এই স্থিতিশীল রাজনীতির রাজ্যে আমরা কিছু গাঁইয়াদের সংগঠন উইভার্স আর্টিজান এন্ড ট্রাডিশনাল আর্টিজান গিল্ড, কিছু দাবি তুলছি, হয়ত ভুল ভাবছি কিন্তু বর্তমানের রাজনীতির গোলোযোগে আশনি সংকেতও দেখছি - আমাদের কিন্তু কতগুলো কথা বলার আছে, বলছি, বলব, বলে যাব---তাঁর প্রিয় কবিই বলে গিয়েছিলেন রাস্তাই একমাত্র রাস্তা...
১। আমরা জানি পাঁচ বছর তিনি যা করেছেন, তার তুলনা শুধু তিনিই, সুচতুর এবং ভোটের রণকৌশলের রাজনীতিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম বা তাবড় তাবড় কেন্দ্রিয় স্তরের পার্টিরা হালে পানি পাচ্ছে না... তা সত্ত্বেও মন কিছু কু গাইছে...শুরু করি...
২। অনেকগুলি দাবির মধ্যে একটা দাবি - লোক প্রসার প্রকল্পে অভিকর শিল্পীদের যে যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে(পলাশির পর এই প্রথম তাদের কথা কেউ ভাবলেন) ভাতা দেওয়া হয়েছে, সেই ভাতা দেওয়ার ব্যপ্তি গ্রামীন পরম্পরার উদ্যোগী, তাঁতিদের দিকে ছড়িয়ে দিতে হবে - তাতে প্রায় প্রত্যক্ষ ৩০ লক্ষ মানুষ(৭ লাখ তাঁতি আর ২২ লাখ পরম্পরার ছোট উদ্যমী) আর পরিবার ধরলে ১কোটি ৫০ লক্ষ এবং পরোক্ষে আরও কয়েক লাখ মানুষ বেঁচে যাবেন - সবথেকে বড় কথা গ্রামে সরাসরি টাকাটা যাবে...গ্রামের চাঙ্গা হতে থাকা অর্থনীতিকে আরও অপ্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলবে...ভারিতে এই প্রথম... বিরোধীরা ১ কোটি কিছু লক্ষ ভোট পেয়েছে, সেটাও বাজেয়াপ্ত হয়ে যাব... আর এদের আরও কিছু সুযোগ সুবিধে বাড়াতে হবে ... জানি অনেকে ঋণের বোঝা বলে চোখ পাকাবেন... বকবেন...পিটতেও পারেন... সব মাথা-পিঠ পেতে নেব... কিন্তু যে পরিমান টাকা এতে বরাদ্দ হবে তা রাজ্য সরকারের পক্ষে সিন্ধুতে বিন্দু... এটাকে মিশন/চরম লক্ষ্য ধরে কাজটা করুণ দয়া করে...
৩। মনে রাখতে হবে, তেলেভাজা শিল্পের(অতি ক্ষুদ্র শিল্প) প্রতি তাঁর উপযুক্ত দরদ, কিন্তু ভোটে ভাল ফল করতে সাহায্য করার অন্যতম চলক, গোয়েঙ্কা বা বাজোরিয়াদের পিঠ উদ্দেশ্যপূর্ণ চাপড়ানি নয়... উদ্দেশ্য আর লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থাকা জরুরি... জেলায় জেলায় তাঁর বর্ণনায় তেলেভাজা শিল্প সংখ্যায় প্রচুর... সে তথ্যটা আমাদের থেকে উনি ভাল জানেন...তবু একবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া... ঘরপোড়া গরু তো... এই সাধারণতম মানুষেরা অর্থ চান না... শুধু সহানুভূতি দেখানো... যা তিনি করেইছেন ভোটের আগে... চোখে জল আসা অসাধারণ উদ্যম...জেতার পরে আরেকটু করে বার্তা দিন... রাজ্য সরকার এই ধরণের উদ্যমগুলোর পিছনে আছে... এই বার্তা টুকুই যথেষ্ট গ্রামের অর্থিনীতিতে জোয়ার আনতে...
