হামিদুদ্দিন খাঁ
বাহাদুরের আচার্য যদুনাথ সরকারের আহকমইআলমগিরির ইংরেজি অনুবাদের বাংলা অনুবাদ
সঙ্গে আওরঙ্গজেবের
জীবন এবং কিছু ঐতিহাসিক মন্তব্য
আচার্য যদুনাথ সরকার
তৃতীয় সংস্করণ,
পরিমার্জিত এবং সংযোজিত
এম সি সরকার
কলকাতা
১৯৪৯
অনুবাদকের মন্তব্যঃ দ্য
মুঘল এডমিনিস্ট্রেশন অনুবাদ করতে গিয়ে বহু জায়গায় আচার্য যদুনাথ সরকার আহকমইআলমগিরির
দাদ দিয়েছেন, লক্ষ্য করেছি। আচার্যদেব পাটনায় অধ্যাপনা করার সময় নিজের হাতে আহকম অনুবাদ
করেছেন। সেই অনুবাদের সঙ্গে জুড়েছেন খ্রিষ্টিয় তারিখ সহ আওরঙ্গজেবের জীবন ইতিহাস
এবং বিশ্লেষণ করেছেন সম্রাটের চরিত্র। যাদের একটু ভারতের ইতিহাস নিয়ে উৎসাহ রয়েছে,
আবছা আবছা হলেও – কারোর কাছে তিনি নায়ক,
আবার কারোর কাছে খলনায়ক – এটা আবছা হলেও জানা। আহকমইআলমগিরি অনুবাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার
সময় শুধুই প্রাধান্য পেয়েছিল কেবল সেই সাহিত্যটিরই অনুবাদকর্ম – আওরঙ্গজেবের জীবনী
আর চরিত্র নয় – তাই কিছুটা খোদার ওপর খোদকারি করে, আওরঙ্গজেবের জীবন আর চরিত্র
বিশ্লেষণ না করে সরাসরি আহকমইআলমগিরিটাই অনুবাদের দুঃসাহস করা গেল।
আচার্য মুঘল আমলের
শেষ সময় নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অক্ষদণ্ড রূপে ধরেছেন আওরঙ্গজেবকে, কিন্তু তাঁর বিশ্লেষণের
স্নেহচ্ছায়া মুঘল আমলের শেষ সম্রাট পাননি, এমন কি যারা দ্য মুঘল এডমিনিস্ট্রেশনএর
অনুবাদের শেষ পর্বটি পড়ার কষ্ট করেছেন, তারা নিশ্চই লক্ষ্য করেছেন, আবুলফজলের
ঐতিহাসিক আখ্যান আইনিআকবরিকে কী তীক্ষ্ণ সমালোচনায় ভরিয়ে দিয়েছেন তিনি। সেই সমালোচনার
সুরটি কিন্তু ধার করেছেন এক ইংরেজ ঐতিহাসিকের লব্জ থেকে। মুঘল আমলের অন্যতম
তথ্যআকরভরসাস্থল তাঁর আনুকূল্য অর্জন করতে পারে নি কেন, তা তিনি কিন্তু খুব একটা
খোলসা করে জানান নি, তাঁর সমালোচনার লব্জের মত ওপর ওপর থেকে গিয়েছেন। যে অভিযোগে
তিনি আইনিআকবরি বিদ্ধ করেছেন, সেই অভিযোগের তীরটির মুখ ঘুরিয়ে দেওয়াই যেতে পারে
তাঁর বিশ্লেষণের দিকে আজ – কেন তিনি বিশদে তা বললেন না, ঢাল করলেন এক ব্রিটিশ
ঐতিহাসিককে?
ভারতের ইতিহাস বিশ্লেষণে অধিকাংশ
গবেষণামূলক কাজই কোম্পানি বা রাজ আমলের নানান বড় ছোট ঘটনা, তথ্য বিশ্লেষণ নিয়ে
ব্যস্ত – তার কারণ খুব স্পষ্ট, এ ধরণের কাজে অর্থ সাহায্য এবং পিঠ চাপড়ানি আর সংবাদমাধ্যমের পৃষ্ঠপোষকতা খুব সহজে মেলে, তাই
প্রায় এই ধরণের সব কাজেই ভারতে সাম্রাজ্যের সুফল দেখানো স্বাভাবিক ফল। ফলে আমরা
যারা বিকারগ্রস্তভাবে ব্রিটিশ-পূর্ব সময়কে ধরার চেষ্টা করছি, তারা যখন দ্য মুঘল
এডমিনিস্ট্রেশন অনুবাদ করতে যাই, তখন দেখতে পাচ্ছি, মুঘল আমলের প্রশাসনতন্ত্রের
নানান কুড় আজও এই স্বাধীন ভারতে চারশ বছর পরেও প্রশাসনিক কাজে অনুসৃত হচ্ছে। তাই
সেই সাম্রাজ্যের শেষ বর্ণিল সম্রাটের সময়কাল আলোচনা অন্তত ভারত ইতিহাসে ব্রিটিশ-পূর্ব
সময় আলোচনায় অনন্য মর্যাদা পায়। ভারত স্বাধীনতাহরণের প্রায় অর্ধশতাব্দ পূর্বে
মৃত্যু বরণ করা শেষতম মুঘল বীর এবং তাঁর সময়কে সম্মান জানালাম আহকম অনুবাদের মধ্যে
দিয়ে। জয় বাংলা, বঙ্গমাতরম।
No comments:
Post a Comment