সপ্তম অধ্যায়
সম্রাটের বিশেষ ক্ষমতা
ষষ্ঠ, সুবাদার যখন কাউকে ঘোড়া বা হাতি উপহার দিচ্ছেন, তখন তিনি উপহারপ্রাপ্তকে ঘোড়ার মুখে লাগাম বা হাতির গলায় অঙ্কুশ খুলিয়ে দেওয়ার অধিকার পেতেন না। এই কাজের একমাত্র অধিকার ছিল সম্রাটের।
সপ্তম, সুবাদার তার কোন অধস্তনকে উপাধি দিতে পারতেন না। উপাধি দেওয়ার সম্রাটের অধিকার এমনভাবে রক্ষা করা হত সর্বোচ্চ স্তরে যে, এমন কি শাহজাদারাও তার অধস্তনদের কোন উপাধি দিতে পারতেন না। শাহ জাহানের রাজত্বে এই উপাধি দেওয়াকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ ঘনিয়ে এসেছিল প্রায়। বিজাপুরের মহম্মদ আদিল শাহ দিল্লির রাজসভাকে প্রতিস্পর্ধা জানিয়ে নিজের রাজত্বে প্রধানমন্ত্রীর পদ খানইখানান সৃষ্টি করলেন, কিন্তু পরে বিজাপুর ক্ষমা চেয়ে নেওয়ায় যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া গিয়েছিল।
অষ্টমত, কোন অভিজাত তার লোকলস্করের সামনে সাম্রাজ্যের কোন আধিকারিককে খালি পায়ে হাঁটাতে পারতেন না। তাভার্নিয়ে লিখছেন, ‘যখন সম্রাট মসজদে যেতেন তার পালকি করে, তার এক সন্তান তাকে ঘোড়ায় চড়ে অনুসরণ করতেন। আর সব শাহজাদা আর সভাসদেরা হেঁটে যেতেন... আবার যখন তিনি ফিরে আসতেন যে পদ্ধতিতে, যে পর্যায়ক্রমে অভিজাতরা, আধিকারিকরা তার সঙ্গে গিয়েছিলেন, তারা সেই পর্যায়ে হেঁটে ফিরতেন।
নবম, কেন্দ্রের দপ্তরগুলির আধিকারিকদের চিঠি পাঠাবার সময় সুবাদারেরা তাতে স্বাক্ষর করবেন, কিন্তু মোহর দিতে পারতেন না। মোহর আর পাঞ্জা(সিঁদুর মাখা হাতের চেটোর ছাপ) দেওয়ার একমাত্র অধিকার সর্বশক্তিমান সম্রাটের ছিল। যত বড়ই আধিকারিক হোক না কেন, তার অধিকার নেই অন্য আধিকারিককে লেখা কোন চিঠিতে এগুলি ব্যবহার করে, কেননা সক্কলে তার তুলনায় একই স্তরের অধস্তন। (সম্রাটের মোহর ব্যবহারের নীতি বিশদে উল্লেখিত হয়েছে আইনিআকবরি তে)।
এমন কি সম্রাটদের চিঠি লেখার আঙ্গিকেরও নকল করা যেত না, এমন কি ফরমানও যদি কোন সুবাদার তার অধস্তনকে লেখে, সেটা কোনভাবেই সম্রাটের লেখার অনুকরণ হতে পারবে না। আওরঙ্গজেবের রাজত্বের শেষের দিনগুলিতে তার রাজত্বের অন্যতম উচ্চস্তরের অভিজাত, গাজিউদ্দিন খাঁ বাহাদুর ফিরুজ জং তার এক ফরমান শুরু করেছিলেন এই বয়ানে ...খানের অলৌকিক নির্দেশনার কর্মসম্পাদনে... দেখা গেল যে...ইত্যাদি ইত্যাদি। এর জন্য তাকে চরম তিরস্কারের মুখে পড়তে হয়, কেননা, এটি সম্রাটের একান্তই নিজস্ব রচনাশৈলী, এবং এটি শোনার পরে আওরঙ্গজেব তাকে ধমক দিয়ে বলেন, মাত্র সাত হাজারি মনসবদারের চাকুরে ফিরুজ খানের অলৌকিক নির্দেশনায় বিশ্বে কোন কর্মসম্পাদিত হতে পারে না(হামিদউলউদ্দিনএর আকাম)। আওরঙ্গজেবের বড় ছেলে মহম্মদ সুলতান যখন চৌদ্দ বছর বয়েস, আবুল ফলজের মুসাবিদা করে দেওয়া আকবরের চিঠ লেখার অঙ্গিক অনুসরণ করায়, তার পিতা তাকে সেন্সর(?) করেন(স্টাডিজ ইন আওরঙ্গজেবস রেইন)।
দশম, কোন সুবাদার অপরাদীর নাক বা কান কাটার অধিকারী ছিলেন না।
চুরি বা তৎসংক্রান্ত নানান অপরাধে কবজি পর্যন্ত হাত কাটার আইনি নিদান ছিল। হত্যায় যদি মৃতের পরিবার, মৃত্যুদণ্ড না চেয়ে রক্তের দাম, মানে ক্ষতিপূরণ চাইত, তাহলে সেই হত্যাকারী মৃত্যুদণ্ড এড়িয়ে যেতে পারত(কিন্তু প্রত্যেক রায় একমাত্র দিতে পারেন ধর্মতত্ত্বের অনুসরণকারী বিচারক, কাজিই শুধু, এমন কি সুবাদারের মত কোন বেসামরিক আধিকারিক নয়)। কিন্তু কোরানিয় আইন কারোর চোখ উপড়ে নেওয়া, বা কান, নাক কেটে দেওয়ার মত কোন শাস্তি অনুমোদন করে না, সে যদি না, কোন রাজনৈতিক শত্রুর ওপর প্রতিহিংসায় সম্পাদিত হয়। এবং এগুলি বিচারবিভাগীয় রায়ে ঘটে না, ফলে সাধারণ মানুষকে এই ধরণের বেআইনি কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হয়।
একাদশ, কোন সুবাদার কাউকে জোর করে ইসলামে পরিবির্তিত করতে পারে না।
সাধারণত যুদ্ধ বন্দীদের তাদের ইচ্ছার ব্যতিরেকে ইসলামে পরিবর্তিত করা হত, কখোনো মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞায় দন্ডিত কোন ব্যক্তি ইসলামে পরিবর্তিত হয়ে তার জীবন বাঁচাত বা মুক্তি পেত, বা কোন সম্পত্তি নিয়ে ঝগড়ায়, কোন ব্যক্তি সেই সম্পত্তি দখল করত সম্রাটের নির্দেশে ইসলামে পরিবর্তিত হয়ে। এই সব সম্রাটের নির্দেশ ছাড়া ঘটতে পারত না। সম্রাটই একমাত্র ধর্মবিশ্বসীর বা ইসলাম প্রচারের একমাত্র আধিকারিক।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment