি দেওয়ান হসেবে কাজ করার তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় এবং পরের দিকে আল-ওমরি, একটি দেওয়ানি নীতিপুস্তকে বিশদে প্রশাসনের কাজ বলছেন, তবে দেওয়ানি নীতির সব থেকে ভাল কাজ হল কালকাষান্দিরটা... ইবন দুকমাক এবং ইবন দিজান সরকারি সমীক্ষার নানান নথি প্রকাশ করেছেন’।
ম্যানুয়্যাল অব অফিসার্স ডিউটিতে বিশেদে বর্ণনা দিচ্ছে, কিভাবে মুঘল সরকারির বিভিন্ন আধিকারিক নিজেদের পরিচালনা করতেন, তাদের কি কি কাজ করতে হত, তাদের কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হত, তারা কোন কোন নথি নকল করাতেন ইত্যাদি। এটি কথোপকথনের আঙ্গিকে লেখা। প্রত্যেক অধ্যায়ের শুরু হয়েছে কোন এক দপ্তরে(ধরা যাক ফৌজদারি) কাজ চাইতে আসা একজন নবাগত যুবকের সঙ্গে সেই দপ্তরের একজন অভিজ্ঞ করণিকের, ‘আমি কি করে আমার মালিক, দপ্তরে কাজ নিয়ে আসা মানুষকে সন্তুষ্ট করব, একই সঙ্গে নাম কামাব এবং আমার জীবন সুখের করার চেষ্টা করব’। উত্তরে সেই অভিজ্ঞ করণিকটি তাকে একে একে বর্ণনা করে জানায় নতুন একজন কাজ পাওয়া কর্মীর কি কি করা উচিত, তার প্রলোভন কি কি এবং তার বিপদগুলিও কি কি। এই উত্তরের একাংশ খুব আদর্শবাদিতার প্রজ্ঞার উপদেশ রয়েছে যেমন, কিন্তু তার সঙ্গেও রয়েছে কিন্তু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার অমূল্য কথা, এবং দীর্ঘ দিন ধরে মুঘল প্রশাসনকে দেখার অভিজ্ঞতার কথা। এবারে আপনাদের সামনে উপস্থিত করব সেই বইএর অংশ যা কোন নীতিমালা শেখাতে পারে না।
ম্যানুয়্যাল অব অফিসার্স ডিউটির সূচীপত্র- সর্বশক্তিমানের উদ্দেশ্যে অর্জি(দুটি পাতা অদৃশ্য) – সূচিপত্র পাঁচটি বাবএ এবং ৪৯টি ফাসালাতে বিভক্ত, ১। আদর্শ মানব(ইনসানইকামিল)এর বর্ণনা, দরবেশ, সুলতান(দুটো পাতা নেই), উকিল আর উজির, খানইসামান, বক্সী, গোসলখানা আর দিওয়ানখানার দারোগা, সুবাদার, ফৌজদার, অস্ত্রখানার দারোগা, মিংবাসী(বন্দুকধারী সৈনিকদের প্রধান), ২। সদর, কাজি, মুফতি, মুহতসিব এবং বাজার দরের নিয়ন্ত্রক, খবরলেখক, বক্সীদের পেশকার, বিভিন্ন ভৃত্য, আমিন এবং ক্রোড়ি, কোতোয়াল, মীরইইমারত(বাড়ি পরিদর্শক), মুশরিফ, ৩। কাছারির এগারো রকম দারোগা, ৪। সঙ্গী(মোসাহেব), মালিক তাঁর ভৃত্য আর পিতামাতারা তাঁর সন্তানদের সঙ্গে কিভাবে আচরণ করবেন, অন্যদের সঙ্গে কি আচার আচরণ করা উচিত, আদালতে হাজিরা দেওয়া ইত্যাদি, জীবনধারণের রীতি এবং খরচ, পরিধেয়, ৫। ভ্রমণ, জমাদার, নাজির, দপ্তরের করণিক, মুস্তাফি, কানুনগো, জমিদার, বিভিন্ন প্রদর্শনীর দর্শক, শেষ দুটি বিষয় নাই।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment