আইন ও বিচার ব্যবস্থা
৭। ইসলামি আইন অনুযায়ী শাস্তির বর্ণনা
দুষ্কর্মের শাস্তি চার রকম
১। হদ, ২। তাজির, ৩ কিসাস, ৪। তাশির। এর সঙ্গে জুড়তে হবে বিচার ছাড়া কারাগারে কাটানোর শাস্তি অনেকটা হাজতএর মত, তবে আরও কঠিন।
হদ, বহুবচনে হদুদ, এমন এক দুষ্কর্ম, যার শাস্তি দানের অধিকার একমাত্র সর্শক্তিমান আল্লার, ফলে কোন মানুষ এই বিচার করতে পারে না। হদএর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল, ভয় দেখয়ে অপরাধ করা থেকে নিরস্ত করা, মানে বিশেষ কিছু কসুর বা অপরাধ মানুষ না করে, সে বিষয়ে তাকে হুঁশিয়ারি দেওয়া। কি ধরণের মানুষকে কি পরিমান শাস্তি দেওয়া হবে তার ঠিক ছিল না, কেননা হদ যেমন পৌত্তলিক/নাস্তিক(ইনফিদেল)দের জন্য প্রযোজ্য ছিল, তেমনি মুসলমানেদের জন্যও প্রযোজ্য ছিল।
হদএ কিছু ধরণের শাস্তির কথা বলা আছে-
১। অগম্যাগমণের ক্ষেত্রে পাথর ছুঁড়ে হত্যা; ব্যাভিচারের জন্য চাবুক মারা(১০০ঘা)।
২। বিবাহিত স্ত্রীলোকেকে মিথ্যা ব্যাভিচারে অভিযুক্ত করা(৮০ঘা)।
৩। মদ এবং অন্যান্য তরল মাদক গ্রহণের বিরুদ্ধে চাবুক মারা। সুবিধাভোগীদের(ফ্রী ম্যান) জন্য ৮০ঘা চাবুক।
৪। চুরির জন্য ডান হাত কেটে দেওয়া।
৫। রাজপথে সাধারণ চুরি/ডাকাতির জন্য হাত পা ছেদন; রাজপথে ডাকাতি করে হত্যা করলে তরোয়ালে মুণ্ডচ্ছেদন বা ক্রুশবিদ্ধকরণ(কোরাণ বলছে, ‘যদি কোন পুরুষ বা স্ত্রী চুরি করে, তাঁর হাত কেটেদাও...সর্বশক্তমানের দেওয়া এটাই শাস্তির সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ’। এর টিকা করতে গিয়ে জালালুদ্দিন অল বেদাওইয়ি লিখছেন, ‘প্রথমবারে দুষ্কৃতির ডান হাতের কবজি পর্যন্ত কেটে নেওয়া হবে। দ্বিতীয় বারের অপরাধের জন্য তাঁর বাঁ পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত কাটা হবে, তৃতীয়টির জন্য বাঁ হাত আর চতুর্থটির জন্য ডান পা, তার পরেও যদি যে অপরাধ করে, তাহলে সে বিচার বিচারকের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।)
৬। ধর্মত্যাগের জন্য মৃত্যুদণ্ড।
তাজিরের উদেশ্য হল শাস্তি দিয়ে দুর্বৃত্তকে সংশোধন করা। ফিক বই নিদান প্রযুক্ত হবে সেই সব অপরাধে, যে সব দুষ্কর্মর শাস্তি হদে উল্লিখিত নেই, এবং কোন প্রায়শ্চিত্তের কথা বলা নেই। শাস্তি কি হবে তা নির্ভর করবে বিচারকের বিচক্ষণতার ওপর। বিচারক পুরো শাস্তিটাই লাঘব করে দিতে পারেন। এর বিচার প্রক্রিয়া খুব সরল আর হদএর জটিলতার বিপরীত। তাই অনেক সময় তাজির বিচার প্রক্রিয়াকে ঘুষ দিয়ে ছাড় পাওয়ার চেষ্টা করত অপরাধীরা।
এটা সর্বশক্তিমানের অধিকার নয়। এগুলি নিম্নলিখিত চারটি অঙ্গিক হতে পারে –
ক। গণ-তিরষ্কার(রেপ্রিমান্ড) (তাদিব)
খ। জির, দরজার কাছে(আদালতে?) দুষ্কৃতিকে হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া, জন-ঘৃণা(স্কর্ন)র সামনে তাকে ছুঁড়ে দেওয়া, একটা কাঠের দণ্ডে এক অপরাধীকে বেঁধে রাখা,