৪। চারটে কটু কথা--- ক। চাষার ব্যাটা রেজ্জাক বলেছেন চুক্তি চাষ করাবেন - এটা নিশ্চই ওনার মত নিয়ে বলা নয়... বোধহয় রেজ্জাক পর্দার পিছনে সিপিএমএর এজেন্ডার ঝাণ্ডা পোঁতার কাজ শুরু করে দিয়েছেন... আমাদের মত বাইরের মানুষ বুঝবে না.. কিন্তু মনটা কু গাইছে. খ। কোন এক মন্ত্রী বলেছেন এপিএমসি আইন বদলাবে... তাহলে কংগ্রেস আর সিপিএম কি দোষ করল... গ। মেয়র বলেছেন(এই সময় সূত্র) রামসার এলাকাগুলি বুজিয়ে কলকাতার উন্নয়ন হবে... তাহলে আর প্রয়াত সুভাষবাবুর লেকটাউন বিকাশ বা গৌতম দেববাবুর রাজারহাট বিকাশ বা আনন্দবাজার সরকারি জমিতে জলাভূমি ভরাট করা বিন্দুমাত্র দোষ হয় নি মেনে নিতে হবে, ঘ। স্মার্ট সিটি নিয়ে তিনি মুখ খোলায় আপ্লুত, কিন্তু কোথাও তথ্যের যেন ফাঁক থেকে যাচ্ছে ... মনে হচ্ছে... কিন্তু শুরুটা অসাধারণ... আরও বড় লড়াই চাই...
৫। রণনৈতিকভাবে মোদি বা বিজেপির দিকে একটুকুও টলে যাওয়া, রাজনৈতিকভাবে আত্মঘাতী হবেই - এ তথ্য আমাদের মত এলেবেলে গাঁইয়া বুঝলে, তিনি এবং দলের উচ্চতর নেতৃত্ব বোঝেন না তা আমরা বিশ্বাস করি না। যে সংখ্যালঘু এবং বিজেপির ভারতভাগের চেষ্টার বিরোধীরা গত লোকসভা ভোটে 'হরিদাসপাল' মোদির কোমরে দড়ি পরাবার হুমকিতে তাঁকে ঝুলি ভরে আশীর্বাদ দিয়ে ছিলেন, এই বিধানসভায় সেই আক্রমন আরেকটু উচ্চগ্রামে হলে শুধু মুর্শিদাবাদে দিনাজপুরেই নয় সারা বাংলায় আরও ভাল ফল করত, তাঁরা সেই আক্রমন বোধহয় অপেক্ষা করছিলেন...আমাদের ধারণা...অনেকে বলবেন ফেডারেল স্ট্রাকচার... ইত্যাদি ইত্যাদির বাধ্যবাধকতা মেনে নিয়েই বলছি... তিনি তাঁর জীবন দিয়ে দেখিয়েছেন আন্দোলনের বিকল্প নেই... আজও এই ভাঙা সময়েও...তাঁর ক্ষমতা আন্দোলন সঞ্জাত...সাধারণ মানুষ...এটা ভুলে গেলে বড় ভুল হয়ত হবে...ক্ষমতায় এসে আরও বড় আন্দোলন করতে হবে... এই বড় দেওয়াল ভাঙতে হবে...এটা তিনিই পারেন...
জানি ধারের একটা বাধ্যবাধকতা আছে - এবং মনে আছে ২০১১তে তিনি ক্ষমতায় এসেই উচ্চগ্রামে ধার মকুবের যে দাবি তুলেছিলেন, সেটা আর শুনতে পাই না - মিইয়ে গিয়েছে... দলেও না কট্টর সমর্থক-প্রচারকেদের লেখায়ও না, বা কথাতেও নয় ...শুধু হা হুতাশ... তর্জন-গর্জন কোথায়?... কোথাও কি মনে মনে ধারণা হচ্ছে মোদির প্রতি নরম হলে ঋণ মকুবের দাবি কিছুটা কেন্দ্র মেনে নিলেও নিতে পারে? আন্দোলনে না গিয়ে, আবেদন নিবেদন নীতি নিয়ে যদি সেটা হয় তাহলে আমাদের ধারণা রাজ্যের ভাল কিন্তু দল... কর্পোরেট বিরোধী আন্দোলন... বিশ্বায়ন বিরোধী আন্দোল...? এ সবগুলির পক্ষে আত্মঘাতী হবে... আজও তিনিই ভারতের ভোটের রাজনীতিতে সরাসরি বিশ্বায়নের রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার মুখ...নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর হয়েই...প্রচুর লড়াই করে হেরে যাওয়া উপাধিপ্রাপ্ত হয়েই থেকে যেত যদি তাঁর উপস্থিতি না থাকত... রাজনীতিতে শুধু নয়, সাধারণের জীবন-জীবিকার সম্বল তিনি ছাড়া যে আর কেউই নেই...তাই তাঁকে সত্যিকারের আঁকড়ে ধরছেন বাংলার মানুষ...
না হলে? হয়ত আবার কংগ্রেস-সিপিএমকে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে -
সাধু মানুষেরা ভাববেন... এইটুকু আবেদন...
শুধু বলি, ভিক্ষে চাই না মা...
No comments:
Post a Comment