গ। কয়েদ বা বহিষ্কার,
ঘ। কানে ঘুঁষি মারা(বক্সিং), চাবুক মারা, চাবুকের ঘা তিনটের কম হবে না, আর ৩৯টার বেশি হবে না(আবু য়ুসুফের হানাফি পদ্ধতিতে ৭৫টি)
১৭৮০ সালে মোল্লা তাজউদ্দিন, মীর মহম্মদ হুসেইন আর মোল্লা শারিয়াতুল্লা সঙ্কলিত হানাফি আঙ্গিকের পার্সি আইন হেদায়া সূত্রে জানা যাচ্ছে ওপরের শাস্তিগুলি অপরাধীরস্তর অনুযায়ী নির্ধারিত হত, চাবকানো আর জেলে দেওয়া - ছোট ব্যবসায়ী আর সাধারণ মানুষ(মনু যাদের বৈশ্য আর শূদ্র বলেছেন)এর মত তৃতীয় আর চতুর্থ শ্রেণীর মানুষের জন্য বরাদ্দ ছিল আর একটু হাল্কা শাস্তি বরাদ্দ ছিল অভিজাতদের আর ভদ্রলোকেদের জন্য।
তাজিরবিলমালসূত্রে পাচ্ছি, ‘সম্পত্তি সংক্রান্ত শাস্তি’ বা জরিমানায় একমাত্র আবু হানিফা আইনি ঘোষণা করেছেন, কিন্তু অন্যান্য প্রক্যাত জ্ঞানীরা একে কোরানিয় আইনের বিরোধী বলে ঘোষণা করেছেন। আওরঙ্গজেব ছিলেন চরম হানাফিপন্থী এবং কোরাণিয় আইনে প্রগাঢ পণ্ডিত, এবং প্রিসেডেন্স সাহিত্য(ফতোয়া)তেও পণ্ডিত, তিনি ১৬৭৯ সালে গুজরাটের এবং অন্যান্য সুবার দেওয়ানকে একটি ফরমান জারি করে নির্দেশ দিয়েছিলেন, জরিমানা ধর্মতত্ত্বের আইনে জায়েজ নয়, প্রত্যেক বেসামরিক প্রশাসক(আমিল), জমিদার বা অন্যান্যরা যদি কোন অপরাধে দণ্ডিত হন, তাঁর অপরাধের চরিত্র অনুযায়ী কয়েদ বা পদচ্যুত বা নির্বাসিত করা যেতে পারে, কিন্তু জরিমানা দিয়ে শাস্তি দেওয়া যাবে না(মিরাটিআহমদি)।
(চলবে)
৭। ইসলামি আইন অনুযায়ী শাস্তির বর্ণনা
দুষ্কর্মের শাস্তি চার রকম
১। হদ, ২। তাজির, ৩ কিসাস, ৪। তাশির। এর সঙ্গে জুড়তে হবে বিচার ছাড়া কারাগারে কাটানোর শাস্তি অনেকটা হাজতএর মত, তবে আরও কঠিন।
হদ, বহুবচনে হদুদ, এমন এক দুষ্কর্ম, যার শাস্তি দানের অধিকার একমাত্র সর্শক্তিমান আল্লার, ফলে কোন মানুষ এই বিচার করতে পারে না। হদএর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল, ভয় দেখয়ে অপরাধ করা থেকে নিরস্ত করা, মানে বিশেষ কিছু কসুর বা অপরাধ মানুষ না করে, সে বিষয়ে তাকে হুঁশিয়ারি দেওয়া। কি ধরণের মানুষকে কি পরিমান শাস্তি দেওয়া হবে তার ঠিক ছিল না, কেননা হদ যেমন পৌত্তলিক/নাস্তিক(ইনফিদেল)দের জন্য প্রযোজ্য ছিল, তেমনি মুসলমানেদের জন্যও প্রযোজ্য ছিল।
হদএ কিছু ধরণের শাস্তির কথা বলা আছে-
১। অগম্যাগমণের ক্ষেত্রে পাথর ছুঁড়ে হত্যা; ব্যাভিচারের জন্য চাবুক মারা(১০০ঘা)।
২। বিবাহিত স্ত্রীলোকেকে মিথ্যা ব্যাভিচারে অভিযুক্ত করা(৮০ঘা)।
৩। মদ এবং অন্যান্য তরল মাদক গ্রহণের বিরুদ্ধে চাবুক মারা। সুবিধাভোগীদের(ফ্রী ম্যান) জন্য ৮০ঘা চাবুক।
৪। চুরির জন্য ডান হাত কেটে দেওয়া।
৫। রাজপথে সাধারণ চুরি/ডাকাতির জন্য হাত পা ছেদন; রাজপথে ডাকাতি করে হত্যা করলে তরোয়ালে মুণ্ডচ্ছেদন বা ক্রুশবিদ্ধকরণ(কোরাণ বলছে, ‘যদি কোন পুরুষ বা স্ত্রী চুরি করে, তাঁর হাত কেটেদাও...সর্বশক্তমানের দেওয়া এটাই শাস্তির সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ’। এর টিকা করতে গিয়ে জালালুদ্দিন অল বেদাওইয়ি লিখছেন, ‘প্রথমবারে দুষ্কৃতির ডান হাতের কবজি পর্যন্ত কেটে নেওয়া হবে। দ্বিতীয় বারের অপরাধের জন্য তাঁর বাঁ পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত কাটা হবে, তৃতীয়টির জন্য বাঁ হাত আর চতুর্থটির জন্য ডান পা, তার পরেও যদি যে অপরাধ করে, তাহলে সে বিচার বিচারকের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।)
৬। ধর্মত্যাগের জন্য মৃত্যুদণ্ড।
তাজিরের উদেশ্য হল শাস্তি দিয়ে দুর্বৃত্তকে সংশোধন করা। ফিক বই নিদান প্রযুক্ত হবে সেই সব অপরাধে, যে সব দুষ্কর্মর শাস্তি হদে উল্লিখিত নেই, এবং কোন প্রায়শ্চিত্তের কথা বলা নেই। শাস্তি কি হবে তা নির্ভর করবে বিচারকের বিচক্ষণতার ওপর। বিচারক পুরো শাস্তিটাই লাঘব করে দিতে পারেন। এর বিচার প্রক্রিয়া খুব সরল আর হদএর জটিলতার বিপরীত। তাই অনেক সময় তাজির বিচার প্রক্রিয়াকে ঘুষ দিয়ে ছাড় পাওয়ার চেষ্টা করত অপরাধীরা।
এটা সর্বশক্তিমানের অধিকার নয়। এগুলি নিম্নলিখিত চারটি অঙ্গিক হতে পারে –
ক। গণ-তিরষ্কার(রেপ্রিমান্ড) (তাদিব)
খ। জির, দরজার কাছে(আদালতে?) দুষ্কৃতিকে হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া, জন-ঘৃণা(স্কর্ন)র সামনে তাকে ছুঁড়ে দেওয়া, একটা কাঠের দণ্ডে এক অপরাধীকে বেঁধে রাখা,
গ। কয়েদ বা বহিষ্কার,
ঘ। কানে ঘুঁষি মারা(বক্সিং), চাবুক মারা, চাবুকের ঘা তিনটের কম হবে না, আর ৩৯টার বেশি হবে না(আবু য়ুসুফের হানাফি পদ্ধতিতে ৭৫টি)
১৭৮০ সালে মোল্লা তাজউদ্দিন, মীর মহম্মদ হুসেইন আর মোল্লা শারিয়াতুল্লা সঙ্কলিত হানাফি আঙ্গিকের পার্সি আইন হেদায়া সূত্রে জানা যাচ্ছে ওপরের শাস্তিগুলি অপরাধীরস্তর অনুযায়ী নির্ধারিত হত, চাবকানো আর জেলে দেওয়া - ছোট ব্যবসায়ী আর সাধারণ মানুষ(মনু যাদের বৈশ্য আর শূদ্র বলেছেন)এর মত তৃতীয় আর চতুর্থ শ্রেণীর মানুষের জন্য বরাদ্দ ছিল আর একটু হাল্কা শাস্তি বরাদ্দ ছিল অভিজাতদের আর ভদ্রলোকেদের জন্য।
তাজিরবিলমালসূত্রে পাচ্ছি, ‘সম্পত্তি সংক্রান্ত শাস্তি’ বা জরিমানায় একমাত্র আবু হানিফা আইনি ঘোষণা করেছেন, কিন্তু অন্যান্য প্রক্যাত জ্ঞানীরা একে কোরানিয় আইনের বিরোধী বলে ঘোষণা করেছেন। আওরঙ্গজেব ছিলেন চরম হানাফিপন্থী এবং কোরাণিয় আইনে প্রগাঢ পণ্ডিত, এবং প্রিসেডেন্স সাহিত্য(ফতোয়া)তেও পণ্ডিত, তিনি ১৬৭৯ সালে গুজরাটের এবং অন্যান্য সুবার দেওয়ানকে একটি ফরমান জারি করে নির্দেশ দিয়েছিলেন, জরিমানা ধর্মতত্ত্বের আইনে জায়েজ নয়, প্রত্যেক বেসামরিক প্রশাসক(আমিল), জমিদার বা অন্যান্যরা যদি কোন অপরাধে দণ্ডিত হন, তাঁর অপরাধের চরিত্র অনুযায়ী কয়েদ বা পদচ্যুত বা নির্বাসিত করা যেতে পারে, কিন্তু জরিমানা দিয়ে শাস্তি দেওয়া যাবে না(মিরাটিআহমদি)।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment